বৃষ্টিস্নাত জয়পুর-আগ্রার পথে



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

উত্তর ভারত ঘুরে: আমরা আগ্রায় প্রবেশ করি তুমুল বৃষ্টিপাতের মধ্যে। সারা উত্তর ভারতই তখন বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে। মধ্য সেপ্টেম্বরের বর্ষণে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব। বৃষ্টিভেজা সড়ক পথে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে আগ্রায় এসেই মুখোমুখি হলাম প্রবল বর্ষণের।

মধ্যযুগে ভারতের রাজধানী আগ্রা নানা কারণে এখনো গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত মুঘল স্থাপনায় উজ্জ্বল হয়ে আছে প্রাচীন আগ্রা। বাগিচা, প্রাসাদ ও দূ্র্গের নগরীতে ঢুকতেই গা ছমছমে ইতিহাসের পরশ পেলাম।

রাজনৈতিক ও যোগাযোগের দিক থেকে অত্যন্ত কৌশলগত স্থান আগ্রায় প্রবেশের অনেকগুলো পথ রয়েছে। সম্ভবত এ কারণেই মধ্য এশিয়া থেকে আগত মুঘল বিজেতারা দিল্লি জয় করলেও রাজধানী বানিয়েছিলেন আগ্রাকে। আগেকার মুসলিম শাসকদের হাতে গড়া রাজধানী দিল্লিকে ছেড়ে আগ্রায় ক্ষমতার মূলকেন্দ্র ও রাজধানী তৈরির পেছনে অনেকগুলো বিবেচনার মধ্যে আগ্রার কৌশলগত যোগাযোগ সুবিধাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল।

 

আগ্রা থেকে ভারতের সব দিকে যাওয়ার পথ সুগম। সব জায়গা থেকে আগ্রায় আসাও সহজ। উত্তর প্রদেশের অংশ হলেও আগ্রা দিল্লির কাছেই। পাঞ্জাব থেকে সন্নিকটে। রাজস্থান, গুজরাত হয়ে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের দিকেও পথ উন্মুক্ত। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র থেকেও আসা যায় আগ্রায়। আর লক্ষ্ণৌ, আলিগড় হয়ে বিহারের পাটনা হয়ে বাংলায় যাতায়াতের সুবিধাও আগ্রার রয়েছে।

এক সময়ে ভারতের রাজধানী বা এক নম্বর শহর আগ্রা এখন উত্তর প্রদেশের চতুর্থ আর সারা ভারতের ২৪তম গুরুত্বপূর্ণ শহর। উত্তর ভারতের হিন্দি বলয়ের এই শহরের দ্বিতীয় ভাষা উর্দু এবং জনসংখ্যার ৮৫% ভাগ হিন্দু। ১০% মুসলমান আর বাকী জনসংখ্যা জৈন, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত হিন্দি পত্রিকা ‘দৈনিক জাগরণ’র প্রধান দফতর আগ্রায়, যদিও উত্তর ভারতের অন্যান্য শহর থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় একযোগে।

আগ্রাকে বলা যায় উত্তর ভারত বা হিন্দি বলয়ের অন্যতম প্রধান ও প্রাচীন কেন্দ্র। মুঘল স্থাপনা ছাড়াও এখানে আছে ক্যান্টনমেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা। আগ্রার প্রধান দ্রষ্টব্য তাজমহল, আগ্রার দূর্গ ও সম্রাট আকবরের রাজধানী ফতেহপুর সিক্রি ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড হেরিজেট বা বিশ্বসভ্যতার অংশ। এগুলো ছাড়াও ছোট-বড় আরও বহু দর্শনীয় স্থান, বাগ-বাগিচা-উদ্যান ছড়িয়ে আছে আগ্রার সর্বত্র।

ভারতের প্রধান পযটন ডেসটিনেশন বা ভ্রমণ এলাকাকে বলা হয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল বা সোনালি ত্রিভুজ, যার একবাহু দিল্লিতে, আরেক বাহু জয়পুরে এবং অন্য বাহু আগ্রায় মিশেছে। ত্রিভুজের মতো এই তিনটি এলাকাতেই ভারতের সিংহভাগ বিদেশি পযটক ভ্রমণ করেন।

জয়পুর থেকে আসার কারণে আমরা পথে পেয়েছি উত্তর প্রদেশের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যার মধ্যে রয়েছে মথুরা ও বৃন্দাবন। জয়পুর-আগ্রা সুপার হাইওয়ে ধরে রিজার্ভ কারে চলতে চলতে সুবিধা মতো থেমে থেমে এগিয়েছি আমরা। পথের ধারে রাজস্থানী ধাবায় চা, নাস্তা করে দেখেছি ঊষর মরুময় প্রান্তরে সবুজের সমাবেশ। রঙ-বেরঙের শাড়ি ও ওড়নায় ঢাকা রাজস্থানের গ্রাম্য নারীদের। বিশালাকায় পাগড়ি মাথায় রাজস্থানের রাজপুত বা জাট। কখনো ময়ূরের সমাবেশ বা উটের বহর।

গ্রামের দিকে পুরুষদের সবারই বড় পাগড়ি ব্যবহারের রহস্য বুঝতে গিয়ে দেখলাম, এর সঙ্গে ঐতিহ্য ও বাস্তব প্রয়োজন মিশে আছে। রাজস্থানের মরুময় ও ঊষর ভূমি থেকে প্রচুর ধুলাবালি বাতাসে ছড়িয়ে থাকে। বিরাট পাগড়িতে নাক, মুখ, মাথা, শরীর ঢেকে ফেলার সুবিধা নিয়ে থাকেন স্থানীয় অধিবাসীরা।

জয়পুর থেকে আগ্রা যেতে একটি পাহাড়ের ভেতরের সংক্ষিপ্ত ট্যানেল পেরিয়ে ধরতে হয় দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের মাঝ দিয়ে প্রসারিত সুপার হাইওয়ে। ২০০ মাইলের এই দূরত্ব নৈসর্গিক দৃশ্যে ভরপুর। পথের পাশে হাট, বাজার ও ছোট ছোট শহর। আর আছে প্রতিমা ও পুজার মঞ্চ তৈরির কুটির শিল্প। মার্বেল ও গ্রাফাইট পাথর কেটে কেটে বানানো হয় মনোরম প্রতিমূর্তি। যোধপুর, কিষাণগড়, জয়সালমের থেকে আসে বাহারি পাথর।

রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশের সীমানায় হিন্দু তীর্থক্ষেত্র মথুরা ও বৃন্দাবন জয়পুর-আগ্রা সড়কের পাশেই। ফলে পুজার সামগ্রী ও প্রতিমা বানানো আর বিক্রির জমজমাট বাজার চারপাশে। হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগ স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে এই নির্দিষ্ট স্থানে।

সড়কের রাজস্থান অংশ পেরিয়ে উত্তর প্রদেশে ঢুকতেই হিন্দি ভাষা, পোষাক, পরিচ্ছদে পার্থক্য দেখা গেলো। রাজস্থানের হিন্দিতে গুজরাতি, মাড়োয়ারি ও পাঞ্জাবি টান বদলে গেলো। উত্তর প্রদেশের হিন্দিতে পাওয়া গেলো উর্দু আর বিহারি হিন্দির প্রভাব। হিন্দি ভাষার অনেকগুলো উপভাষা ও কথ্যরূপ আছে। যার মধ্যে মৈথিলি, ভোজপুরি, ব্রজবুলি ইত্যাদি অন্যতম। বিশাল উত্তর ভারতের হিন্দি বলয়ে চর্চিত হচ্ছে হিন্দি ভাষার একেকটি ধারা।

মথুরা ও বৃন্দাবনে এক চক্কর দিতে গিয়ে পেলাম পেয়ারিলালকে। অবসর নিয়ে ‘ফৌজি ধাবা’ নামে জলপানির দোকান চালাচ্ছেন তিনি। চাকরি করেছেন কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামেও। ভাঙা ভাঙা বাংলা জানেন। ঢাকা ও বাংলাদেশের অনেক কথা বললেন তিনি।

আমাদের মূল আকর্ষণ যেহেতু আগ্রা, তাই পথের অন্যত্র বেশি সময় দেওয়া যায় নি। এমনিতেই বৃষ্টি পিছু নেওয়ায় গাড়ির গতি কমিয়ে রেখেছে ড্রাইভার সুরজিৎ। এসিতে বসে গাড়ির এফএম রেডিওতে রাজস্থানী কান্ট্রি মিউজিক শুনতে শুনতে চলে এলাম আগ্রার কাছাকাছি। আগ্রার ৩০/৪০ মাইল আগেই পথে পড়লো বিখ্যাত ফতেহপুর সিক্রি। দিল্লি হয়ে এলে মূল আগ্রা শহর আগে পড়তো। আমরা বিপরীত দিক দিয়ে আসায় এ সুবিধা পেলাম। ভোরে রওয়ানা দিয়ে ১০টা নাগাদ ফতেহপুরের সামনে পৌঁছে গেলাম মূল সড়ক থেকে ডানে মোড় দিয়ে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে। যদিও হাইওয়ে থেকে ফতেহপুরের প্রাচীর ঘেরা দূর্গ-সদৃশ্য বিশালাকায় নগরী দেখা যায়, তথাপি এতে প্রবেশ করতে হয় মূল সড়ক থেকে গলি পথ ধরে খানিকটা ভেতরে এসে।

আমরা ঠিক করেছি দুপুরটা এখানে কাটিয়ে বিকেলে যাবো বিশ্বের বিস্ময় তাজমহলে। তারপর রাতে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন অন্যান্য স্থানে। যমুনা তীরে স্থাপিত ইতিহাসের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিময় ঐতিহাসিক আগ্রার বৃষ্টিভেজা বাতাসের স্পর্শে কেমন একটা শিহরণ দোলা দিল শরীর ও মনে। গাড়ি থেমে নামতে সময় লাগলো কিছুটা। তন্ময় চোখে ফতেহপুর সিক্রিতে প্রবেশের অতিকায় ‘বুলন্দ দরওয়াজা’ নামের রাজকীয় তোরণের দিকে তাকাতেই মনে হলো ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছি ইতিহাসের অলিন্দে।

   

সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের রূপকথা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওপাড়ে ঘন বন জঙ্গল, মাঝখানে শিবসা নদী আর এপাড়ে বাঁধের ধারের জমিতে সারিবদ্ধ ঝুলন্ত বাড়ি। জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায় চিত্রা হরিণ, নদীর ডাঙ্গায় দেখা মেলে ভোঁদরের। সবুজভাব নদীতে ডিঙি নৌকায় জীবিকার সন্ধানে মাছ ধরে ঝুলন্ত বাড়ির বাসিন্দা। সবমিলে যেন জল-জঙ্গলের রূপকথা।

দৃশ্যটি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ানের। এখানে জল-জঙ্গলের সঙ্গে মানুষের বসবাস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য ও উপকূ্লের তাণ্ডব সহ্য করা নলিয়ানকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম।

শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এখনকার বাসিন্দারা এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর/ছবি: নূর এ আলম


নিজের বসতভিটা হারানোর পর ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ধারের জমিতে। সেখানেও ঘর বানানোর মতো আর মাটি অবশিষ্ট নেই। ফলে জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর।

এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে/ছবি: নূর এ আলম


তাই এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে। মোটামুটি মাঝারি ঝড় হলেই ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে। সুন্দরবনে জেলেরা দিনে রাতে মাছ ধরে, তারা দিন-রাতের হিসাব করে না।

 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরছেন জেলে/ছবি: নূর এ আলম


 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরেন তারা। কিনারা দিয়ে কাদায় হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


এরপরও নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে। অনেক জেলে ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন।

জেলেরা ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন/ছবি: নূর এ আলম


বর্ষায় শিবসার জলে ডুবে থাকা নলিয়ানের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার জন্য এই ডিঙি নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

শিবসা নদী/নূর এ আলম


নলিয়ানে উপকূলের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা চিত্র শুধু নয়, রয়েছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক প্রকৃতি। শিবসার অপার সৌন্দর্য।

গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি/ছবি: নূর এ আলম


নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। যাতে চোখ জুড়িয়ে আসে।

হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ/ছবি: নূর এ আলম


যেখানে রয়েছে হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি, ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। 

নলিয়ান পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গলের ভেতরে লোহার ব্রিজ/ছবি: নূর এ আলম


পর্যটকদের জন্য জঙ্গল ভেদ করে তৈরি করা লোহার ব্রিজ। পর্যটকরা সুন্দরবনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে এই ব্রিজে হেলেন দিয়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে নেয়।

জঙ্গলে হরিণ খুনশুটিতে ব্যস্ত/ছবি: নূর এ আলম


সুন্দরবনের প্যাঁচেপ্যাঁচে কাঁদায় হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা মিলে হরিণের দলের সঙ্গে। জঙ্গলে তারা তখন নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মায়াবী চোখে তাকিয়ে হরিণ/ছবি: নূর এ আলম


এরই ফাঁকে মায়াবী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে দু’পা বিশিষ্ট মানুষের দিকে। আড় চোখে তাকায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা বানরের দলও। তারা সারাদিন বনে দৌড়ঝাঁপ করে।

বানরের দৌঁড়ঝাপ/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে।

নদীর তীরে দেখা মেলে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী ভোঁদরের/ছবি: নূর এ আলম


জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়।

 শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে। জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়/ছবি: নূর এ আলম

বড় বড় ঘূর্ণিঝড় যারা মোকাবিলা করা নলিয়ানের কাছে কুমির আর এমন কি! সব কিছু তোয়াক্কা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয় তাদের কাছে!

;

ইতিহাসে ২৮ মার্চ: বর্ণবাদের প্রতিবাদে কিংয়ের পক্ষে ২৫ হাজার মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব ইতিহাস আমাদের অতীতের কথা বলে। আজ যা কিছু বর্তমান তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আমাদের অতীতের কারণেই। সেই অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।  

আজ ২৮ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখঅ যাবে, আজকে ঘটেছিল নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। জেনে নেয়া যাক, কি ঘটেছিল আজকের তারিখে!

*মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদের বিপরীত আন্দোলনকারী আফ্রিকান নেতা। ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন করে মিছিলে নেমেছিলেন আজকের তারিখে। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আলাবামায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার তৈরিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।    

*যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৭৯ সালে পানির পাম্প ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে চারপাশে তেজস্ক্রিয় বাষ্প এবং আয়োডিন ছড়াতে শুরু করে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৫০০ জন কর্মী এই বাষোপর সংস্পর্শে আসায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কায় ছিল। আমেরিকার জনগণ এই ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  

*১৯৮৬ সালে অ্যাচেসন এবং লিলিয়েনথাল পারমারবিক শক্তি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন তারা। ২৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের সেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

*হিলসবোরো দুর্ঘটনায় প্রায় ১শ লোকের প্রায় গিয়েছিল ১৯৯১ সালে। শেফিল্ডে পিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল ফুটবল সমর্থক নিহত হন। এছাড়া আরও দেড় শতাধিক ভক্ত আহত হন। এই বিপর্যয়ে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ছিল নিহতদের পরিবার। তাই, আজকের তারিখে তারা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল।

*১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ২৮ মার্চ শেষ হয়েছিল।

;

তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। যা দেখে মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের কবিতা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ বলছি বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে গ্রামটি তাল পাখার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারী-পুরুষ সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গরমে তালপাতার পাখার বাতাস গা জুড়িয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন, অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটি পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামে একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে নারীরা তৈরি করেন হাতলপাখা বা ডাঁটপাখা। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয় ঘোরানো পাখা বা ঘুন্নী পাখা আর পকেট পাখা। পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারী

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং তুলির আঁচড়ে ঘুরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রাঙানো পাখা বাঁধায় করছেন গোলজার। বাঁধা হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে পাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় এই দুই গ্রামের মানুষ তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।

আড়োলা গ্রামের খন্দকার বলেন, দাদার আমল থেকে তারা তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আচর দিয়ে তাল পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন। আকরাম আকন্দ বলেন, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে গত বছর দুই গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বাড়ায় ২০ লাখ পাখা বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরিতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। পাখা তৈরির পর বিভিন্ন রঙের আচর দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১০ টাকায় কেনা তাল গাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয় বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতার পাখা

পাখা তৈরির কারিগর জানান, বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ করে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখাগুলো বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে জানান মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, একটি তাল পাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়ে গেছে।

আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি হাত পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন। এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন নিজের টাকায়।

পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম জানান। শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-গরিব সবাই হাত পাখার ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

;

ইতিহাসে ২৭ মার্চ:স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

  • Font increase
  • Font Decrease

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে বছরের পর বছর কেটে যায়। বর্তমান হয় অতীত। তার সাথেই তৈরি হয় ইতিহাসের। মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া ইতিহাস হয়ে থাকে জাতির কাছে স্মরণীয়। প্রতি বছর যখন ক্যালেন্ডারে একই তারিখগুলো ফিরে আসে, মানুষ পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে।

আজ ২৭ মার্চ, ২০২৪। বিগত বছরগুলোতে এই তারিখে ঘটা অনেক ঘটনা হয়েছে স্মৃতিতে অমলিন। ইতিহাসের পাতায় জুড়ে গেছে নতুন নতুন ঘটনা। চলুন জেনে নিই,আজকের তারিখে কি ঘটেছিল!    

১৯৭৭ সালে স্পেনে টেনেরিফ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ডাচ এয়ারলাইনের সেই দুর্ঘটনায় কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রানওয়েতে দু’টো জেট বিমানের সংঘর্ষে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে উৎপন্ন বিধ্বংসী দাবানলে সর্বমোট ৫৮৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৮০ সালে উত্তর সাগরের প্ল্যাটফর্ম ধসে পড়ে। রিগটি ডান্ডি থেকে ২৩৫ মাইল পূর্বে সেই আবাসন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনায় ১২৩ জন শ্রমিক মারা যান।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে কমিউনিটি পার্টির অনেক রাশিয়ান উচ্চতর কর্মকর্তা পরাজিত হন। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনাকে একটি বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।     

১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে রেললাইন কম ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মোট রেলব্যবস্থার এক-চতুর্থাংশ সেবা কমিয়ে দেওয়া হবে। এই নিয়ে সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

;