‘আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে, মাদরাসার পরিস্থিতি শান্ত’

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে, মাদরাসার পরিস্থিতি শান্ত, ছবি: সংগৃহীত

আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে, মাদরাসার পরিস্থিতি শান্ত, ছবি: সংগৃহীত

শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহমাতুল্লাহি আলাইহির মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে এবং হাটহাজারী মাদরাসার পরিস্থিতি শান্ত ও সুশৃঙ্খল বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।

সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে বলা হয়, হাটহাজারী মাদরাসার সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল। নিয়মিতভাবে ক্লাশ চলছে, আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়ার পরীক্ষাও সুন্দরভাবে চলছে।

ছাত্র আন্দোলনে মাদরাসার কোনো উস্তাদ এবং বাহিরের কোনো সংগঠন ও ব্যক্তির উসকানি ছিলো না বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আল্লামা শফীর মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করা নির্জলা মিথ্যাচার বৈ কিছুই নয়। কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে নিজেদের হীনস্বার্থ উদ্ধারে আল্লামা শফীর লাশ নিয়ে রাজনীতি করা এবং কওমি অঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না।

বিজ্ঞাপন

হাটহাজারী মাদরাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা আরও বলেন, আল্লামা শফী স্বজ্ঞানে-স্বেচ্ছায় হাটহাজারী মাদরাসা শুরা কমিটির হাতে দায়িত্ব সোপর্দ করে গেছেন। তার ইন্তেকালও স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। আল্লামা শফীর অসিয়ত অনুযায়ী অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে মাদরাসার বায়তুল আতিক জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আমরা তার ইন্তিকালে অত্যন্ত মর্মাহত ও শোকাহত।

আল্লামা শফীর মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর দোয়া চেয়ে হাটহাজারী মাদরাসার ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখতে অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও মাদরাসার উন্নয়ন ও সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শিক্ষকরা।

বিবৃতিদাতারা হলেন- মাদরাসা পরিচালনা কমিটির প্রধান মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী, সদস্য মাওলানা শেখ আহমদ এবং মাওলানা ইয়াহিয়া, প্রধান শায়খুল হাদিস এবং শিক্ষাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, সহকারী শিক্ষাসচিব মাওলানা শুয়াইব, মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা কবির আহমদ, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা আহমদ দিদার কাসেমী ও মাওলানা ফোরকান আহমদ প্রমুখ।

গণমাধ্যমে সম্মিলিত বিবৃতি পাঠানোর আগে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় হাটহাজারী মাদরাসার সকল উস্তাদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মাদরাসার জ্যেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফতি ও শিক্ষকগণ লাইভ ভিডিওতে আল্লামা শফীর স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে বলেন, যারা তার ইন্তেকালের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাচ্ছেন, তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এমন অভিযোগ তুলছেন। তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

উল্লেখ্য, ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে মহাপরিচালকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ান আল্লামা শফী। এর আগের দিন তার ছেলে মাওলানা আনাস মাদানিকে মাদরাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় শুরা কমিটি। ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে ছাত্ররা ছয় দফা দাবিতে মাদরাসায় বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই সময় তারা মাওলানা আনাসকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবি দেন। দাবি মেনে নেওয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে তারা আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। ওই দিন রাতে আল্লামা শফীকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।

পরদিন বিপুল মানুষের উপস্থিতিতে জানাজ শেষে মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে তাকে দাফন করা হয়। সেদিন রাতে মাদরাসার শুরা কমিটি একক কাউকে মহাপরিচালক নির্ধারণ না করে মুফতি আবদুস সালামসহ তিন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে নিয়ে মাদরাসার পরিচালনা কমিটি গঠন করে দেন।

এদিকে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীসহ তার অনুসারীরা অভিযোগ করে আসছেন, আন্দোলনের সময় ছাত্ররা আল্লামা শফীর কক্ষ ভাঙচুর করেন। জোর করে তার কাছ থেকে পদত্যাগ নেন। এ ছাড়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যথাসময়ে হাসপাতাল যেতে দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে আল্লামা শফীর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম একাংশের সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস।

২৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষক সমিতি আয়োজিত ‘আল্লামা শফীর জীবন ও কর্ম শীর্ষক’ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি দাবি করেন।