যে ৬ আমলে দেরি নয়
আল্লাহতায়ালা মানব ও জিন জাতিকে একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমারই ইবাদত করার জন্য।’ –সূরা আজ জারিয়াত: ৫৬
তাই প্রতিটি বান্দার উচিত মৃত্যুর আগেই মহান আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে জীবনকে সাজিয়ে নেওয়া। পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করা। কারণ আমরা জানি না, মানুষের মৃত্যু কখন আসবে, যদি আমাদের ওপর মহান আল্লাহর অর্পিত ফরজ ইবাদত করার আগেই আমাদের মৃত্যু হয়ে যায়, তবে আমরা তার দরবারে গিয়ে কী জবাব দেব।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সাতটি বিষয়ের পূর্বে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদেরকে সব কিছু ভুলিয়ে দেবে? না ওই ঐশ্বর্যের, যা তোমাদেরকে দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? না সেই বার্ধক্যের, যা তোমাদেরকে অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট? না কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত কিনা সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত? –সুনানে তিরমিজি: ২৩০৬
তাই এখানে এমন কয়েকটি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো- যেগুলো পালনে কোনো অবস্থাতেই দেরি করা উচিত নয়।
আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান
মানুষের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ঈমান। যে ব্যক্তি ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করল, তার গোটা জীবনের সব আমলই অর্থহীন হয়ে পড়বে। এ কারণে প্রত্যেকের উচিত, সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর ওপর ঈমান আনা এবং হজরত রাসূলুল্লা (সা.)-কে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হিসেবে মেনে নেওয়া। এক কথায় ইসলাম গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে মনোনীত একমাত্র দ্বীন হলো ইসলাম।’ –সূরা আলে ইমরান: ১৯
নামাজ
নামাজ আল্লাহপাক ও তার বান্দার মধ্যকার সেতুবন্ধ তৈরির ইবাদত। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব দিতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় কিয়ামতের দিন বান্দার যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে তা হচ্ছে- তার নামাজ।’ –সুনানে আবু দাউদ: ৮৬৪
জানাজা
খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত আলী (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে আলী! তিনটি বিষয়ে দেরি করবে না- ১. নামাজের সময় হয়ে গেলে আদায় করতে দেরি করবে না, ২. জানাজা উপস্থিত হয়ে গেলে তাতেও দেরি করবে না ও ৩. স্বামীবিহীন নারীর উপযুক্ত বর পাওয়া গেলে তাকে বিয়ে দিতেও দেরি করবে না। -সুনানে তিরমিজি: ১০৭৫
বিয়ে করা বা বিয়ে দেওয়া
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিয়েহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিয়ে করতে সমর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।’ –সূরা নুর: ৩২-৩৩
তওবা করা
মানুষকে যেকোনো সময় দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে, যদি তার আগে কৃত গোনাহ থেকে তওবা করা সম্ভব না হয় তাহলে এর চেয়ে বড় বিপদের কথা আর কী হতে পারে। তাই কোনো গোনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তওবা করে নেওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মহান আল্লাহ তার বান্দাদের তওবার মাধ্যমে পাপমুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো; খাঁটি তওবা।’ –সূরা তাহরিম: ৮
হজ
হজ মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মক্কা শরিফ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আল্লাহর জন্য হজ আদায় করা ফরজ।’ –সূরা আলে ইমরান: ৯৭
এ ছাড়া ইফতারের সময় হলে ইফতার করা, কারও সঙ্গে ওয়াদা করলে তা পালন করাসহ বহু আমল এমন আছে যেগুলোতে দেরি করা উচিত নয়। আল্লাহতায়ালা সবাইকে এসব আমল বেশি বেশি করার তওফিক দান করুন।