ঢাকার বাতাস জয় করা বীর বাঙালি!

  • মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পিএম২.৫ সংক্রমক থেকে পরিত্রাণ পেতে মুখে মাস্ক পড়ে বের হচ্ছেন থাই নাগরিকরা/ছবি:বার্তা২৪

পিএম২.৫ সংক্রমক থেকে পরিত্রাণ পেতে মুখে মাস্ক পড়ে বের হচ্ছেন থাই নাগরিকরা/ছবি:বার্তা২৪

ব্যাংকক থেকে ফিরে: পায়া থাই থেকে ৭৪ নং বাসে উঠলে আরি বিটিএস স্টেশনে পৌছাতে ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। ব্যাংককের পাবলিক বাসগুলোতে বসার সিট কম। বরং দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা বেশি। সকালে অফিস যাত্রীদের তাড়া। তবে অর্ধেকের বেশি মানুষের মুখে মাস্ক। ঠিক যেমন সোয়াইন ফ্লু'র সময় আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমের রিপোর্টগুলোতে প্রচুর মাস্ক পড়া মানুষের ছবি প্রকাশ করা হতো, এই শহরের অবস্থা এখন তেমন। তবে বাঙালি মাত্রই বীরের জাতি। আর আমার মতো বীরের পক্ষে মুখে মাস্ক পড়ে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব নয়।

কানালাউই ওয়াক্লেহং থাইল্যান্ডের ব্যাকপ্যাক জার্নালিস্ট। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এক সকালে ব্যাংকক থেকে ঢাকায় আমাকে ফোন দিলো। বেশ উদ্বেগ কণ্ঠে। এক বৈশ্বিক জরিপে প্রকাশ পেয়েছে ব্যাংককের বায়ূ দূষন সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়েছে। আমিও তার সঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করলাম। পিএম২.৫ যে শরীরে ক্যন্সার বাসা বাঁধতে কতটুকু সহায়ক সেটা শুনে আমিও আঁৎকে উঠলাম।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/02/1549076818260.jpg

তবে সকাল বলে বেশিক্ষণ বায়ূ দূষণ সম্পর্কিত জরুরি আলোচনা টানতে পারলাম না। মোটরসাইকেলে চেপে ঢাকার নির্মল বায়ু টানতে টানতে রওনা হলাম অফিসের দিকে৷

বিজ্ঞাপন

এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যাংকক যাবার কথা রয়েছে আমার। এটা শুনে আমার এক সহকর্মী এগিয়ে এলো মৃত্যুপুরীর যাত্রা থেকে আমাকে বাঁচাতে।

'ভাই যে ব্যাংকক যাবেন, ওখানকার বাতাসের অবস্থাতো খারাপ! বাতাসে ভয়ংকর পিএম২.৫! '

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও খবর এসেছে ব্যাংকক কর্তৃপক্ষ বেশ চিন্তিত এই পিএম২.৫ নিয়ে। চলছে আলোচনা, সমালোচনা, সরকারের চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেকের দাবি পরিস্থিতি ভাল না হওয়া পর্যন্ত সকল অফিস-আদালত, স্কুল কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কয়েকদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হোক। কারণ, বাইরের বাতাসে ক্যান্সার সহায়ক ভয়ংকর উপাদান মিশে আছে। বাসা থেকে বের হলেই মৃত্যু বুঝি কেড়ে নিবে প্রাণ। আমার দুঃচিন্তা বাড়তে থাকে। নিয়ম ভাঙা অকুতোভয় বাঙালি হলেও মৃত্যুকে যে আমার বড় ভয়! এতো দ্রুত এই সুন্দর ভুবন আমি ছাড়তে চাইনা৷

এদিকে বিমানের টিকেট কাটা হয়ে গেছে। আর বাজেট এয়ারলাইন্সের কাটা টিকেটের তারিখ পরিবর্তন করতে জরিমানা গুনতে হবে অনেক। এতো টাকার ক্ষতি সামলাবো! নাকি নিজের জীবন বাঁচাবো সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমার চোখ জলে ভিজে যায়।

কি আমার করণীয়! কার কাছে জানতে চাইবো। কে আমাকে পথ দেখাবেন! মনে পড়লো গুগল মামার কথা। এই অন্ধকারে গুগলই হতে পারে পাঞ্জেরী। জানতে চাইবে, 'গুগল ব্যাংককের এই পিএম২.৫ থেকে ঢাকার বাসিন্দা আমি কিভাবে বাঁচতে পারি!'

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/02/1549076842204.jpg

গুগলে পিএম২.৫ লিখতেই বিশাল সব বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি চলে আসলো। যার সারমর্ম হচ্ছে, বায়ু দূষণের অন্যতম উপাদান সরু পার্টিকুলার মেটারকে পিএম২.৫ বলে। যার লাঞ্জ ক্যান্সার, গর্ভে মৃত্যুসহ অনেক ভয়াবহ রোগের কারণ। এটা আমাকে খুব বিচলিত করে না। কারণ মৃত্যু যেখানে প্রতি ধাপে হুংকার না দিবে, সেখানে বীরের জন্ম হবে কিভাবে!

কিন্তু হায়! এয়ার কোয়ালিটি চেকের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে চোখ ছানাবড়া। সেই বৃহস্পতিবারে ঢাকায় পিএম২.৫ এর মাত্রা ২০০ এর ওপর। আর ব্যাংককে ১৪৫। এতেই এতো ভয়!

আমি কানালাউইকে ফোন দিলাম। ফোন ধরেই বললো, ব্যাংককে যে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে, সেটা ভাল নয়। পিএম২.৫ এর মতো সূক্ষ্ম উপাদানকে ঠেকানো সম্ভব নয়। সে তার মাকে বলে পিএম২.৫ ঠেকানোর জন্য আরো শক্তিশালী মাস্ক তৈরি করে নিবে। আমি আর ঢাকার কথা বললাম না। বললে হয়তো আমাকে কফিনে ঢুকিয়ে রাখা হতো। কারণ, তার আচরণে মনে হচ্ছে পিএম২.৫ এর মাত্রা আর কিছু বাড়লে শহরটা শ্মশাণ হয়ে যাবে!

ব্যাংককে শনি ও রোববারে পিএম২.৫ এর মাত্রা খুব কম থাকে৷ ছুটির দিন হওয়াতে সড়কে পরিবহন কম আর জ্বালানি কম পোড়ে বলে বায়ুও অনেকটা সজীব। আর ঢাকায়? এই যেমন আজকের শুক্রবারে ঢাকায় ছুটির দিন। এরপরও পিএম২.৫ এর মাত্রা বিকেল ৪ টায় ১৬৯। যাকে অস্বাস্থ্যকর বলা হচ্ছে। আর ব্যাংককে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে পিএম২.৫ এর মাত্রা একই সময়ে ১০৭। 

যাই হোক অবশেষে সাহস করে ব্যাংকক ঘুরে চলে এলাম। সেখানকার গণমাধ্যম আর মানুষের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল মহামারির শহরে চলে গিয়েছিলাম। এমনকি পিএম২.৫ এর মাত্রা বুধবার সকালে ১৭০ ছোঁয়াতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হলো। আমি ব্যাংককের পথে হাঁটি আর মনে মনে হাসি! হায়রে, আমাদের মতো বীরের ভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি এরা। কি ভীতু! কি ভীতু! এসবে আমাদের কিছুই হয় না। 

এখন স্বাস্থ্যসম্মত ঢাকায় নেমে বীরের পথচলা শুরু। কারণ বীরেরা পরোয়া করে না৷ এই যেমন বাসার সামনের খাবারের হোটেলে খেতে বসলাম, আর সঙ্গে সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে মশার ওষুধের ধোঁয়ায় পুরো হোটেল ভরিয়ে দিয়ে গেল। এর ভেতরেই ডাল ভাত মেখে পেটে ঢুকিয়ে দিলাম। কারণ নায়কদের এসব নিয়ে ভাবতে নেই!

এসব পরিবেশ, আবহাওয়া, পানি, বাতাস নিয়ে কথা বলবে ভীতুরা। এই শহরের সাহসী বীরেরা শুধু দেখে যাবে আর হাসতে হাসতে মৃত্যুকে জয় করবে। এসব নিয়ে ভাবনার সময় কই!