৬৪ তম জেলা ভ্রমণ: আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ



ফরিদ ফারাবী
তিন গম্বুজ মসজিদ, ছবি: বার্তা২৪

তিন গম্বুজ মসজিদ, ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ডিসেম্বরের কনকনে শীতে বগুড়া থেকে নওগাঁ হয়ে যখন রাজশাহী পৌঁছলাম তখন রাত প্রায় নয়টা বেজে গেছে। যদিও এযাত্রায় গন্তব্য পশ্চিমের সর্বশেষ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ তবু মাঝখানে রাজশাহী শহরটাই বা বাদ যাবে কেনো! সাথের ট্যুরমেটের শিক্ষাজীবনের লম্বা সময় কেটেছে এখানে সেই সূত্রে এশহর তার খুব বেশি আপন। আমার ঘুরে দেখার আগ্রহের চাইতে তার ঘুরিয়ে দেখানোর আগ্রহ কোনটাই কম না।

বাস থেকে নেমেই যথারীতি একটা ছোটখাটো চক্কর দিয়ে ফেললাম। এতো পরিচ্ছন্ন এবং বিশুদ্ধ বাতাসের শহর আমি বাংলাদেশে আর পাইনি। এর আগে রাজশাহী এসেছিলাম প্রায় পাঁচ বছর আগে তখন অবশ্য শহরটাকে এভাবে দেখা হয়নি। এই ক'বছরেই বেশ বদলে গেছে শহরের হালচাল। হাঁটছিলাম উদ্দেশ্যহীন শহরের এক প্রান্ত ধরে। হাঁটার সময় খুব একটা টের পাওয়া না গেলেও রিক্সায় উঠে হিমেল বাতাসে ঠান্ডা বেশ টের পাচ্ছিলাম। লক্ষীপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা গল্পে কাপের পর কাপ চা শেষ করে রাত্রিযাপনের জন্য রামেক-এর হলে ফিরলাম বেশ দেরি করেই।

ভেতরে ততক্ষণে এক অদ্ভুত উত্তেজনা কাজ করছে। জেলা গণনার হিসেব নিকেশ যদিও সেভাবে কখনো করিনি তবু সামনে যখন চলেই এলো, একটা মাইলফলক তো বটেই। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে যাচ্ছে আমার সুদীর্ঘ এক্সপ্লোরেশনের ৬৪ তম জেলা। বিজয় দিবসের দিনে এমন মাইলফলকে পৌঁছানোর চাইতে স্মরণীয় আর কী-বা হতে পারে!

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816546118.jpg

ভোরের আলো ফোটার আগেই ফোনের এলার্মের শব্দে ঘুম ভাংলো। ভ্রমণের পুরোটা দিনকে কাজে লাগাতে একটু তাড়াতাড়ি বের হওয়ার কোন বিকল্প নেই। অল্প সময়ের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। ভোরের স্নিগ্ধ পরিবেশে হাটঁতে হাটঁতেই বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌছলাম। পাশের চায়ের দোকানের ধোঁয়াতোলা কেটলি আর চায়ের কাঁচা পাতির সুবাস পেয়ে আর বসে থাকা গেলোনা। চা শেষ করতেই বাস এসে পৌছালো। প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগলো চাঁপাই পৌঁছাতে। বাসস্ট্যান্ডে নেমে হাটঁতে হাটঁতে জেলা পরিষদ হয়ে স্টেডিয়াম পৌঁছলাম। ১৬ই ডিসেম্বর হওয়াতে পুরো এলাকাতে একটা সাজ সাজ রব। স্টেডিয়ামে চলছে কুওচকাওয়াজ। বাইরে থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো ভেতরের এলাকা কানায় পরিপূর্ণ। টের পেলাম বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। খোঁজাখুঁজির পর সামনের রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিম খিচুড়ির নাস্তা সেরে নিলাম। সারাদিন ঘোরার প্রস্তুতিতে সকাল সকাল একটু ভারি নাস্তায় বাকি দিন নির্ভার থাকা যায় লম্বা সময়ের জন্য।

নাস্তা পর্ব সেরে একটা রিক্সা নিয়ে পুরো শহর ঘুরে সরাসরি মহানন্দার পাড়ে পৌঁছলাম। কিছুপথ হেটে ব্রীজ পার হয়ে কানসাট পর্যন্ত অটোরিক্সায় উঠলাম। অটো চলছিলো রাস্তার দুপাশের আমবাগান ছাড়িয়ে। ছোট ছোট এই গাছগুলোই গ্রীষ্মকালে আমের ভারে মাটিতে নুয়ে থাকে। এখানে কেউ কারো আমে হাত দেয়না। এমনকি ট্যুরিস্ট হলেও গাছ থেকে আম ছিড়ে নেয়াটা খুবই গর্হিত কাজ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816586375.JPG

কানসাট থেকেই সোনা মসজিদের অটোরিক্সা পেলাম। দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। সোজা রাস্তা চলে গেছে স্থলবন্দর পর্যন্ত। কাছাকাছি আসতেই বাংলাবান্ধা, বেনাপোলের মত স্থলবন্দরের একটা পরিচিত চেহারা ভেসে উঠলো। ছোট সোনা মসজিদের সামনেই নেমে গেলাম। ছুটির দিন হওয়াতে বেশ ভীড় দেখা গেল মসজিদ প্রাঙ্গনে। এতোটা ভীড় আশা করিনি। তবু কী আর করা! মসজিদের পাশেই চোখে পড়লো বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল দুই মুক্তিযোদ্ধার সমাধি।

ছোট সোনা মসজিদে~

ছোট সোনা মসজিদ দেশের অন্যতম পুরনো স্থাপনা। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে নির্মিত এই মসজিদটিকে বলা হয়ে থাকে সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন। মুলত নুসরত শাহ নির্মিত গৌড়ের সোনা মসজিদের মতই সোনালী গম্বুজ হওয়াতে এই মসজিদটিকে বলা হতো ছোট সোনা মসজিদ। জানা যায় সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহ-এর শাসনামলে (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিস্টাব্দ) জনৈক মনসুর ওয়ালি মোহাম্মদ বিন আলী মসজিদটি নির্মান করেন। সে হিসেবে এই মসজিদের বয়স এখন প্রায় ৫০০ বছরের বেশি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816608011.jpg

মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ২৫ মিটার লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১৭ মিটার চওড়া। চারকোনায় রয়েছে চারটি তুঘলক পদ্ধতির বুরুজ। এছাড়া মসজিদের সামনের অংশে দরজার সংখ্যা মোট পাঁচটি। ভেতরের ৮টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের উপর তৈরি হয়েছে ১৫টি গম্বুজ। মাঝের মেহরাব ও পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজার মধ্যবর্তী অংশে ছাদের ওপর যে গম্বুজগুলো রয়েছে সেগুলো চৌচালা গম্বুজ। পুরো মসজিদের অলংকরণে মুলত ব্যাবহৃত হয়েছে পাথর, ইট ও টেরাকোটা। যাতে খোদাই করা আছে নানান নকশা। তবে এই টাইপের নকশা আমি অন্যান্য পুরনো কোন মসজিদের গায়ে দেখিনি। সারা বাংলাদেশে ৬৪ জেলার যত প্রাচীন মসজিদ দেখেছি তার মধ্যে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের পর এই মসজিদটি-ই আমার নজর কেড়েছে।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আগেই ঠিক করে রাখা ভ্যানে করে রওয়ানা হলাম তাহখানার উদ্দেশ্যে।

তাহখানা ও তিন গম্বুজ মসজিদে~

ছোট সোনা মসজিদ থেকে ৫০০ মিটার উত্তর পশ্চিমে জাহেদুল বালা দীঘির পশ্চিম পাড়ে তাহখানা অবস্থিত। সুবেদার শাহ সুজার শাসনামলে নির্মিত এ স্থাপত্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। ভাবতেই পারিনি এখানে এমন চমৎকার স্থাপনার দেখা পাবো। আয়তাকার আকৃতির এই দুইতলা বিশিষ্ট ইমারত ঢাকার লালবাগ কেল্লার কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় দুইটি অষ্টকোণাকৃতির কক্ষসহ উপর তলায় মোট সতেরোটি কক্ষ রয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816696228.jpg

তাহখানার নির্মানের কারণ সম্পর্কে দুইটি মতামত পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় সুবেদার শাহ সুজা অবকাশ যাপন এবং তার আত্মাতিক গুরু শাহ নিয়ামত উল্লাহ (র) – এর সাথে স্বাক্ষাতের জন্য এখানে আসতেন। সে জন্যই ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০ সালের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে এই ইমারত নির্মান করেন। এছাড়াও মনে করা হয় শাহ নিয়ামত উল্লাহ (রঃ)- এর বসবাসের জন্যও তিনি এই ইমারত নির্মান করে থাকতে পারেন।

তাহখানার মূল প্রাসাদ থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে সামান্য দূরে রয়েছে শাহ্ নিয়ামত উল্লাহ এর সমাধি ও মসজিদ। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের ভেতরে বাহিরে তেমন উল্লেখযোগ্য কারুকাজ না থাকলেও এর স্থাপত্য এক কথায় অসাধারণ। মসজিদের ৩টি প্রবেশ পথ এবং ভেতরে ৩টি মেহরাব রয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ এই মসজিদে নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করে থাকেন। মসজিদের পাশেই শাহ নিয়ামত উল্লাহ –এর সমাধি। বর্গাকার নকশা পরিকল্পনায় নির্মিত সমাধি কমপ্লেক্স ঘিরে ভক্ত দর্শণার্থীদের ভীড় এড়িয়ে বের হয়ে এলাম।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816737643.jpg

দারসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা~

ভ্যানওয়ালকে জিজ্ঞেস করলাম এর পরে কোথায় যাচ্ছি? গন্থব্য জানালেন দারসবাড়ি মসজিদ এবং মাদ্রাসা এলাকায়। ছোট সোনামসজিদ ও কোতোয়ালী দরজার মধ্যবর্তী স্থানে ওমরপুরের কাছেই দারসবাড়ি অবস্থিত। মুলত আরবী দারস অর্থাৎ 'পাঠ' শব্দ থেকে দারসবাড়ি শব্দের উৎপত্তি। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছলাম মসজিদের সামনে। ছাদ ধ্বসে পরে অনেকটাই ধ্বংসস্তুপের মত অবস্থা তবে পূর্বেকার স্থাপত্যের জৌলুশ ঠিকই ধরে রেখেছে দেয়ালের টেরাকোটা ও ডিজাইনগুলো। ভেঙ্গে পড়ার আগে কতটা অসাধারণ ছিলো এই স্থাপনা তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ঐতিহাসিক অনুসন্ধানে জানা যায় সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ-এর রাজত্বকালীন সময়ে ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে তারই আদেশে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। অক্ষত অবস্থায় কোন অংশেই সোনা মসজিদের চেয়ে কম সুন্দর ছিলোনা এই মসজিদ। ইট নির্মিত এই মসজিদের অভ্যন্তরের আয়তক্ষেত্র দুই অংশে বিভক্ত। উপরে ৯টি গম্বুজের চিহ্নাবশেষ রয়েছে এবং উত্তর দক্ষিণে ৩টি করে জানালা ছিল। উত্তর পশ্চিম কোণে মহিলাদের নামাজের জন্য প্রস্তর স্তম্ভের উপরে একটি ছাদ ছিল। এর পরিচয় স্বরূপ এখনও একটি মেহরাব রয়েছে। এ মসজিদটি বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যের কীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এখানে প্রাপ্ত তোগরা অক্ষরে উৎকীর্ণ ইউসুফি শাহী লিপিটি এখন কোলকাতা যাদুঘরে রক্ষিত আছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816818747.jpg

মসজিদের দেড়শ মিটার দূরেই দারসবাড়ি মাদ্রাসা। মাদ্রসার মূলত এখন কোন অস্তিত্ব নেই। অনেকটা পাহাড়পুরের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শণের মত দেখতে এই এলাকায় মাটির নিচে চাপা পড়া শুধু কক্ষগুলোর চিহ্ন রয়েছে। এখানে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে উদঘাটিত তথ্য অনুসারে মাদ্রাসাটি আলাউদ্দীন হুসেন শাহ-এর আমলে ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। ধারণা করা হয়ে থাকে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন মাদ্রাসার নিদর্শণ।

চামচিকা মসজিদে~

মাদ্রাসা এলাকা ছাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গণকবর পেরিয়ে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের কিছু আগে ডান দিকে চামচিকা মসজিদে চলে এলাম। এখানে আমবাগানের পাশে কয়েকটা পিকনিক গ্রুপের বাস দেখতে পেলাম। পাশেই সাউন্ডবক্স বাজিয়ে হৈ হুল্লোড় চলছে। পাশ কাটিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌছলাম।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816852609.jpg

খুব একটা বড় না হলেও বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে স্থাপণা। চামচিকা মসজিদের নামকরণের ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয় ভারতের বড় চামচিকা মসজিদের আদলেই এটি তৈরী। দারসবাড়ী মসজিদের মতই পোড়ামাটি ইট ও কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি। এর দেয়ালের পরিধি এত মোটা যে চৈত্র মাসের প্রচন্ড গরমে এর ভিতরে শীতল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। মসজিদের পূর্বে ৬০ বিঘা আয়তনের খঞ্জন দিঘী নামে একটি বড় দিঘী রয়েছে। মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে চলে এলাম বর্ডারে অবস্থিত কোতয়ালি দরজার কাছাকাছি। খুব বেশি সময় অবস্থান না করে দূর থেকেই দেখে বিদায় নিয়ে পাশের বাস কাউন্টারে এলাম।

বিদায় চাঁপাই~

বিকেল হয়ে এসেছে সারাদিন ঘুরতে ঘুরতে। এর মধ্যে পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি আমাদের। পরিকল্পনা ছিলো বিকেলে রাজশাহী ফিরে পুঠিয়া রাজবাড়িটাও ঘুরে যাবো। তবে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টের পেলাম সেটা দুঃসাধ্যই হবে বটে। তবু ফেরার পালা আমাদের। ভাবতেই ভালো লাগছে রাজশাহীতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে কালাই রুটি এবং হাঁসের মাংস। আর হ্যাঁ যারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরতে যাবেন শিবগঞ্জের মিষ্টির কথা একদম ভুলবেন না। একটা কথা নিসন্দেহে বলা যায়, যদি আপনি প্রত্নতত্ত্ব ও প্রাচীন স্থাপত্যের প্রতি আগ্রহী হোন তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আপনাকে মোটেও হতাশ করবেনা।

 ৬৪ তো শেষ হলো এবার না হয় সীমানা পেরিয়ে ১০০ হোক! অন্তত স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই।

 

   

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;