রেকর্ড ছাড়িয়ে এইডস, শনাক্তের বাইরে ৩৭ শতাংশ
চলতি বছর দেশে এইচআইভি (এইডস) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পূর্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রোগীর শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। শনাক্তের ৭৭ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় আছে।
এর আগে, কোনো বছর দেশে এত রোগী শনাক্তের ঘটনা ঘটেনি। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩০ জনের। গতবছর দেশে এই ভাইরাসে ২৩২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত আনুমানিক সাড়ে ১৪ হাজার রোগী রয়েছেন। এসব রোগীর ৩৭ শতাংশ এখনও শনাক্তের বাইরে। আর চিকিৎসার বাইরে রয়েছে ২৩ শতাংশ রোগী। এখন পর্যন্ত এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৭৬১ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮ জনের। মৃত্যুর হার ১৮.১৩ শতাংশ। বিশ্বে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ এর মধ্যে। বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।
এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শরীরে প্রাথমিকভাবে কোনো লক্ষণ থাকে না। ধীরে ধীরে সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। পরবর্তীতে পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি শনাক্ত হয়। এই ভাইরাসের কারণে যে রোগটি হয়, তা হলো অ্যাকোয়ার্ড ইমিউন ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম, যা সংক্ষেপে এইডস নামে পরিচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম। তবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই ঘৃণার চোখে দেখে বলে আক্রান্ত ব্যক্তি রোগের কথা গোপন রাখে। ফলে সহজে রোগ ছড়ায়।
ইউএনএফপি বাংলাদেশের মতে, বাংলাদেশে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব কম হলেও এর সংক্রমণ বেড়ে চলছে। এই ভাইরাস সম্পর্কে কম সচেতনতা, রোগ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা ও কনডম ব্যবহারের কম প্রবণতার কারণে এই ভাইরাস সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা যৌন সম্পর্কিত এই ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। অপর্যাপ্ত জ্ঞান, অবাধ-অরক্ষিত যৌনতা, মাদক সেবনের কারণে এইচআইভি এবং এসটিআই-এর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এখনো বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরি হয়নি। বাংলাদেশের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এইডস শনাক্তের জন্য সারাদেশে ২৭টি কেন্দ্র রয়েছে এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় ১১টি কেন্দ্র থেকে। যা শুধু প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে গত (১২ ডিসেম্বর) এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল ফান্ড’ থেকে ৮ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার অনুদান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. বিকাশ কুমার সরকার বলেন, আমাদের এখানে সীমিত পরিসরে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদি ও উচ্চতর চিকিৎসার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. মোহাম্মদ শাখাওয়াৎ হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এইচআইভি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। অবাধ যৌন সম্পর্কসহ বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। এ রোগ সম্পর্কে রোগীদের মাঝে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মানুষ সচেতন হলে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।