‘দুর্ঘটনাপ্রসূত’ আবিষ্কার এন্টিবায়োটিকের ইতিহাস



সাইফুল মিল্টন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
পৃথিবীর প্রথম এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন

পৃথিবীর প্রথম এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন

  • Font increase
  • Font Decrease

“আমি পেনিসিলিন উদ্ভাবন করিনি বরং প্রকৃতিই তা করেছে। এটা আমার দুর্ঘটনাপ্রসূত আবিষ্কার মাত্র”—পৃথিবীর প্রথম এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কার সম্বন্ধে এটা ছিল আবিষ্কারক বিজ্ঞানী অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের সরল স্বীকারোক্তি।

সাধারণভাবে এন্টিবায়োটিক বলতে বোঝায় বিভিন্ন অণুজীব থেকে প্রাপ্ত উপাদান যা মানবদেহে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে বা এগুলোকে মেরে ফেলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কার এন্টিবায়োটিক আজ রোগ নির্মূলে বহুল ব্যবহৃত ঔষধ। বিজ্ঞানের অন্যান্য আবিষ্কারের মতো এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারেরও আছে সুদীর্ঘ ইতিহাস।

এন্টিবায়োটিকের ইতিহাসকে আলোচনার সুবিধার্থে আমরা দুইভাগে ভাগ করতে পারি, প্রাচীন কালের ইতিহাস ও আধুনিক ইতিহাস। প্রাকৃতিক উপাদানের যে রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে, তা এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের বহু পূর্বে মানুষের জানা ছিল। প্রাচীনকালে মানুষ ক্ষত নিরাময়ে বিভিন্ন জৈব পদার্থ ব্যবহার করত। যেমন—
➤ গ্রিক ও ভারতীয়রা ক্ষতস্থানের সংক্রমণ রোধে ছত্রাক ও অন্যান্য উদ্ভিদ ব্যবহার করত।
➤ রাশিয়ানরা আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের ঘা শুকাতে ঈষৎ উষ্ণ মাটি ব্যবহার করত।
➤ সুমেরীয়ও সভ্যতার সময়ে চিকিৎসকরা কচ্ছপের খোল ও সাপের চামড়া প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করত।
➤ ব্যাবিলনীয়রা ব্যাঙের পিত্ত ও টক দই দিয়ে ওষুধ তৈরি করে চোখের সংক্রমণ রোধ করত।
➤ প্রাগৈতিহাসিক আমলে সিংহলী সৈন্যরা ক্ষত নিরাময়ে অয়েল কেক ব্যবহার করত।
➤ বহু বছর আগে চীনে সয়াবিনের ছত্রাক আক্রান্ত বীজ বিভিন্ন ফোঁড়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো।

এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারক স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ◢ 


আধুনিক এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫) নামটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন একাধারে চিকিৎসক, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, ফার্মাকোলজিস্ট ও অণুজীববিজ্ঞানী (ব্যাকটেরিয়োলজিস্ট)। ১৮৮১ সালে স্কটল্যান্ডের লোচফিল নামক ছোট্ট শহরতলীতে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফ্লেমিং। সেখানে স্কুল জীবনের পাঠ চুকিয়ে ১৮৯৫ সালে লন্ডনে বড় ভাই থমাস ফ্লেমিংয়ের বাসায় ওঠেন। ভর্তি হন লন্ডন রিজেন্ট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে যা বর্তমানে ওয়েব মিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ফ্লেমিং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর স্কটিশ রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন। ১৯০১ সালে চাচার পরামর্শ ও অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে সেন্ট মেরি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানে অসাধারণ ফলাফল করায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সোনার মেডেল প্রদান করে। বিজ্ঞানী ফ্লেমিংয়ের ইচ্ছা ছিল সার্জন হবার কিন্তু ঘটনাচক্রে একই মেডিকেল কলেজের ইনকুলেশন ডিপার্টমেন্টে গবেষক হিসাবে যোগ দেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মানুষের মৃত্যুর মিছিল গভীর দাগ কাটে তরুণ গবেষক ফ্লেমিংয়ের মনে


১৯১৪ সালে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। আনুমানিক ৬০ মিলিয়ন ইউরোপীয় ও ৭০ মিলিয়ন সেনাসদস্য ইতিহাসের এই ভয়াবহতম সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং এসময়ে সেনাবাহিনীর রয়্যাল মেডিকেল কোরের সদস্য হিসাবে কর্মরত ছিলেন। নিজের চোখে দেখা মহাযুদ্ধে মানুষের মৃত্যুর মিছিল গভীর দাগ কাটে তরুণ গবেষক ফ্লেমিংয়ের মনে। চারিদিকে মৃত্যু আর মৃত্যু, মানুষ যেন মানুষের শত্রু। তার চেয়েও বড় শত্রু আহতদের মধ্যে ‘জীবাণু সংক্রমণ’ যা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকরা অনেকটা অসহায় ছিল সেসময়। এটাই ফ্লেমিংকে এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের প্রাথমিক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।

১৯১৮ সালে বিশ্বযুদ্ধ শেষে ফ্লেমিং সেন্ট মেরি হাসপাতালে ইনকুলেশন ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর পদে পুনর্যোগদান করে গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। ১৯২৮ সালের এক স্নিগ্ধ বিকেলে ফ্লেমিং একমাসের অবকাশ যাপন শেষে যখন ল্যাবরেটরিতে ফিরে আসেন তখন এক আশ্চর্য জিনিস দেখেন। তিনি দেখেন তার একটি পরীক্ষা পাত্রে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া স্টেফাইলোকক্কাস এক প্রকার ছত্রাকের আবির্ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তিনি এই ছত্রাকের নাম দেন পেনিসিলিন। পেনিসিলিনের আবিষ্কার সেসময়ের দুরারোগ্য ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগসমূহ থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারবে বুঝেও এর উৎপাদনের স্বল্পতার কারণে বিজ্ঞানী মহল ফ্লেমিংয়ের আবিষ্কার নিয়ে পরবর্তী এক যুগ তেমন একটা গা করেনি।

এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কার ও বাজারজাতকরণের স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার পান এ তিন বিজ্ঞানী

১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড ফ্লোরি (১৮৯৮-১৯৬৮) ও আর্নেস্ট চেইন (১৯০৬-১৯৭৯) এক পরীক্ষার মাধ্যমে পেনিসিলিন বিশুদ্ধকরণ ও ঘনীভবন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে পেনিসিলিনের বাণিজ্যিক উৎপাদনের দ্বার উন্মুক্ত করেন। পরবর্তীকালে ১৯৪৫ সালে এই দুই বিজ্ঞানীর সাথে পেনিসিলিনের আবিষ্কারক স্যার অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। ফ্লোরি ও চেইনের গবেষণার কিছুদিনের মধ্যেই বেজে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। এ মহাযুদ্ধে আহতদের জীবাণু সংক্রমণে মৃত্যু ঠেকাতে পেনিসিলিন বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই কল্যাণকর আবিষ্কারের ফলে অসংখ্য মানুষ প্রাণে বেঁচে ঘরে ফেরেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিপুল ব্যয়ের কারণে ব্রিটেনের জন্য এন্টিবায়োটিক গবেষণা ও উৎপাদনের খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এন্টিবায়োটিকের উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমের বিশ্ববাসীকে এর সুফল দিতে এগিয়ে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উৎপাদনে ব্রিটিশদের ‘ফ্লাস্ক পদ্ধতির’ পরিবর্তে মার্কিনীরা কারখানায় স্থাপন করে ভারী যন্ত্রপাতি। এতে উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যায়।

এন্টিবায়োটিক উৎপাদন কারখানায় ভারী যন্ত্রপাতি


এরপর এন্টিবায়োটিকের ইতিহাস শুধুই এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। আমেরিকার পাশাপাশি ডেনমার্ক, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশে নতুন নতুন এন্টিবায়োটিক গ্রুপ আবিষ্কৃত হয় যা সিফিলিস, গনেরিয়া, অ্যান্থ্রাক্স, গ্যাংগ্রিন, ডিপথেরিয়া, মেনিনজাইটিসসহ অনেক জীবাণুবাহিত রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে।

১৯৪৫ সালে নোবেল পুরস্কার হাতে নিয়ে স্যার অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং বিশ্বকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার প্রকৃতিতে এন্টিবায়োটিক সহনীয় (রেজিস্ট্যান্ট) ক্ষতিকারক অণুজীবের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে যা বুমেরাং হতে পারে। ফ্লেমিংয়ের এই সতর্কবার্তা বর্তমান এন্টিবায়োটিক পরিস্থিতিতে ধ্রুব সত্যে পরিণত হয়েছে। তাই তো আজ আমরা দেখি অনেক রোগীদের ওপর এন্টিবায়োটিক চিকিৎসা কোনো প্রভাব রাখতে পারে না। এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে প্রকৃতিতে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়াও এন্টিবায়োটিকের অতি ব্যবহারে ধ্বংস হয়ে যায়, যার কারণে প্রকারান্তরে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে।

সবশেষে এন্টিবায়োটিক নিয়ে একটা ঘটনা বলি। ভারতের হায়দ্রাবাদে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ওষুধ শিল্প এলাকা অবস্থিত। এখানে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নাকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ এন্টিবায়োটিকের কাঁচামাল উৎপাদন করে। এই অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক উপাদান সংলগ্ন নদীতে গিয়ে মেশে। এতে হায়দ্রাবাদসহ অনেক দূর অঞ্চল পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক সহনীয় জীবাণুর বিস্তার হয়। গবাদিপশু ও পানি বাহিত হয়ে এ জীবাণু অনেক মানুষকে আক্রান্ত করে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, নিজেদের তৈরি ওষুধের চাহিদা বাড়াতে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এরকম করে থাকে। অধিক মুনাফা লাভ করতে এরকম হীন কর্ম পৃথিবীর অনেক জায়গায়ই হয়ে থাকে।

আসুন, আমরা এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করে একে প্রকৃত অর্থে মানব কল্যাণে কাজে লাগাই। তা না হলে স্যার অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের অনন্য আবিষ্কার তার ভাষায় ‘দুর্ঘটনা প্রসূত’ই থেকে যাবে।

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;