হিমালয় গলে ভয়াল প্লাবনের পূর্বাভাস
হিমালয়ের ৫ সহস্রাধিক হ্রদ প্লাবিত হতে পারে যে কোনো সময়। হিমালয়ের বরফ গলে যে অতিরিক্ত পানি হবে, তাতেই ভেসে যেতে পারে হিমালয়ের কোলে ঘুমন্ত জনপদ এবং হিমালয়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসা নদীগুলো।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (পিনাস)-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য দিয়েছে ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যান্টার্কটিক অ্যান্ড ওশান রিসার্চ’ (এনসিএওআর)।
জার্মানির পোস্টড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক জর্জ ভেহ্ ও অলিভার কোরুপ এই গবেষণায় কাজ করেছেন। তারা বলছেন, হিমালয়ের পূর্ব অংশে ভয়াল বন্যার আশঙ্কা অনেক বেশি। এর আওতায় রয়েছে ভারতের সিকিমসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি অঞ্চল।
শিল্পযুগের পর থেকে পৃথিবী উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে উষ্ণায়ন। এর পেছনে যে রয়েছে পরিবেশ দূষণ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সবশেষ গত কয়েক দশকজুড়েই উত্তর মেরু এবং হিমালয়ের পর্বতমালার গ্লেসিয়ার বা হিমবাহগুলো গলতে শুরু করেছে। হিমবাহের বরফ গলা জলের স্রোত হিমালয়ের কোলে ওই প্রাকৃতিক হ্রদগুলো তৈরি করেছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে হিমালয়ের বরফ এত দ্রুত গলতে শুরু করেছে যে, তাতে প্রাকৃতিক হ্রদগুলো বিশাল আকার ধারণ করছে। দিন দিন এসব হ্রদের গভীরতাও বেশ। ২০০৩ থেকে ২০১০ সালে সিকিমে ৮৫টি হ্রদ হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, উষ্ণায়নের ফলে যেভাবে বরফ গলতে শুরু করেছে, তাতে হ্রদের চারপাশের দেওয়াল চাপ সামলাতে পারছে না। এ কারণে মাটি ও নুড়ি-পাথরের দেওয়ালগুলি ভেসে যেতে পারে। একে বলা হয়, ‘মোরেন’
বিজ্ঞানী আরিয়েন ভাল্জ আশঙ্কা করছেন, এ দশকেই ‘গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড’ হতে পারে। এর মানে হচ্ছে, হিমালয়ের একটি বড় অংশে হতে চলেছে ভয়াল বন্যা।
‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যান্টার্কটিক অ্যান্ড ওশান রিসার্চ’ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে হিমালয়ের বরফ গলে গেলে কী হবে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। হিমবাহগুলির সৃষ্টিতত্ত্বের মডেলগুলো কম্পিউটারে সিম্যুলেশন করে এবং উপগ্রহ থেকে পাঠানো বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
হিমালয়ের গভীর হ্রদগুলোতে বরফ গলা পানির পরিমাণ বেশি। তাই এসব হ্রদগুলো ভেসে গিয়ে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন মূল গবেষক জর্জ ভেহ্।