দুঃসময়ে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার আমল
আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবকিছু আল্লাহতায়ালার প্রশংসায় পরিপূর্ণ। সৃষ্টিজগতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণানা করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সাত আসমান ও জমিন এবং এগুলোর অন্তর্বর্তী সবকিছু তারই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে না; কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা বুঝতে পারো না।’ -সুরা বনি ইসরাঈল : ৪৪
আল্লাহর প্রশংসা একটি গুরুত্বপূর্ণ জিকির। যা আল্লাহ অনেক পছন্দ করেন, এটা আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম। তাই বান্দা রাতদিন যেসব কথা বলে তার মধ্যে আল্লাহর প্রশংসামূলক জিকির থাকা জরুরি। রাতদিনের কোনো সময় যেন এমন জিকিরবিহীন না কাটে। ইবাদতের মধ্যে, বিশেষ করে নামাজকে প্রশংসা তথা হামদ দিয়ে শুরু করা বান্দার জন্য আল্লাহ বৈধ করেছেন। সুরা ফাতেহা প্রশংসা ও গুণকীর্তনের সূরা। এ সুরা ব্যতীত নামাজ বিশুদ্ধ হয় না। কাজেই আল্লাহর প্রশংসার সঙ্গে বান্দার ডাকে সাড়া প্রদানের বিষয়টি জড়িত। যে ব্যক্তি নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা তথা তাহমিদ, তাকবির (বড়ত্ব) ও তাসবিহ (জিকির) পাঠ করে, তার গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয়; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তি তাদের স্তরে পৌঁছে যায়, যারা স্বীয় সম্পদ মুক্তহস্তে দান করে।
যে দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়, তা কবুল হওয়ার অধিক উপযোগী। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে, তখন সে যেন আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন দিয়ে শুরু করে।’ -সুনানে তিরমিজি
আল্লাহর হামদ যেমন বান্দার ইবাদতসমূহের সঙ্গে সম্পৃক্ত তেমন তা বান্দার প্রত্যেক অবস্থার সঙ্গী। আল্লাহর প্রশংসা ও তার মহিমা বর্ণনা করা বক্ষকে প্রসারিত করে এবং কাজে শক্তি জোগায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি জানি, তারা যা বলে তাতে আপনার অন্তর সংকুচিত হয়; কাজেই আপনি আপনার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং আপনি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হোন।’ -সুরা আল হিজর : ৯৭-৯৮
যে ব্যক্তি হামদ পাঠে নিজের জিহ্বাকে একবার নাড়াবে, এতে সে প্রতিবার তাহমিদ (আলহামদুল্লিাহ) পাঠের বিনিময়ে ধন-সম্পদ সদকা করার সমান সওয়াব পাবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি তাহমিদ তথা আলহামদুলিল্লাহ বলা একটি সদকা।’ -সহিহ মুসলিম
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় চারটি কালেমার মধ্যে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ অন্যতম। এটি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছেও বেশি প্রিয় সেসব বস্তুর চেয়ে, যার ওপর সূর্য উদিত হয়।
যে ব্যক্তি সর্বদা নিজেকে হামদ পাঠে ব্যস্ত রাখে, সে সবার চেয়ে অগ্রগামী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এই দোয়াটি এক শ’ বার পাঠ করবে- ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি’- তাহলে কেয়ামতের দিন অন্য কেউ তার চেয়ে উত্তম কোনো আমল নিয়ে আসতে পারবে না। তবে যদি কেউ অনূরুপ বা এর চেয়েও বেশি আমল করে সে ব্যতীত।’ -সহিহ মুসলিম
‘আলহামদুল্লিাহ’-এর সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা দাস মুক্তির সমান এবং তা গোনাহ মোচন আবশ্যক করে দেয়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি বলবে- ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়াবিহামদিহি’ তবে তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে।’ -সহিহ মুসলিম
হামদ পাঠের একটি বাক্য রয়েছে, যার সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত জুয়াইরিয়া (রা.)-কে বললেন, ‘আমি তোমার নিকট হতে বের হবার পর চারটি কালেমা তিনবার পড়েছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা পাঠ করেছ তার সঙ্গে সেগুলো ওজন করা হলে- এগুলোর ওজন ভারী হবে।’ -সহিহ মুসলিম
হামদ ও তাসবিহ এমন দু’টি বাক্য, যা উচ্চারণে হালকা এবং ওজনে ভারী। এ মর্মে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দু’টি বাক্য এমন যা মুখে উচ্চারণ করা অতি সহজ, পাল্লায় অতি ভারী আর দয়াময়ের নিকট অতি প্রিয়। তা হলো- সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ -সহিহ বোখারি
‘আলহামদুলিল্লাহ’ মিজানের পরিমাপকে সওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয়, আর ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ’ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দেয়। সব নেয়ামত তারই প্রশংসায় শুরু হয় এবং তারই প্রশংসায় সম্পন্ন হয়। প্রশংসা করা ও শোকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে নেয়ামতসমূহ স্থায়ী হয় ও তা বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহই একমাত্র উপাস্য ও প্রশংসনীয়; কাজেই অধিক পরিমাণে আল্লাহর প্রশংসা করা, গুণকীর্তন করা ও তার আনুগত্য করা এবং তার বিধান ও দ্বীনের সুনাম ও স্তুতি বর্ণনা করা। কেননা আল্লাহ যা পছন্দ করেন, সেটার প্রশংসা করা- তারই প্রশংসার শামিল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই; দুনিয়া ও আখেরাতে সমস্ত প্রশংসা তারই, বিধান তারই। আর তোমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।’ -সুরা আল কাসাস : ৭০
মূলত হামদ তাসবিহর সঙ্গী ও তার অনুগত। তাসবিহ হলো- আল্লাহকে যাবতীয় দোষত্রুটি থেকে মুক্ত ঘোষণা করা, আর হামদ হলো- সংক্ষিপ্ত ও ব্যাপক পরিসরে আল্লাহর পূর্ণতা ও সৌন্দর্যকে সাব্যস্ত করা। এ দু’টো পরস্পরের পরিপূরক ও আবশ্যক; যখন এককভাবে কোনোটিকে উল্লেখ করা হয়, তখন তা অপরটির অর্থকেও শামিল করে নেয়। আর কোনো বান্দার তার রবের জিকির করা, বস্তুত মাওলার প্রতি তার একনিষ্ঠ ভালোবাসার আলামত বহন করে। যে ব্যক্তি তার সুসময়ে রবের প্রশংসা ও জিকিরের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করে, তিনি তার দুঃসময়ে তাকে স্মরণ করেন; আর যে ব্যক্তি বেশি বেশি তার জিকির করে, সে-ই তো সফলকামদের অন্তর্ভুক্ত।