নাগরিক জীবনে গ্রামীণ শীতের পিঠা

  • মাসুদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গোপালগঞ্জ, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পথের ধারে শীতের পিঠা বানানোর ধুম চলছে, ছবি: বার্তা২৪

পথের ধারে শীতের পিঠা বানানোর ধুম চলছে, ছবি: বার্তা২৪

শীত মৌসুম এলেই কদর বাড়ে নানা ধরনের পিঠার। শুরু হয় শীতের পিঠা বিক্রির ধুম। আধুনিক সমাজে গ্রামীণ জীবন ও খাদ্যের গৌরব যেন ফিরে আসে শীতের পিঠার হাত ধরে। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠার ভক্ত এখন শহুরে নাগরিকরাও। নাগরিক জীবনে গ্রামীণ শীতের পিঠা রসনার জগতে যুক্ত করেছে নতুন এক মাত্রা।

গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী, কোটালীপাড়া, মুকসুদপুর, টুঙ্গিপাড়া, বৌলতলী, বানিয়ারচর, জলিরপাড়, টেকেরহাট বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার সর্বত্র চলছে পিঠা বিক্রির হিড়িক। এ ব্যবসা করে অনেকেই ভালো রোজগার করছেন।

বিজ্ঞাপন

শীতের পিঠা বানানো ও ব্যবসায় তেমন বেশি পুঁজি লাগে না। জ্বালানি হিসেবে লাকড়ি বা খড়ি, কিছু গুড়, নারিকেল ও চাউলের গুঁড়া দিয়ে শুরু করা যায় কারবার। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলের দৈনিক ও সাপ্তাহিক হাট-বাজারগুলোতে শীত মৌসুমের ভাপা পিঠার কদর বেশি। পিঠা বিক্রি শুরু হয় কাকডাকা ভোরে। শীত মৌসুমের নাস্তা হিসাবে ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠা গ্রামীণ জনপদের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর যদি বেশি শীত ও কুয়াশা থাকে, তাহলে সারাদিনই চলে গরম গরম পিঠা বিক্রি খাওয়ার পালা।

গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠার প্রতি সমাজের সব শ্রেণির মানুষেরই আগ্রহ রয়েছে। টুলে বসে, দাঁড়িয়ে মানুষ গ্রহণ করে মুখরোচক পিঠার স্বাদ। কেউ কেউ প্যাকেটে ভরে বাড়িতেও নিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547795021424.gif

ভাপা পিঠা ছাড়াও রয়েছে চিতই পিঠা। খেজুরের গুড় দিয়ে এসব পিঠা বানানো হয়। চিতই পিঠার সঙ্গে ধনিয়া পাতা, মরিচ, সরষে, শুঁটকি বাটা দিয়েও পরিবেশন করা হয়। পিঠার দামও বেশ কম। মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে চোখের সামনে বানানো ওভেন ফ্রেশ পিঠা। উনুনেনর তাপে গরম পিঠার মজায় কেটে যায় শীতের আমেজ।

পিঠা বানানো ও বিক্রির সঙ্গে প্রধানত জড়িত রয়েছেন গ্রামীণ মহিলারা। জলিরপাড়ের পিঠা ব্যবসায়ী উজালা বেগম বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রতি বছর শীত এলে তিনি পিঠা বিক্রি শুরু করেন। শীতের মাত্রা যতই বেশি থাকে, পিঠা বিক্রিও বাড়তে থাকে। প্রতিদিন ১০০০/১৫০০ টাকার পিঠা বিক্রি হয়।

টেকেরহাটের শিউলি বেগম জানান, যেসব পিঠায় গুড় ও নারিকেল দেয়া হয়, সেগুলোর দাম বেশি হয়। ক্রেতাও বেশি। শীতের হিমেল হাওয়ার তীব্রতা যতই বাড়ে, পিঠার বিক্রিও ততই বেড়ে যায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547795051596.gif

শীতের হিমেল সকালে পিঠা খেয়ে ক্রেতারাও খুশি। জনি ফকির নামে এক ক্রেতা পিঠা খেতে খেতে বলেন, ‘পিঠা খেতে খুবই ভাল লাগে। আমি প্রায়ই রাস্তার ধারে বানানো পিঠা খেয়ে নাস্তা সারি। সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ মিলে এক সাথে পিঠা খাওয়াও উৎসবের মতো আনন্দের।’

আবহমান বাংলার খাদ্য ঐতিহ্যের অন্যতম শীত পিঠা গোপালগঞ্জের লোকায়ত সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রসনা তৃপ্তি ছাড়াও এই পিঠা গ্রামীণ নারীর কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নের পাথেয়। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খাবারটি শীতের আবহে নতুন প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষকে অতীতের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করে। চিরায়ত গ্রাম-বাংলা প্রকৃতি, পরিবেশ, সংস্কৃতি, জীবনাচার ও খাদ্য সম্ভারের গৌরবের কথা মনে করিয়ে দেয় মানুষকে।