একমাত্র অনুকরণীয় আদর্শ
বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের মাস রবিউল আউয়ালের তৃতীয় দিন আজ। এ মাস অনেক কারণে ফজিলতপূর্ণ। রবিউল আউয়াল মাসে নবী মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আগমন করেছেন এবং কাফেরদের অত্যাচারে ইসলাম প্রচারের জন্য মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন এ মাসেই। অবশেষে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে পৃথিবীতে আল্লাহর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে তিনি এ দুনিয়া ছেড়ে আল্লাহর কাছে চলে যান। আমাদের জন্য রেখে যান আল্লাহর দেওয়া পবিত্র কোরআন ও তার জীবনাদর্শ।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বের নবী ও রাসুলগণ একটি জাতি বা নির্দিষ্ট কিছু জনপদের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। কিন্তু নবী মুহাম্মদ (সা.) কে সমগ্র মানবজাতির মুক্তির দূত হিসেবে এই পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালা প্রেরণ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি মুহাম্মদ (সা.) কে প্রেরণ করেছি সমগ্র জাতির জন্য রহমতস্বরুপ।’
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনের শেষপ্রান্তে উপনীত হলে বিদায় হজের ভাষণে তখন কোরআনের ঘোষণা আসে। আল্লাহ বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য আমার দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) কে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং আমার নেয়ামতকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।’
সৃষ্টির সূচনা থেকে আল্লাহ মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে এমনিতে ছেড়ে দেননি। তাদের চলার জন্য আল্লাহ জীবন বিধান দিয়েছেন। কিন্তু কিছু কাল যেতে না যেতেই মানুষ তা ভুলে যায়। সেই ভুলে যাওয়া মানুষদের সঠিক পথের সন্ধান দিতে আল্লাহ নবী বা রাসুলদের পাঠিয়েছেন। তাদের দেওয়া গাইড লাইন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে পৃথিবীতেও শান্তিতে থাকা যাবে এবং পরকালেও পাওয়া যাবে মুক্তি।
কিন্তু মানুষের বদনসিব, তারা শুধু আসমানি হেদায়েতকে অবজ্ঞা করেনি, আপন প্রবৃত্তি ও ইবলিসের প্ররোচণাকে আশীর্বাদজ্ঞান করে আল্লাহ প্রদত্ত মানবস্বভাব উপযোগী নির্ভুল হেদায়েতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সর্বনাশা পথকে গ্রহণ করেছে। জেনে হোক কী অজ্ঞাতসারে, এ এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এখনও সময় আছে, ফিরে আসতে হবে ইসলামের পথে। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই (শেষ নবীর উম্মত) সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সুকৃতির আদেশ দেবে, অসৎকাজে প্রতিরোধ করবে এবং আল্লাহর ওপর ঈমান রাখবে।’ -সুরা আলে ইমরান : ১১০
অতএব এ দায়িত্ব পালনে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। এ কাজ কঠিন সন্দেহ নেই। তবে আশার বাণী হলো, এ জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ স্বয়ং আল্লাহ সরবরাহ করেছেন। তা হলো, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এসেছে নূর ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় তিনি এর দ্বারা তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন, তাদের তার অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেন।’ -সুরা আল মায়েদা : ১৫-১৬
নবী করিম (সা.) মহান আল্লাহর ভাষায় উসওয়ায়ে হাসানাহ তথা মহত্তম আদর্শ। নির্ভুল ও নিখাদ সততার ওপর প্রতিষ্ঠিত চরিত্র। তার জীবনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র অবলোকন করলে ইসলামের ঘোর শত্রুও এ কথা সবিনয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, মানবজীবনের ক্ষুদ্র-বৃহৎ, ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক সর্ববিধ ক্ষেত্রে তার আদর্শ একমাত্র অনুকরণীয় আদর্শ।
নবী করিম (সা.)-এর যে আদর্শ, তা কেবল মহব্বতের সঙ্গে পাঠ করা বা জিকিরের বস্তু নয়, তা যথাসাধ্য অনুসরণের, যা দূষিত বর্জ্য থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে সার্থকভাবে পুনর্গঠিত করার এক অব্যর্থ সংবিধান। সাহাবায়ে কেরাম এভাবেই তা গ্রহণ করায় তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলা ও আপামর জনসাধারণের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও ইনসাফসমৃদ্ধ জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা।
সুতরাং রবিউল আউয়াল মাসে শুধু নবী আদর্শের আলোচনা নয়, নবীর জীবনাদর্শের মাঝে যা আছে, তা নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা এবং যা নেই তা বিনাবাক্যে পরিহার করা। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর রঙে রঙিন হয়ে যাও। আর আল্লাহর রঙের চেয়ে উত্তম আর কার রং হতে পারে?’ -সুরা বাকারা : ১৩৮