বিজয় দিবস বাঙালি জাতির ভাগ্য বদলের দিন

  • আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রাফিক বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক বার্তা২৪.কম

১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল হবার দিন। ২৫ মার্চের কালো রাতের পর থেকে দীর্ঘ নয় মাসের যে সংগ্রাম শুরু হয়; তার সমাপ্তি ঘটে এইদিন। বিশ্বমানচিত্রে বাঙালিদের জন্য স্বীকৃত হয় স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড। বিশেষ এই দিনটি বিজয় দিবস হিসাবে দেশ জুড়ে পালিত হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপন ঘোষণার মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসাবে উদযাপন এবং সরকারি ছুটির কথা উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের নাগরিক মাত্রই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে অধিকার আদায়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের।

নয় মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের সময় তাদের সংখ্যা ছিল ৯১,৬৩৪ জন। জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণের এই ঘটনা পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে নতুন পরিচয় দেয়। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথবাহিনীর প্রধান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। বিশেষ কারণে উপস্থিত ছিলেন না মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী।

বিজ্ঞাপন

আত্মসমর্পণের ভাষ্য
“পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।

এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।”

যৌথবাহিনী প্রধান অরোরার সামনে আত্মসমর্পণ করেন জেনারেল নিয়াজি

১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা। কুচকাওয়াজে উপস্থিত থেকে সালাম গ্রহণ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি। উপস্থিত থাকে বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনতাও। স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকার অদূরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; চলচ্চিত্র, কবিতা, নিবন্ধ এবং গণমাধ্যমে বিষয়টা বিভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়। আয়োজিত হয় বিভিন্ন মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশের প্রধান সড়কগুলো সাজানো হয় জাতীয় পতাকা দিয়ে। আগ্রহী জনতা নিজেদের বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা দোকানেও পতাকা উত্তোলন করে রাখে দিনব্যাপী।

বাংলাদেশের নাগরিক মাত্রই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে দিনটিকে

বিজয় দিবসের বিশেষ কিছু ঘটনা
১৯৭১ সাল: স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নাম বদলে করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
১৯৭২ সাল: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংবিধান প্রকাশিত হয়।
১৯৭২ সাল: ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গ্যাজেটের মাধ্যমে যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৬ সাল: ২৫ বছর পূর্তি উৎসব পালন করা হয়।
২০১৩ সাল: জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লাল এবং সবুজ ব্লক নিয়ে একত্রে জড়ো হয়। রচিত হয় বিশ্বের বৃহত্তম মানব পতাকার নতুন বিশ্ব রেকর্ড।