বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের প্রাপ্তি এবং পরিণতি

  • সানজিদা আমীর ইনিসী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিজেকে প্রথম বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচয় দেওয়া নারী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী

নিজেকে প্রথম বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচয় দেওয়া নারী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী

বীরাঙ্গনা বলতে বোঝায় রণাঙ্গনের বীর নারী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অনেক নারীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা ধর্ষিত হয়।  ১৯৭১ এর ২২ ডিসেম্বর, যুদ্ধ শেষ হবার ছয়দিন পর নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধি দেওয়া হয়।  রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁদের ‘বীরাঙ্গনা’ স্বীকৃতি দিয়ে সেসময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন—“আজ থেকে পাকবাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত মহিলারা সাধারণ মহিলা নয়, তাঁরা এখন থেকে বীরাঙ্গনা খেতাবে ভূষিত।”

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এবং সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দু কেউই পাকিস্তানিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। যুদ্ধাবস্থায় হাজার হাজার নারী গর্ভধারণ করেন, যুদ্ধশিশুর জন্ম হয় এবং গর্ভপাত, আত্মহত্যা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪০ বছর পরে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে ধর্ষণসহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে ১,৫৯৭ জন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে।

বিজ্ঞাপন

পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের দুর্বল হিসেবে দেখত। যুদ্ধের অংশ হিসেবেই তারা বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করে।  তাদের ভাষ্যে, বাঙালি জাতিকে ‘শুদ্ধ’ করতে তারা এই নির্যাতন শুরু করে।  ৮ থেকে ৭৫—প্রায় সব বয়সী নারীদেরই পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হতো। ক্যাম্পে নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হতো, অনেকে নিজেই আত্মহত্যা করত। কেউ কেউ নিজের চুল পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করত ফলে তাঁদের চুল কেটে দিত পাকিস্তানি আর্মিরা।

সেনাবাহিনীর কাছে আটক থাকা ৫৬৩ জন নারী সম্পর্কে টাইম ম্যাগাজিন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়—যখন পাক সেনাদের ক্যাম্প থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয় সকলেই তিন থেকে পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে নৃশংসতার বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।  অনেক নারীর যৌনাঙ্গের মধ্যে বেয়নেট চার্জ করা হতো।

নিজেকে প্রথম বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচয় দেওয়া নারী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী বলেছিলেন, “বীরাঙ্গনা লজ্জার নয়, গর্বের।” ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ওই বিল পাস হয়।

অন্যদিকে, পাক সেনাদের ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া যুদ্ধশিশুদের—কানাডার উদ্যোগে প্রথম দত্তক নেওয়া শুরু হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, সুইডেন এবং অস্ট্রেলিয়া থেকেও যুদ্ধশিশুদের দত্তক নেওয়া হয়। একাত্তরের যুদ্ধশিশুদের বর্তমান অভিভাবকেরা তাঁদের সত্য ইতিহাসটাই জানান। ১৯৭৪ সালের মধ্যেই যুদ্ধশিশুদের অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল।