করোনা পরবর্তী সময়ে কওমি মাদরাসার জন্য কিছু প্রস্তাব

  • আবুল ফাতাহ কাসেমী, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কওমি মাদরাসার পরীক্ষা চলছে, পুরোনো ছবি

কওমি মাদরাসার পরীক্ষা চলছে, পুরোনো ছবি

করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবী। এখনও লকডাউন কাটেনি পৃথিবীর অনেক দেশে। অনেক দেশ আবার শুরু থেকেই লকডাউনের একপেশে নীতি অবলম্বন করে। করানোর লাকডাউনে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত বাংলাদেশের কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যহত হয়। ধীরে ধীরে কওমি মাদরাসাগুলো খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে হেফজ ও নুরানি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। আমা করা হচ্ছে, কিতাব বিভাগগুলোও দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু হবে।

ইতোপূর্বে যেহেতু এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়নি, তাই নতুন পরিস্থিতিতে কওমি মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বিশেষ চিন্তা করতে হবে। সঙ্গত কারণে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে শিক্ষা কার্যক্রমে। তাই এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হলো।

বিজ্ঞাপন

কেমন হবে এবারের শিক্ষাবর্ষ?
সাধারণত কওমি মাদরাসার শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় ১০ শাওয়াল, শেষ হয় ১৪ শাবান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে মহররম থেকে। যা নিয়মিত সময়ের প্রায় দু’মাস বিশ দিন পর। তাই আমাদেরকে দু’টি বিষয়ের প্রতি সর্বাত্মক গুরুত্ব দিতে হবে।

১. সেশনজট বাঁধতে না দেওয়া। অর্থাৎ শিক্ষাবর্ষ শুরুর স্বাভাবিক সময়ের (১০ শাওয়াল ১৪৪২ হিজরি) মতোই এ শিক্ষাবর্ষের সব কাজ শেষ করা। ভেবেচিন্তে কাজ করলে তা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

২. কোনো পাঠ্যপুস্তক স্থগিত না করে এবং কোনো পাঠ্যপুস্তকের নির্ধারিত পাঠ্যের পরিমাণ না কমিয়ে স্বাভাবিক সিলেবাস শেষ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। এক্ষেত্রে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিশেষ ছোট ও প্রাইভেট মাদরাসায় তা বাস্তবায়ন করা কষ্টকর হবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সমন্বয় করলে পরিকল্পনা হতে পারে এমন-

১. এবারের প্রথম পার্বিক ও দ্বিতীয় পার্বিক পরীক্ষা ও নিয়মিত সব ছুটি বাতিল করা। প্রতিটি সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ক্লাস ঐচ্ছিকভাবে বন্ধ থাকে ১ সপ্তাহ। পরীক্ষা হয় ১ সপ্তাহের বেশি সময়, পরীক্ষা পরবর্তী বন্ধ থাকে ১ সপ্তাহ। সবমিলিয়ে দুই পরীক্ষায় ক্লাস বন্ধ থাকছে মোট ৮ সপ্তহ অর্থাৎ প্রায় দুই মাস। সুতরাং এই পরীক্ষাগুলো বাতিল করলে অনায়েসে ক্লাসের জন্য ২ মাস সময় বের হয়ে আসছে।

২. ছাত্রদের মানসিক ও পড়াশোনার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যদি পরীক্ষা নিতেই হয়, তাহলে কেবল দু’টি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়পন্থা গ্রহণ করলে বার্ষিক পরীক্ষার আগে একটি পরীক্ষা রবিউল আওয়ালের শেষ দিকে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার (খেয়ার) প্রস্তুতির সময় কমিয়ে এখন থেকেই সাপ্তাহিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

৩. বার্ষিক পরীক্ষায় বালক মাদরাসাগুলো অংশগ্রহণ করবে (সাম্ভাব্য) ২১ শাবান থেকে ২৮ শাবান। আর বালিকা মাদরাসাগুলো ১০ রমজান থেকে ১৮ রমজান। বার্ষিক পরীক্ষা কিছুটা পেছানো হলে ক্লাসের জন্য আরও কয়েকটা দিন বেরিয়ে আসছে। এতে ক্লাসের মোট দিন ও সংখ্যা ঠিক থাকবে; যদিও বছর শুরু হচ্ছে ২ মাস ২০ দিন পর। তাই বাড়তি আর কোনো চাপ নেওয়ার বা নেসাব খাঁটো করার, ক্লাসের লেকচার (তাকরির) কম করার কোনো প্রয়োজন পড়বে না। অন্যান্য বছরের মতো স্বাভাবিক গতিতেই, স্বাভাবিক পরিমাণেই পথচলা যাবে।

৪. পড়ালেখায় গতি ফিরিয়ে আনতে প্রতি চার সপ্তাহ ক্লাসের পর বৃহস্পতিবার ক্লাস বন্ধ রাখা এবং শনিবার প্রতিটি ক্লাসের নির্ধারিত সময়ের প্রথম ২৫ মিনিট ৩০ নম্বরের মাসিক পরীক্ষা নেওয়া এবং পরের ১৫ মিনিটে নতুন সবক প্রদান করা। প্রতিটি বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষা ৭০ নম্বরের নিয়ে মাসিক পরীক্ষাগুলোর প্রাপ্ত গড় নম্বর তাতে যোগ করে বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রদান করা।

৫. জুমাবারের সাপ্তাহিক ছুটি অব্যাহত রাখা। ব্যক্তিগত বিভিন্ন প্রয়োজনে, একঘেয়েমি ও ক্লান্তি দূর করার জন্য সাপ্তাহিক ছুটি চালু রাখার কোনো বিকল্প নেই।

৬. বেফাকসহ অন্য বোর্ড এবং হাইয়াতুল উলইয়ার পরীক্ষা এ মাসেই প্রতি শুক্রবার নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করা। এতে কোনো পেরেশানি হবে না। কারণ, বেফাক ও হাইয়ার পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্নের পরই লকডাউন শুরু হয়। সে হিসেবে বরা চলে, তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আর জাতীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য লোকবল বাড়িয়ে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

৭. এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, দীর্ঘ লকডাউনের ফলে নীতি-নৈতিকতার ধারক-বাহক কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্নরকম কাজে জড়িয়ে গেছে। বিশেষত মোবাইল ফোন আসক্তি বেড়েছে। যা ছাত্রদের জন্য চরম পর্যায়ের ক্ষতির কারণ। এ বিষয়ে মাদরাসার পরিচালকদের জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। সেই সঙ্গে বেশি বেশি তারবিয়তি জলসার আয়োজন করা যেতে পারে। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, তারবিয়তি জলসা ছাত্রদের মানসিকতায় বেশ প্রভাব ফেলে।

সর্বোপরি বেশি বেশি দোয়া আর খতমে খাজেগানের আমল করা। আল্লাহতায়ালা আমাদের সহায় হোন।

আবুল ফাতাহ কাসেমী: উস্তাদ, জামিয়া কারিমিয়া আরাবিয়া রামপুরা, ঢাকা।