ফুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা গাইবান্ধার ইদিলপুর
ফুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে গাইবান্ধা জেলার ইদিলপুর এলাকা। আসছে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে চাষিদের ক্ষেতে এখন হরেক রকম ফুল শোভা পাচ্ছে। আর এই ফুলের ঘ্রাণ ইদিলপুর এলাকাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে নানা ধরণের ফুল। জেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলগুলোতে এখন অর্থকরী ফসল হিসেবে গোলাপ ফুলসহ অন্যান্য ফুল চাষ করা হচ্ছে। সারা বছরের ফসল হিসেবে বেশ লাভজনক হওয়ায় ফুল চাষেই অধিক মাত্রায় ঝুঁকে পড়ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
রাঘবেন্দপুর গ্রামের হাবিজার রহমান ফুল উৎপাদন করে আসছেন কয়েক বছর বছর যাবৎ। নিজ জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল উৎপাদন করছেন তিনি। তার উৎপাদিত ফুলের মধ্যে রয়েছে, গোলাপ, সূর্যমুখী, রজনীগন্ধা, ডালিয়া, ঘাস ফুল, গাধা, জারবারা (ইন্ডিয়া)।
তাজনগর গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বিপ্লব গত বছর মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন জাতের সাদা, হলুদ, লাল, কালো গোলাপ চাষ শুরু করে এক বছরেই অর্থনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। ফলে এ বছরও তিনি নতুন করে আরও বেশি জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করছেন।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন রংয়ের গার্ডিউলাস, চন্দ্রমল্লিকা এবং রজনীগন্ধা চাষেও মনোযোগী হয়ে পড়েছে। বিপ্লবের এই সাফল্যে ওই গ্রামের অন্যান্য কৃষকরাও এ বছর গোলাপ চাষ শুরু করেছে।
বিপ্লব জানান, যশোর থেকে গোলাপ চারা নিয়ে এসে তিনি প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে গাইবান্ধায় জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে গোলাপ ফুলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুলের ব্যবসাও জমজমাট হয়ে উঠেছে। জেলা শহরেই গড়ে উঠেছে কয়েকটি ফুলের দোকান। এছাড়া উপজেলা সদরগুলোতেও রয়েছে ফুলের দোকান।
গোবিন্দরায় দেবত্তর গ্রামের ফুল চাষি শাহীন মিয়া জানান, দুই বিঘা জমিতে ফুল চাষে মাসিক ১১-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর খরচ বাদে প্রতিমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। বাগানের সকল প্রকার কাজে পরিবারের সবাই তাকে সাহায্য করে। এতে করে বাগানের কাজের জন্য অন্যকোন শ্রমিক প্রয়োজন হয় না তার।
চাষি মজিদ মিয়া জানান, সাধারণত একটি গোলাপ ৩ টাকা দরে বাগান থেকে বিক্রি করা হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা প্রতিটি ৭ থেকে ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। তবে বিশেষ মৌসুমে যেমন- ভালবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন, নববর্ষ, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস ও বিভিন্ন দিবসে একটি গোলাপ বাগান থেকেই বিক্রি হয় ১০ টাকায়। যা দোকানে বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে।
চকনদী গ্রামের আনিছুর রহমান চাষি বলেন, কিছু দিন আগে যশোর, রংপুর এবং বগুড়া থেকে ফুল আমদানি করে আমাদের এলাকার ফুলের দোকানীরা ব্যবসা করতো। বর্তমানে গাইবান্ধার ইদিলপুরসহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলেই ফুলের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর তাদের বাইরে জেলা থেকে ফুল আনতে হচ্ছে না। এতে উৎপাদক কৃষক এবং ফুল বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল হাসান বলেন, ইদিলপুর এলাকায় মাটি ফুল চাষে অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় বেশি ফলন পাওয়ায় ফুল চাষ করে যথেষ্ট লাভবান হতে পারছেন কৃষকরা। এ কারণে অন্য ফসলের পরিবর্তে কৃষকদের মধ্যে গোলাপ ফুলের চাহিদা বাড়ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সম্প্রতি বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখে কৃষকরা ক্ষেতের ফুলগুলো ম্যাকিং করা শুরু করেছে।