যাদের দোয়া আল্লাহতায়ালা ফিরিয়ে দেন না
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো।’ -সূরা মুমিন: ৬০
আরবি দোয়া শব্দের অর্থ ডাকা, আহ্বান করা, প্রার্থনা করা, কোনো কিছু চাওয়া ইত্যাদি।
দোয়ার মাধ্যমে বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে খুব সহজেই সমর্পণ করতে পারেন। দোয়া মুমিনদের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। এমনকি দোয়ার ফলে ভাগ্যও ঘুরে যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ –সুনানে তিরমিজি: ২১৩৯
দোয়া সব ইবাদতের মূল। দোয়ার তাৎপর্য সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম ইবাদত হলো দোয়া।’ -মুসতাদরাক আল হাকেম: ১৭৬০
অন্য হাদিসে এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে বেশি মর্যাদাময় আর কোনো আমল নেই।’ –সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭০
মানুষের কাছে কিছু চাইলে মানুষ বিরক্ত হয়। আর আল্লাহর কাছে না চাইলে আল্লাহ রাগ হন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ হন।’ –সুনানে তিরমিজি: ৩২৯৫
যে দোয়া করতে অলসতা করে তার সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে হতভাগ্য মানুষ হলো সে, যে দোয়া করতে অলসতা করে।’ –তাবারানি: ৬০
আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করার জন্য সবসময় প্রস্তুত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূল! যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দিন- আমি বান্দার খুব কাছেই আছি। সে যখনই আমার কাছে দোয়া করে, আমি তার দোয়া কবুল করি।’ -সূরা বাকারা: ১৮৬
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রভু খুবই লজ্জাশীল। বান্দা যখন দোয়ার জন্য হাত উঠায়, সে হাত খালি ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ লজ্জা পান।’ –সুনানে আবু দাউদ: ৩৩৭০
দোয়া কবুলের অনেক শর্ত আছে। এখানে বিশেষ কিছু শর্ত তুলে ধরা হলো। আল্লাহর উদ্দেশে একমাত্র তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য খালেস দিলে দোয়া করা। সুন্নত তরিকা মেনে দোয়া করা। দোয়ায় অসৎ উদ্দেশ্য না থাকা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার আবেদন না করা। দোয়াকারীর খাবার ও পোশাক হালাল উপার্জনের হওয়া।
দোয়ায় আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহতায়ালা চান বান্দা তার কাছে দোয়া করুক। আল্লাহ বান্দার মনোবাঞ্ছা পূরণে উন্মুখ থাকেন। তবে সে দোয়ার সঙ্গে পবিত্রতার সম্পর্ক থাকতে হবে। বান্দার কোনো অপবিত্র দোয়া আল্লাহর কাছে কাম্য নয়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ পূতপবিত্র এবং তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবুল করেন। আর আল্লাহ মুমিনদের ওই বিষয়েরই হুকুম দিয়েছেন, নবী-রাসূলদের তিনি যে বিষয়গুলো সম্পর্কে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং নেক কাজ করুন। তিনি বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমরা পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি। তারপর হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফর করেছে, তার মাথার কেশ অবিন্যস্ত, শরীরও ধূলিমলিন। সে আকাশের দিকে হাত উঠিয়ে বলছে, হে আমার রব! হে আমার রব! কিন্তু তার আহার্য হচ্ছে হারাম, পানীয় হারাম, পোশাকও হারাম। হারাম খেয়েই তার বয়োবৃদ্ধি ঘটেছে। তাই তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে? –সহিহ মুসলিম
কোন কোন বান্দার দোয়া কবুল হয় এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণনা পাওয়া যায়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ‘পাঁচটি দোয়া রয়েছে, যেগুলো কবুল হয়- ১. মজলুমের দোয়া, যে পর্যন্ত সে প্রতিশোধ গ্রহণ না করে, ২. হাজীর দোয়া, যে পর্যন্ত সে বাড়িতে ফিরে না আসে, ৩. আল্লাহর পথের মুজাহিদের দোয়া, যে পর্যন্ত সে জিহাদ থেকে বসে না পড়ে, ৪. অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া, যে পর্যন্ত সে সেরে না ওঠে ও ৫. কোনো মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে অন্য মুসলমান ভাইয়ের দোয়া। তারপর তিনি বললেন, এগুলোর মধ্যে আবার সবচেয়ে দ্রুত কবুল হয় কোনো মুসলমান ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে কৃত দোয়াটি।’ -বায়হাকি
এ হাদিসে এক মুসলমান যাতে অন্য মুসলমানের অনুপস্থিতিতে দোয়া করে সে ব্যাপারে উৎসাহ জোগানো হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনও ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. রোজাদার যখন ইফতার করে, ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া ও ৩. মজলুমের দোয়া। মজলুম ব্যক্তির দোয়াকে আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এজন্য আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয়।’ –সুনানে তিরমিজি