ইসলামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার
পথহারা ও বিভ্রান্ত মানবতার মুক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা যুগ যুগ ধরে দুনিয়ায় বহু নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। হজরত আদম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম নবী ও রাসুল। আর সর্বশেষ নবী হচ্ছেন হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো আপনাকে সমগ্র মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি।’ -সুরা আল আরাফ : ১৫৮
মহানবী (সা.)-এর আগমনের মাধ্যমে ইসলাম পূর্ণতা লাভ করেছে। ফলে দুনিয়ায় আর কোনো নবী আসার প্রয়োজনীয়তার অবসান ঘটেছে। আল্লাহতায়ালা দ্বীনের এই পূর্ণতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ -সুরা আল মায়েদা : ৩
মহানবী (সা.) মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও যাবতীয় মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি মদিনা সনদের মাধ্যমে শুধু মুসলমানদের অধিকারই প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং সব গোত্র ও ধর্মের মানুষের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন। মদিনা সনদ আজও মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবার কাছে একটি শ্রেষ্ঠ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। মহানবী (সা.) ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমদের যে অধিকার সংরক্ষণ করেছেন তার ছিটেফোঁটাও কোনো ধর্ম ও মতবাদ আজ পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে, মহানবী (সা.) একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি সামাজিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার মুসলমানদের মতোই। ইসলামি রাষ্ট্রে মুসলিম-অমুসলিম সবার দায়িত্ব সমান। যদিও ধর্ম, আকিদা ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভিন্ন।
অমুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার
মহানবী (সা.) প্রবর্তিত ইসলাম একটি সুষম ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এটা সর্বজনীন জীবনবিধান। ইসলাম সবাইকে স্বাধীন মত প্রকাশ ও ধর্ম পালনের অধিকার দান করেছে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণে যেমন কারও ওপর জোর-জবরদস্তি করার বিধান ইসলাম সমর্থন করে না, তেমনি অন্য ধর্মমত গ্রহণেও ইসলামে বাধা নেই। মানুষ ইচ্ছা করলে এই ধর্ম কবুল করতে পারে, নাও করতে পারে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দ্বীন সম্পর্কে কোনো জবরদস্তি নেই। সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগুতকে স্বীকার করবে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করবে সে এমন এক হাতল ধরবে যা কখনো ভাঙবে না।’ –সুরা বাকারা : ২৫৬
ধর্মীয় স্বাধীনতার এমন নজির আর কোথাও নেই। মহানবী (সা.) মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রাখো, যে মুসলমান কোনো চুক্তিবদ্ধ (অর্থাৎ অমুসলিম) নাগরিকের ওপর জুলুম করবে, কিংবা তার অধিকার হরণ করবে, কিংবা তার ওপর সামর্থ্যের চেয়ে বেশি বোঝা চাপিয়ে দেবে, কিংবা তার কোনো জিনিস জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেবে, সেই মুসলমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগে আমি আল্লাহর আদালতে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষে দাঁড়াব।’ -আবু দাউদ
অমুসলিমদের সামাজিক অধিকার
ইসলামি সমাজে সংখ্যালঘুরা মুসলমানের মতোই সামাজিক অধিকার ভোগ করে থাকে। সমাজে তাদের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। সমাজে সংখ্যালঘুদের সামাজিক অধিকার পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ইসলাম বদ্ধপরিকর। আল্লাহতায়ালা অমুসলিমদের সঙ্গে সুবিচারপূর্ণ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সঙ্গে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও ইনসাফ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।’ –সুরা মুমতাহিনা : ৮
সংখ্যালঘু অমুসলিমদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য ইসলামি রাষ্ট্র সর্বদা সতর্ক। মদিনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামি রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করা হয়- তা হলো : ক. শত্রুর হাত থেকে অমুসলিমদের রক্ষা, খ. তাদের ধন-সম্পদ ও প্রাণের নিরাপত্তা দান, গ. তাদের কাছ থেকে উশর আদায় না করা এবং ঘ. তাদের এলাকায় অভিযান পরিচালনা না করা। ঙ. তাদের উপাসনালয় রক্ষা করা।
নাগরিকদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশিত পথ ও পন্থা অনুসরণের বিকল্প নেই।