ভারতীয় ধনকুবেরদের উত্তরাধিকার পরিকল্পনা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: মুকেশ আম্বানি

ছবি: মুকেশ আম্বানি

  • Font increase
  • Font Decrease

পারিবারিক ব্যবসা ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড। দেশটির জিডিপির প্রায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখে এসব ব্যক্তি মালিকানাধীন তথা পারিবারিক ব্যবসায়গুলো। আম্বানি, আদানি, বিরলাসহ এমন বড় বড় ব্যবসায় সাম্রাজ্যের উদাহরণ রয়েছে ভারতে।

সম্প্রতি ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেএক্সের এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে এমন ১০টি পারিবারিক ব্যবসায় রয়েছে যাদের সমষ্টিগতভাবে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮২ বিলিয়ন ডলার। আর ইতিমধ্যেই এসব পরিবারের ৪০ বছর বা তার কম বয়সী উত্তরাধিকাররা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করছেন।

যদিও ভারতের পারিবারিক ব্যবসার জন্য বিরাট সুযোগ সামনে রয়েছে। আর এ ব্যবসায়ের পরিমাণ অভূতপূর্ব হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পারিবারিক ব্যবসায় টিকে থাকার ক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পারিবারিক ব্যবসায় টিকে থাকার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে এগুলো হল আর্থিক অব্যবস্থাপনা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং মতবিরোধ, বাহ্যিক কারণ যেমনঃ সরকারী নীতি বা প্রতিযোগিতা, নেতৃত্বের সমস্যা ইত্যাদি। অনেক পারিবারিক ব্যবসায় টিকে থাকতে না পারার একটি বড় কারণ হল উত্তরাধিকার পরিকল্পনা।

উত্তরাধিকার পরিকল্পনা হল বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে ব্যবসার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একটি ব্যবসার মূল অবস্থানের উত্তরসূরিদের শনাক্তকরণ এবং বিকাশ করার প্রক্রিয়া। এটি ব্যবসার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে, পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব এড়াতে সাহায্য করে এবং পরিবারের উত্তরাধিকার সংরক্ষণে সহায়তা করে। আম্বানি, আদানিরা পারিবারিক দ্বন্দ্ব এড়াতে সম্পদের উত্তরাধিকার নকশা অনুযায়ী সম্পদ বণ্টনের পরিকল্পনা করে থাকেন।

আর ঠিক এ কারণেই চীনের ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ের উত্তরসূরী থেকে ভারতীয় উত্তরাধিকার পরিকল্পনা অনেকটাই সফল।

এই উত্তরাধিকার পরিকল্পনা ও সম্পদের ব্যবধান দুই দেশের ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক গতিপথকে প্রতিফলিত করে। যদিও দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে চীনা স্টকগুলো হ্রাস পেয়েছে। এতে দেশটির বিলিয়নেয়ারদের ভাগ্যেও অন্ধকার নেমেছে। কিন্তু ভারতের পারিবারিক ব্যবসায়ের সফলতার দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনায় আশা বাড়ছে এবং এর ইক্যুইটি বর্তমানে সর্বকালের আর্থিক উচ্চতায় লেনদেন করছে।

এতে করে ভারতীয় অর্থনীতির প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি ই-কমার্সের মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এসেছে।

বিশ্বের জনবহুল দেশেগুলোর বেশিরভাগই তাদের ব্যবসায়ে অল্প বয়স্ক ভোক্তাদেরকে টার্গেট করে পরিচালনা করে থাকেন। এছাড়া এসব ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের পিতৃপুরুষরা তাদের সন্তানদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে গড়ে তুলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠান।

উদাহরণ হিসেবে বিরলাদের কথাই বলা যায়। বিরলা গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ ভারতের প্রাচীনতম ব্যবসাগুলোর মধ্যে একটি। এটি ভারতের প্রাক-স্বাধীনতার যুগে ১৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি বিরলা পরিবারের বর্তমান পিতৃপুরুষ কুমার মঙ্গলম বিরলা তার উত্তরাধিকারী গায়িকা অনন্যা এবং প্রাক্তন ক্রিকেটার আর্যমান বিক্রমকে তাদের ব্যবসায়ের তিনটি বোর্ডের দায়িত্ব দিয়েছেন। সে সময় কুমার মঙ্গলম বিরলা বলেছিলেন, নতুন-যুগের ব্যবসায়িক মডেল সম্পর্কে জানতে এবং ভোক্তাদের আচরণ পরিবর্তনে এই বোর্ড নতুন শক্তি জোগাবে।

এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য, ভারতে পারিবারিক ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠাতারা ৫০ শতাংশের বা তারও বেশি মালিকানা নিজের নামে রাখে। আর পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যদের প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব মেম্বার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পরবর্তী উত্তরসূরী হিসেবে গড়ে তোলে। এটা এখানে খুব স্বাভাবিক একটি অগ্রগতি হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু পাবলিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে এমন কম বয়সীদের নিয়োগ দেয়াকে কর্পোরেট শাসনের লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করা হয়।

উত্তরাধিকার পরিকল্পনার বিষয়ে আরেক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি। উত্তরাধিকার পরিকল্পনার গুরুত্ব আম্বানিরা সবচেয়ে ভালো জানেন।

সম্পদের উত্তরাধিকার নকশা অনুযায়ী, মুকেশ আম্বানির দুই সন্তান সামলাবেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের টেলিকমিউনিকেশন ও রিটেইল ব্যবসা। আর ছোট সন্তান সামলাবেন জ্বালানি ব্যবসা। তারা ইতিমধ্যে ব্যবসা সামলানোর কাজ শিখছেন।

অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা এড়াতেই আগেভাগে মুকেশ তার সম্পদের উত্তরাধিকার নকশা করে সম্পদ বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যুর আগে সম্পত্তির কোনো উইল করে যাননি। এ কারণে তার দুই ছেলে মুকেশ ও অনিল আম্বানির মধ্যে পৈতৃক ব্যবসা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামেন দুই ভাই। পরে অবশ্য দুই ভাইয়ের সম্পর্কের উন্নতি হয়। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন মুকেশ। নিজের সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে যেন কোনো বিরোধ না বাধে, এই ভাবনায় তিনি উত্তরাধিকার নকশা করার সিদ্ধান্ত নেন।

রিলায়েন্স গ্রুপে ইশা আম্বানিকে নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে আসাকে অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন। দেশটিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের পর্যায়ে নারীদের যাওয়ার খুব একটা নজির নেই। দুই দশক ধরে তা কেবল শুরু হয়েছে। ভাইদের সঙ্গে ইশার সমঅধিকারের বিষয়টি তাই একটা নজির হয়ে থাকবে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, মেয়েদের এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

হায়দ্রাবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেসের টমাস শ্মিডিনি সেন্টার ফর ফ্যামিলি এন্টারপ্রাইজের একজন অধ্যাপক কাভিল রামচন্দ্রন এটিকে মেক-অর-ব্রেক পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, অনেক উত্তরাধিকারীরই বড় কোন চাকরি কিংবা পেশাদার ট্র্যাক রেকর্ড থাকে না। তারা কেবল পারিবারিক সফলতার মই বেয়ে উপরে উঠে যায়। কিন্তু তার এ মন্তব্যের দ্বিমতও রয়েছে। অনেকেই এটাকে পারিবারিক উত্তরাধিকার পরিকল্পনার সফল প্রয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেন।

এমনকি অতীতেও দেখা যায় সমস্ত রাজবংশই তাদের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা কীভাবে তাদের পরম্পরাকে ধরে রাখবে, কি ধরনের ভূমিকা পালন করে তা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে। তারা তাদের সিনিয়রদের উদ্যোক্তা নেতৃত্ব এবং সাফল্য ধরে রাখতে পারে কিনা তা দেখার জন্য তাদেরকে সুযোগ দেয়া হয় এবং যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

৫৫ বছর পর ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৫ আগস্ট একটি দুর্যোগ বার্তা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায় অস্ট্রেলিয়ার 'এমভি নুনগাহ' জাহাজ। পরে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায়ও জাহাজে থাকা মানুষদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই জাহাজটির নিখোঁজ হওয়া দেশটির নাগরিকদের কাছে রহস্য হয়ে ছিল। 

এবার সেই রহস্যের উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে দেশটির বিজ্ঞান সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় জাহাজে থাকা ২৬ জনের মধ্যে ক্রুসহ ২১ জনের মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল।  

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার তথ্য জানায়।

বিবিসি জানায়, ৭১ মিটার (২৩৩ ফুট) দৈর্ঘ্যের ওই মালবাহী জাহাজটি নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূল থেকে ইস্পাত নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি ডুবে যায়। এমন ঘটনা তখন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। 

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজনকে জীবিত ও ২০ জনের মরদেহ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একঝনের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ডেরওয়েন্ট নদীতে ১৯৫৬ সালে তোলা 'এমভি নুনগাহ'
 

গণমাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়া তাদের উচ্চ রেজোলিউশন সমুদ্রতল ম্যাপিং এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ধ্বংসাবশেষের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

তবে সিডনি থেকে প্রায় ৪৬০ কি.মি (২৮৬ মাইল) উত্তরে সাউথ ওয়েস্ট রকসের উপকূলের গভীর জলে স্থানীয়রা এক বছর আগে একটি ধ্বংসাবশেষ দেখেছিল। পরে তারা এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর বিজ্ঞানীরা সন্ধান চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

স্থানীয়দের তথ্যের পর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছিল এটি ডুবে যাওয়া জাহাজটি হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় কোন প্রযুক্তি বা ডাইভিং জ্ঞান না থাকার কারণে সেটিই যে ডুবে যাওয়া জাহাজ নুনগাহ তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।

গত মাসে সিএসআইআরও উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে শুরু করে।

পরে তারা ওই স্থানের ১৭০ মিটার নিচে এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

সিএসআইআরও'র কর্মকর্তা ম্যাট কিম্বার বলেন, এই ট্র্যাজেডি এখনও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে। তবে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের বিষয়টি জানার ফলে সবার জন্যই কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে। 

নিহত ক্রুদের পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে জানিয়েছেন, আবিষ্কারটি একটি স্বস্তির বিষয়।

;

বিশ্বের সবচেয়ে ‘কুৎসিত কুকুর’ এটি!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কুকুরের তথ্য যেমন রয়েছে তেমনি এবার সবচেয়ে কুৎসিত আকৃতির কুকুরেরও তথ্য মিলেছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

স্কাই নিউজ বলছে, চলতি বছরের ২১ জুন (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকু্রের প্রতিযোগিতা বসেছে। ওই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ওয়াইল্ড থাং নামে আট বছর বয়সী একটি কুকুর এ তকমা পেয়েছে।

তবে এবারই ওয়াইল্ড থাং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এর আগেও ৫ বার এমন প্রতিযোগিতায় প্রাণীটি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

ওয়াইল্ড থাং এবং তার মালিক অ্যান লুইস। ছবি: সুমিকো মুটস / এনবিসি নিউজ

ওয়াইল্ড থাং এর মালিক অ্যান লুইস বলেন, ওয়াইল্ড থাং কুকুরছানা হিসাবে একটি ভয়ানক রোগ ক্যানাইন ডিস্টেম্পারে সংক্রমিত হয়েছিল। কোন ক্ষতি ছাড়াই অনেক চিকিৎসার পর বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার দাঁত বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিহ্বা বাইরে থাকে এবং তার সামনের ডান পা ২৪/৭ প্যাডেল আকারে থাকে।

পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫১১ টাকা) দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতা প্রায় ৫০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটি আকর্ষণীয় করার জন্য কুকুরগুলোকে বিশেষ এবং অনন্য করে সাজিয়ে তোলা হয়।

;

ট্যাক্সি চালকের অনর্গল ইংরেজি বলার দক্ষতা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এই সংবাদটি পড়তে হলে আপনাকে ভুলে যেতে হবে শুধু শিক্ষিতরাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন! কারণ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীর সাথে অনর্গল ইংরজিতে কথা বলছেন।

ঘটনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে ঘটেছে। দেশটির গণমাধ্যম এনডিতিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এনডিটিভি বলছে, ওই ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীদের সাথে ইংরেজি কথা বলার পাশাপাশি কিভাবে আরও দক্ষ হওয়া যায় সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে ধারণ করা ভিডিওটি ভূষণ নামে একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "এমন ঘটনা দেখে আমি কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে তার সাথে কথা বলার সময় কিছুটা তোতলা হয়েছিলাম। তার ইংরেজিতে সাবলীলতা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।"

পরে তার সাথে এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ হলো।

ট্যাক্সি চালক বলেন, ইংরেজি শেখা থাকলে আপনি লন্ডন এবং প্যারিসের মতো উন্নত দেশে যেতে পারবেন। এটা বিশ্বব্যাপী ভাষা। এ কারণে ইংরেজি শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিওটিতে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "তার কথা বলার ধরণ ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের মতো শোনাচ্ছেন"।

অপর একজন লিখেছেন, "১৬ বছরের শিক্ষার পর তার ইংরেজি আমার চেয়ে অনেক ভালো।"

;

‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার মেঘনা নদীর দেখা মেলে চুনা নদীতে



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘনা নদী দেব পাড়ি
কল-অলা এক নায়ে।

আবার আমি যাব আমার
পাড়াতলী গাঁয়ে।

গাছ-ঘেরা ঐ পুকুরপাড়ে
বসব বিকাল বেলা।

দু-চোখ ভরে দেখব কত
আলো-ছায়ার খেলা।

বাঁশবাগানে আধখানা চাঁদ
থাকবে ঝুলে একা।


ঝোপে ঝাড়ে বাতির মতো
জোনাক যাবে দেখা।

ধানের গন্ধ আনবে ডেকে
আমার ছেলেবেলা।

বসবে আবার দুচোখে জুড়ে
প্রজাপতির মেলা।

হঠাৎ আমি চমকে উঠি
হলদে পাখির ডাকে।

ইচ্ছে করে ছুটে বেড়াই
মেঘনা নদীর বাঁকে।

শত যুগের ঘন আঁধার
গাঁয়ে আজো আছে।

সেই আঁধারে মানুষগুলো
লড়াই করে বাঁচে।

মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,

পাখির ডানায় লিখেছিলাম-
প্রিয় স্বাধীনতা।

কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় স্বাধীনতা কবিতার লাইনের সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়-

শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে থাকা মানুষগুলোর কথা।
চুনা নদী পাড়ি দেবো, ডিঙ্গি নৌকা দিয়া।

আবার আমি যাবো আমার উপকূলের গাঁয়ে।
কাজের জন্য ছুটে বেড়াই, চুনা নদীর বাঁকে।

বনে বাঘ, জলে কুমির আর ডাঙ্গায় লোনা পানির ক্ষত।
সেই চরের মানুষগুলো, এখনো লড়াই করে বাঁচে।

বর্ষাকালের দুপুর বেলা। আকাশে কালো মেঘ খেলা করছে! নদীতে পানি ঢেউ খেলছে! ভেসে আসছে, গেট থেকে জল আসার শব্দ। নদীর এপার ওপার হচ্ছেন ডিঙা নৌকা দিয়ে পাড়ে থাকা মানুষগুলো। ছুটে চলেছেন নারী-পুরুষ একে একে চুনা নদীর তীরে কাজের সন্ধানে। সন্ধ্যা হলেই দেখা মেলে বাড়ি ফেরার তাড়া। রাতের আঁধারে পশুপাখি, জীবজন্তু, পোকামাকড়ের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচেন এই চুনা নদীর পাড়ের মানুষগুলো।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে বসবাস নিত্যসংগ্রামী মানুষদের, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম


এখানকার মানুষজন লড়াই সংগ্রাম করে এখনো টিকে আছেন। টিকে থেকে তাদের রোজ কাজের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলতে হয়। বর্তমানে ভাঙাগড়ার জীবনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে বসবাস করছেন তারা। শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত চুনা নদীর চরটি। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারানো ২০-২৫টি জেলে পরিবারের ঠাঁই হয়েছে এখানে। বছরের পর বছর এই চরকে আগলে বসবাস করলেও সব সময় লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।

তাদের একজন ৩৫ বছর বয়েসি রমেশ চন্দ্র মণ্ডল। দুর্যোগে সহায়-সম্পদ হারিয়ে আশ্রয় নেন চরের এক কোণে। সেখানে মাটির ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস তার। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ভর করে থাকতে হয়, স্ত্রীর ওপর। তার কষ্টের বিনিময়ে জোটে তাদের একমুঠো ভাত। স্ত্রী একাই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তাদের নিয়ে এই চরে।

বনে পশুপাখির, জলে কুমির আর স্থলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে এভাবে তাদের জীবন প্রবহমান। তাদের জীবন চলার পথে নেই কোনো বিরাম। সংগ্রাম করে টিকে থাকেন সবাই। একে একে সব কিছু হারিয়েও এখানো টিকে থাকতে হয় তাদের।

রমেশের মতো একই অবস্থা ষাটোর্ধ্ব ফকির বিশ্বাসের। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও পেটের দায়ে কাজ করতে হয় তাকে। একবেলা কাজ করলে অপর বেলা কাটে অসুস্থতায়!

ফকির বিশ্বাস বার্তা২৪কমকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারিয়ে এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আশ্রয়ের দুই যুগ লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। বরং প্রতিবছর ছোটবড় দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে বারংবার!

জীবন কাটে যুদ্ধ করে, ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় পেতে...চুনা নদীর তীরের মানুষের জীবন, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম

চুনা নদীর চরে মাছের পোনা গুনতে দেখা যায় নমিতা রাণী রায়কে। নমিতা রাণী রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে সবসময় চিন্তার ভেতরে থাকতে হয় আমাকে। নদীতে কুমির আর বনে বাঘের আতঙ্ক! তারপর ডাঙায় লোনা পানির ক্ষত। লবণাক্ততায় ভরা জীবনকাল। তারপর চরটি নদীর ধারে হওয়াতে একটু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। এই লড়াই-সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি সেই প্রথম থেকে। মাছের পোনা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার। আমরা সবাই এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছি।

নমিতা রাণী রায় বলেন, যখন বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়, তখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ওই সময় অনেক কষ্টে চর এলাকার সবার দিন কাটে। শিশু সন্তানদের সবসময় নজরে রাখতে হয়। অন্যথায় নদীতে পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা!

নিত্যদিনের লড়াই-সংগ্রাম

লড়াই সংগ্রামের শেষ নেই উপকূলে থাকা মানুষজনের। সর্বশেষ, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আঘাতে নদীর জোয়ারের জলে তলিয়ে যায় তাদের বসতঘর। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বলে কথা না! যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জোয়ারের পানিতে তাদের বসতঘর তলিয়ে যায়। তখন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাদের। এমনও অনেক সময় গেছে যে, দিনের পর দিন উনুনে আগুন দিতে পারেননি তারা। ওই সময় শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। এমনও দিন গেছে, যেদিন তাদের শুধুমাত্র পানি পান করে বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হয়েছে।

ঘরছোঁয়া জলের বানের দিকে তাকিয়ে থাকেন চুনা নদীর তীরের মানুষজন আর ভাবেন আর কত সংগ্রাম, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়,বার্তা২৪.কম

সত্যি, তাদের ভাষ্যের সঙ্গে বড়ই মিল কবি শামসুর রাহমানের ‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার! ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা একটা বড় প্রশ্নেরই বটে! জঙ্গল, বন্যা, নদীভাঙনের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করে টিকে থাকা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অভাবে চরের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন। তাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়। প্রতিবছর এসব দুর্যোগে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা। আবারও লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরেও দাঁড়ান তারা।

;