মীনা কার্টুন : নেপথ্যে সার্কের কন্যাশিশু দশকের ব্র্যান্ডিং

  • সানজিদা আমীর ইনিসী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মীনা কার্টুনের একটি দৃশ্য

মীনা কার্টুনের একটি দৃশ্য

“আমি বাবা মায়ের শত আদরের মেয়ে”—এই গান শুনলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে গোলাপি স্কার্ট পরা নয়দশ বছরের এক মেয়ের ছবি। যাকে আমরা সবাই চিনি। কিন্তু কেন ও কিভাবে শুরু হলো মীনা কার্টুন? আসুন জেনে নেওয়া যাক।

দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান ও মালদ্বীপ নব্বই দশককে কন্যাশিশু দশক ঘোষণা করেছিল। সব ধরনের মৌলিক অধিকারের দিক থেকে এসব অঞ্চলের মেয়েরা তখন বেশ পিছিয়ে ছিল। তবে শুধু কন্যাশিশু দশক ঘোষণা করেই তো কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব না, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়াও সহজ কাজ ছিল না।

বিজ্ঞাপন

কী আর করা! দ্বারস্থ হতে হলো ইউনিসেফের। চাওয়া হলো এমন অ্যানিমেটেড কার্টুন বা কমিক্স চরিত্র, যার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা সম্ভব। কথা হচ্ছে, হুট করে সবার মাথায় অ্যানিমেটেড চরিত্রই কেন আসলো? মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কিভাবে এই কাল্পনিক চরিত্র কাজ করবে বলে তারা ধারণা করছিল?

মীনা কার্টুনের উদ্যোগ গ্রহণ করে সার্ক

নব্বইয়ের দশকে সাবেক চেকোস্লোভাকিয়াতে সমাজ পরিবর্তনে অ্যানিমেটেড ফিল্ম দারুণ ভূমিকা রেখেছিল। তৎকালীন ইউনিসেফের অনুষ্ঠান ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধান নিল ম্যাককির মাথায় তখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্যেও একই আইডিয়া ঘুরছিল।

বিজ্ঞাপন

মীনা চরিত্র রূপায়ণে সাহায্য নেওয়া হয় শিল্পী মোস্তফা মনোয়ারের। তখন তিনি ‘মনের কথা’ নামে একটি পাপেট শো করতেন। মনের কথার পারুল চরিত্রটিও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বাংলাদেশ থেকে মীনা চরিত্র গঠনে কাজ করেন মোস্তফা মনোয়ার।

শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার ও পারুল

কেন্দ্রীয় চরিত্র মানে মীনার নাম খুঁজে পেতেও কম খাটুনি হয়নি। সাতটি দেশে এই কার্টুন প্রচারিত হবে, তাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য—এমন নামের দরকার পড়েছিল। সেই বিবেচনা থেকেই মীনা নামটি গৃহীত হয়। ভারত, শ্রীলংকায় ‘মীনাক্ষী’ নামটি প্রচলিত, আবার ‘আমিনা’ নামের সাথে মিল থাকায় এ নাম নিয়ে আপত্তি ছিল না পাকিস্তানেরও। সিন্ধি ভাষায় মীনা শব্দের অর্থ আলো।

হান্না-বারবারা স্টুডিওতে মীনার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই স্টুডিও অ্যানিমেশন ফিল্ম নির্মাণের জন্য বিখ্যাত ছিল। মীনার প্রথম কিছু পর্ব এখানে নির্মিত হয়। পরে ভারতের রাম মোহন স্টুডিওতে বাকি পর্বগুলি তৈরি হয়। পরিচালনা করেন রাম মোহন নিজেই।

আমৃত্যু মীনা কার্টুন পরিচালনা করেন রাম মোহন

মীনার প্রথম পর্বের পাণ্ডুলিপি র‍্যাচেল কার্নেগির। প্রথম মীনা কার্টুন সম্প্রচার করা হয় ১৯৯২ সালে। প্রথম পর্ব ছিল ‘সব মুরগি আছে’। প্রথম পর্ব প্রচারের পরই মীনা দর্শক নন্দিত হয়ে যায়।

প্রথম দিকের পর্বগুলোতে মীনার হয়ে কণ্ঠ দিয়েছিল ভারতের রাজশ্রী নাথ। তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী এবং হিন্দি ভাষায় ডাবিং করা হ্যারি পটারসহ বিভিন্ন ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। মিঠুর কণ্ঠটি দিয়েছিলেন চেতন শশীতল। এখন অন্যরা দিচ্ছেন।

বাংলাদেশে মীনা কার্টুনে মীনার কণ্ঠ প্রমিতা গাঙ্গুলীর। ফারজানা ইসলাম তিথিও মাঝেমধ্যে কণ্ঠ দিয়ে থাকেন। আবরার সাজিদ পাশা দিচ্ছেন রাজুর কণ্ঠ। আর মিঠুর কণ্ঠ দেন কামাল আহসান বিপুল।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল মীনা। বর্তমানে এর মান কমে গেছে বলে অনেকে মনে করেন। আগের মতো কাহিনীর চমক, আনন্দঘন পরিবেশ নেই, শুধুই শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু নির্ভর এথিক্যাল টুল নির্মিত হচ্ছে বলে মীনাভক্তদের অভিযোগ।

২৪ সেপ্টেম্বরকে মীনা দিবস ঘোষণা দেওয়া হয় ১৯৯৮ সালে। বাংলাসহ মোট ২৯টি ভাষায় রচিত হয়েছে মীনা। আরবিতেও মীনা ডাবিং হয়েছিল। এখন পর্যন্ত মীনার মোট ৩৭টি পর্ব। ২৩টি কমিক বইও বের হয়েছে মীনার।