ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ নিয়ে ইসরায়েলসহ ফিলিস্তিন, হামাস, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত'র (আইসিসি) এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েলের মন্ত্রীরা অন্যদিকে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনিসহ মধ্যপ্রাচ্য।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়
নেতানিয়াহুর কার্যালয় আইসিসির এমন সিদ্ধান্তকে ইহুদিবিরোধী বলে অভিহিত করেছে। তাঁর দপ্তর জানায়, ইসরায়েল এমন সিদ্ধান্তকে ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইসিসির এমন সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ও মিথ্যা পদক্ষেপ বলছে দপ্তরটি।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ
"সিদ্ধান্তটি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার উপর সন্ত্রাসবাদ এবং খারাপের দিকটি চিন্তা করেছে। আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থাকে নিজেই হামাসের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মানব ঢালে পরিণত করেছে"- বলছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার বলেছেন, "আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এমন সিদ্ধান্ত একটি অন্ধকার মুহূর্তের সংকেত দিচ্ছে। এর মাধ্যমে আদালত সমস্ত বৈধতা হারিয়েছে এবং কর্তৃত্ব ছাড়াই অযৌক্তিক আদে জারি করেছে।"
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড
এই সিদ্ধান্তকে সন্ত্রাসবাদীদের জন্য একটি পুরস্কার বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড। তিনি বলেছেন, "ইসরায়েল আমাদের নাগরিকদের ওপর হামলা, খুন ও ধর্ষণকারী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে জীবন রক্ষা করেছে মাত্র। এই গ্রেফতারি পরোয়ানাগুলো সন্ত্রাসবাদের জন্য একটি পুরস্কার।"
ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট
"আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা ইসরায়েলের নেতাদের জন্য নয় বরং আইসিসি এবং এর সদস্যদের জন্য লজ্জার চিহ্ন।"
ইসরায়েলের নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির
"এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আবারও দেখালো এটি ইহুদি বিরোধী।"
হামাসের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি
হামাস এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। গোষ্ঠীটি বলছে, "আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে আহ্বান জানাই সব অপরাধী দখলদার নেতাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক।"
হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা বাসেম নাইম
"এটি ন্যায়বিচারের পথে এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার আনার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এটিতে সব দেশের স্বীকৃতি না মিললে পদক্ষেপটি ভুল প্রমাণিত হবে।"
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, "আদালত একটি বিপজ্জনক রসিকতার জায়গা। এখন সময় এসেছে মার্কিন সিনেটের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন সংস্থাটিকে কাজ করার এবং অনুমোদন করার।"
ইউরোপ ইউনিয়ন (ইইউ)
ইইউ'র পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আইসিসির পরোয়ানা রাজনৈতিক নয় এবং আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান ও বাস্তবায়ন করা উচিত।
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্পকে বলেছেন, নেদারল্যান্ডস নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করতে প্রস্তুত রয়েছে। ডাচ মাটি স্পর্শ করলেই (নেদারল্যান্ডসে আসলেই) তাঁকে গ্রেফতার করা হবে।
ফ্রান্স
ওয়ারেন্টের বিষয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আইসিসির বিধি অনুসারেই হবে। তবে তিনি ফ্রান্স এলে তাকে গ্রেফতার করা হবে কি না সেটা নিশ্চিত নয়। কারণ এখানে আইনগত জটিলতা রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, "আইসিসির রায়কে সম্মান করা উচিত এবং তা বাস্তবায়ন করা উচিত। ফিলিস্তিনিরা ন্যায়বিচার পাওয়ার যোগ্য।"