নবীপ্রেমের স্বরূপ



ড. মাহফুজুর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম
নবী করিম (সা.)-এর রওজায় সালাম পেশ করার দৃশ্য

নবী করিম (সা.)-এর রওজায় সালাম পেশ করার দৃশ্য

  • Font increase
  • Font Decrease

 

সাহাবাদের নবীপ্রেম ছিল দৃষ্টান্তহীন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লামকে সাহাবারা যেভাবে ভালোবাসতেন তার কোনো নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর পাওয়া যাবে না। আমরা এখানে পাঠকদের সামনে সাহাবাদের নবীপ্রেমের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করছি।

এক. আসেম ইবন ওমর বলেন, একবার হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সাহাবিদের এক দলকে এক কাজে পাঠালেন, তাদের মধ্যে জায়েদ ইবনে দাসানাও ছিলেন। জায়েদ ইবনে দাসানা এ সময় কাফেরদের হাতে বন্দী হলেন। অতঃপর তাকে মক্কায় নিয়ে যাওয়া হলো। তখন সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া তাকে তার নিস্তাস নামীয় এক গোলামকে দিয়ে মক্কার হেরেমের বাইরে তানিম নামক স্থানে হত্যার জন্য নিয়ে গেল। এমতাবস্থায় তাকে হত্যার জন্য মক্কাবাসীর অনেকেই জমায়েত হলো। তাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান ইবন হারবও ছিল। যখন তাকে হত্যার জন্য নিয়ে গেল, তখন আবু সুফিয়ান বলল, ‘জায়েদ তোমাকে আমি আল্লাহর নামে বলছি, তুমি কি ভালোবাসবে যে, এ মুহূর্তে মুহাম্মদ আমাদের কাছে তোমার অবস্থায় থাকুক এবং মুহাম্মদের মাথাটি উড়িয়ে দেওয়া হবে। আর তুমি তোমার পরিবারের কাছে থাকবে? তখন জায়েদ জবাব দিলো, আল্লাহর কসম আমি চাইব না যে, আমি বর্তমানে যেখানে আছি সেখানে মুহাম্মদ (সা.) থাকুক, আর তার গায়ে একটি কাঁটাও বিদ্ধ হোক, আর আমি আমার পরিবারের মধ্যে থাকি। তখন আবু সুফিয়ান বলল, আমি আমার জীবনে মুহাম্মদকে তার সাথীরা যেরূপ ভালোবাসে সেরূপ কোনো মানুষ অপর কোনো মানুষকে ভালোবাসে তা আর দেখিনি। এ কথার পর নিস্তাস তাকে হত্যা করল। -মারিফাতুস সাহাবা : ৮/২৭৮

দেখুন, একজন সাহাবির রাসুলকে ভালোবাসার নজির। তিনি মনে মনে কল্পনাও করতে পারতেন না যে, রাসূল সা:-কে কোনো রকমের কষ্ট দেয়া হচ্ছে।

দুই. মুহাম্মদ ইবন সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারি বনি জুবিয়ান গোত্রের এক মহিলা উহুদ যুদ্ধের দিন মুসলমানদের পরাজয়ের কথা শুনে উহুদের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে তাকে জানানো হলো যে, তার স্বামী ও ভাই যুদ্ধে শাহাদৎ বরণ করেছেন। এ সংবাদ শুনে মহিলা কোনো ভ্রক্ষেপ করলেন না। তিনি চলতে থাকলেন সামনে উহুদের দিকে। আর লোকদের জিজ্ঞেস করতে থাকলেন, রাসুল (সা.)-এর কী অবস্থা? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কী হয়েছে? লোকেরা জবাব দিলো, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ভালো আছেন। অবশেষে মহিলা উহুদের ময়দানে পৌঁছে লোকদের উদ্দেশে বললেন, আমাকে মহানবীকে দেখতে দিন। তখন লোকেরা মহানবীর দিকে ইঙ্গিত করে দেখিয়ে দিলেন। যখন মহিলা মহানবী (সা.)-কে দেখলেন তখন বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি জীবিত থাকলে সব বিপদই সহজ হয়ে যায়। -বায়হাকি, দালায়েলুন নাবুওয়্যা : ৩/৩০২

তিন. সাদ ইবন রাবির মা উম্মে সাদ বলেন, আমি উম্মে আমারার কাছে একদিন গেলাম। তাকে গিয়ে বললাম, খালা আমাকে আপনার যুদ্ধের বর্ণনা দিন। তখন তিনি বললেন, আমি দিনের প্রথম দিকে বাড়ি থেকে বের হলাম। দেখতে থাকলাম মানুষজন কী করছে। তখন আমার সঙ্গে একটি পাত্র ছিল যাতে কিছু পানি ছিল। অবশেষে আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পর্যন্ত পৌঁছলাম। তখন তিনি তার সাহাবাদের সঙ্গে ছিলেন। তখন যুদ্ধের বিজয় বাতাস মুসলমানদের দিকে। অতঃপর মুসলমানরা যখন পরাজিত হলো; তখন আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে এগিয়ে গেলাম। তখন আমি নিজেই যুদ্ধ করতে আরম্ভ করলাম, মহানবীর ওপর আসা আঘাত তরবারি দ্বারা প্রতিহত করছিলাম। তীর নিক্ষেপ করছিলাম। অবশেষে আমি নিজেই আহত হলাম। রাবি বলেন, তখন আমি তার পিঠে একটি গভীর ক্ষত দেখতে পেলাম। তখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমাকে এ আঘাত কে করে ছিল? তিনি জবাব দিলেন ইবন কায়েমা, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন। যখন লোকেরা রাসুল (সা.)-কে ছেড়ে পালাচ্ছিল, তখন সে এগিয়ে এসে বলতে থাকল, আমাকে মুহাম্মদকে দেখিয়ে দিন। সে বাঁচলে আমি বাঁচব না। তখন আমি মুসআব ইবন ওমাইর এবং রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে থাকা কিছু সাহাবি এগিয়ে গেলাম তাকে বাধা দিতে। তখন সে আমাকে এ আঘাতটি করেছিল। আমিও তাকে এ অবস্থায় কয়েকটি আঘাত করেছিলাম। তবে তার গায়ে তখন দু’টি লৌহ বর্ম থাকায় তাকে হত্যা করা গেল না।

নবী করিম (সা.)-এর রওজায় সালাম পেশ করার দৃশ্য

চার. ইবনে ইসহাকের বর্ণনা থেকে জানা যায়, উহুদ যুদ্ধের দিন একপর্যায়ে রাসুল (সা.) কাফেরদের খনন করা এক গর্তে পড়ে গেলেন। তখন দু’জন সাহাবি তাকে টেনে তুললেন। তারপর একটি টিলার ওপর তাকে নিয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় তিন দিক থেকে কাফেরদের তীরবৃষ্টি আসতে থাকল। তখন সাহাবি আবু দাজানা মহানবীকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরলেন যাতে তার শরীরে একটিও তীর বিদ্ধ হতে না পারে। আর কাফেরদের তীরবৃষ্টি আবু দাজানার পিঠে বিদ্ধ হচ্ছিল। তার পিঠ ঝাঁঝরা হয়ে গেল। অবশেষে তিনি শাহাদৎ বরণ করলেন। আর মুসলমানরা প্রায় পরাজিত হলো। -তাহজিবু সিরাতে ইবনে হিশাম : ২৫০

পাঁচ. হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা.) একবার কিছু আনসারি ও মুহাজিরদের সঙ্গে ছিলেন। তখন একটি উট এসে মহানবী (সা.)-কে সিজদা করল। তখন রাসুলের সাহাবারা বললেন, গাছ-গাছালি ও উট আপনাকে সিজদা করে। অথচ আমরাই আপনাকে সিজদা করার বেশি হকদার। (কারণ আমাদেরকে আপনার আনুগত্য করার আদেশ দেওয়া হয়েছে) তখন মহানবী (সা.) বললেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করো; আর তোমাদের ভাইকে সম্মান করো। আমি কাউকে অপর কাউকে সিজদা করার আদেশ করলে নারীদেরকে তাদের স্বামীদের সিজদা করতে আদেশ করতাম।’ -আহমদ : ২৩৩২১

এ হাদিসের ‘তোমাদের ভাইকে সম্মান করো’ বাক্য থেকে বোঝা যায় যে, হজরত রাসুল (সা.)-কে তাজিম ও সম্মান করা মুমিনদের কর্তব্য। তবে সে সম্মান ও তাজিম কখনও সিজদার মাধ্যমে হতে পারে না। কারণ সিজদা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে করা যায়। তাছাড়া রাসুল (সা.) নিজে তাকে সম্মান করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি হজরত ওমর (রা.)-কে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘তোমরা আমার এমন প্রশংসা করো না যেরূপ খ্রিস্টানরা ঈসা ইবনে মরিয়মের করেছে। নিশ্চয় আমি হলাম আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল বলে অভিহিত করো।’

এ হাদিসে লক্ষণীয় বিষয় হলো, খ্রিস্টানরা হজরত ঈসা (আ.)-এর প্রশংসা করতে গিয়ে তাকে যেমন খোদার পুত্র খোদা বানিয়েছে মুসলমানরা যেন মহানবীর প্রশংসা করতে গিয়ে সেরূপ কর্মকাণ্ড না করে। তাকে যেন খোদা না বানিয়ে আল্লাহর বান্দা ও রাসুল বলেই অভিহিত করেন।

হজরত আলী ইবনে হোসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাদের ইসলামের ভালোবাসার রীতিতে ভালোবাসো। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আমাকে আমার প্রাপ্য হকের ওপরে উত্থিত করো না। কারণ আল্লাহতায়ালা আমাকে রাসুল বানানোর আগে তার বান্দা বানিয়েছেন।’

এসব ঘটনা নবী প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর পরও অতি দুঃখের বিষয় হলো, হাল সময়ে নবীকে যেভাবে শ্রদ্ধা করার কথা সেভাবে শ্রদ্ধা করেনি সবাই। বিষেশত বর্তমান সময়ে অনেকে নবীকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছে। মহানবীর শানে এমন সব কথা বলছে যা গালাগালের পর্যায়ে পড়ে। এর পরেও তারা নিজেদের মুসলমান বলেই মনে করছে। অথচ রাসুলকে গালাগাল করা ও তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি অপরাধ। এ অপরাধের জন্য পরকালে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামি হতে হয়।

কারণ, ইসলামের শুরুতে মুনাফিকরা রাসুলকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। তাদের এ ঠাট্টা-বিদ্রুপের জন্য তাদেরকে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামি হতে হবে বলে আল্লাহ কোরআনে কারিমে জানিয়েছেন।

   

যে গ্রামে জাকাত-ফেতরা নেওয়ার কেউ নেই



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গ্রামের মানুষের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি : সংগৃহীত

গ্রামের মানুষের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্মিলিত ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগে বদলে গেছে প্রত্যন্ত একটি গ্রামের চিত্র। গ্রামটির সকল পরিবার হয়েছে সচ্ছল। ওই গ্রামে এখন আর ফেতরা কিংবা জাকাত নেওয়ার মানুষ নেই। সবাই স্বাবলম্বী।

কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের চাঁদের হাসি গ্রাম। এই চাঁদের হাসি গ্রামের দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগের ফলে বদলে গেছে গ্রামের দৃশ্যপট।

সংগঠনটি নিজ গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে এখন পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এমন প্রশংসনীয় কাজ করা সংগঠনটির নেই নিবন্ধন, নেই বাহারি অফিস। তারা প্রচারে নয়, কাজে বিশ্বাসী। যার প্রমাণ, ফাউন্ডেশনের জনকল্যাণমূলক নানা কাজ।

জানা গেছে, ২০০৩ সালে চাঁদের হাসি গ্রামের প্রয়াত মাওলানা হেলান উদ্দিনের প্রচেষ্টায় দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে গ্রামে সকল পরিবারের ফেতরা ও জাকাত একসঙ্গে করে অসহায়-গরীব মানুষের মাঝে বিতরণ করে আসছে। এভাবে দীর্ঘ ২১ বছরে এই কার্যক্রমের ফলে চাঁদের হাসি গ্রামে এখন আর ফেতরা ও জাকাত নেওয়া মতো মানুষ নেই। ইতোমধ্যে সংগঠনটি গ্রামের ৮০ জন অসহায় গরীব মানুষকে ঘর তৈরি করে দিয়েছে।

২ বছর আগে চাঁদের হাসি গ্রামের দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সহায়তা ঘর পেয়েছেন ওহেদ আলী। তিনি জানান, ঘর পেয়ে মাথা গুজার ঠাঁই হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই চলছে তার সংসার।

মাহমুদ বেগম নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, তার পরিবার দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সহায়তা ঘর ও সেলাই মেশিন পেয়েছেন। তার বাবা নেই মা ও ছোট বোনকে নিয়ে ঘরে বসবাস করছেন। সেলাই মেশিনের মাধ্যমে মানুষের জামা কাপড় সেলাই করে নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছেন।

চাঁদের হাসি দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ আলম জানান, ২০০৩ সালে আমাদের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এলাকার চলনশীল মানুষের ফেতরা ও জাকাত একসঙ্গে করে আমরা কাজ করে থাকি। এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার পর থেকে ইসলামের বিধি মোতাবেক যে ৮টি খাত রয়েছে সে হিসাবে বর্তমানে আমাদের গ্রামে জাকাত-ফেতরা নেওয়ার মতো কোনো মানুষ নেই।

সংগঠনটি গ্রামের অসহায় ও গরীব মানুষকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তাও দিয়ে আসছে। গ্রামের বেকারত্ব ঘোচাতে অসহায় ও গরীব মানুষের মাঝে গরু, ছাগল, সেলাই মেশিন, অটোরিকশা ও ভ্যান গাড়ি বিতরণ করেছে।

;

রাজধানীতে শীতল পানি বিতরণ করল ইসলামী ছাত্র আন্দোলন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের, ছবি : সংগৃহীত

দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট সংকটে দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন করছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ।

বিভিন্ন জেলা, থানা, ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান নিয়ে পথচারী, দিনমজুর, রিকশাচালকসহ তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে ঠান্ডা পানি বিতরণ করেছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া খাবার স্যালাইন ও পকেট রুমাল বিতরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রমজীবী ও পথচারীদের মাঝে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর পূর্বের ডেমরা থানা শাখার উদ্যোগে বিশুদ্ধ শীতল পানি, স্যালাইন ও ওয়ালেট টিস্যু বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম, ডেমরা থানা শাখার সভাপতি শাহাদাত হোসেন মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাফিইন বিন আমজাদ, কফিল উদ্দিনসহ থানা ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ।

এ সময় প্রধান অতিথি শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাধার ভরাট ও অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলেই অসহনীয় তাপদাহে নগরে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সাময়িক স্বস্তির জন্য আমরা শীতল পানির বিতরণ কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের জন্য নগরকে সবুজায়ন ও বসবাসের উপযোগী করতে রাষ্ট্রকেই যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

নগর সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলাম বলেন, যতদিন তীব্র তাপদাহ থাকবে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পূর্বের উদ্যোগে নগরজুড়ে বিশুদ্ধ শীতল পানি বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

;

দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে যে আয়াতে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসজুড়ে দেখা গেছে, মানুষ সবসময়ই তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অভাব নিয়েই দুনিয়ায় এসেছে। দুইভাবে মানুষ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা বিপদে পড়ছে। এক. মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ঠিকমতো চিহ্নিত না করা। দুই. ভুল পথে চাহিদা মেটানোর প্রবণতা।

এই দুই বিপদজনক পথ সঠিকভাবে অতিক্রমের জন্যই আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নবীরা মানুষকে শিক্ষা দিতেন। যেমন কোরআনের বক্তব্য যদি মানুষ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আমল করে তাহলে তার শক্তিসামর্থ্য যেমন বাড়বে তেমনি পরিত্রাণ পাবে এবং যেকোনো বিপদ বা ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে নাজাত পাবে।

কোরআন মাজিদের সুরা হাদিদের ২০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জেনে রাখো যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র।

এর উপমা হলো- বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখেরাতে আছে কঠিন আজাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’

বর্ণিত আয়াতটি আমাদের কাছে জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছে এভাবে-
ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে, প্রথমে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পার্থিব জীবনের মোটামুটি বিষয়গুলো যথাক্রমে এই- প্রথমে ক্রীড়া, এরপর কৌতুক, এরপর সাজ-সজ্জা, এরপর পারস্পরিক অহমিকা, এরপর ধন ও জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ।

উল্লেখিত ধারাবাহিকতায় প্রতিটি অর্থেই মানুষ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু কোরআন মাজিদ বলে যে, এ সবই হচ্ছে সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী।

প্রকৃতপক্ষে, কোরআন মাজিদের এই আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘মানুষ যখন শিশু থাকে তখন সে খেলা করে, সে তার যৌবনকে উদ্দেশ্যহীনভাবে অতিবাহিত করে, তার যৌবনে সে পৃথিবীর সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যে মগ্ন থাকে এবং তার মধ্য বয়সে ও বার্ধক্যে সে অহংকার এবং সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়!’

তাই পৃথিবীটা একটা খেলা। এমতাবস্থায় খেয়াল রাখা, কোনোভাবেই ধোঁকায় না পড়া। আমরা যদি কোনো উচ্চ অবস্থানে পৌঁছি তাহলে অহংকারী না হওয়া, যদি পতন ঘটে কিংবা অবস্থা নীচের দিকে চলে যায়- তাহলেও নিরাশ না হওয়া।

আয়াতে বর্ণিত পাঁচটি বিশেষ শব্দ দিয়ে মানবজাতির জন্য তাদের বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে এর প্রতিটিই হচ্ছে একেকটি ফাঁদ এবং মানুষ এসবে জড়িয়ে পড়ে।

;

৯ বছর পর উমরার সুযোগ পেলেন ইরানিরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ ৯ বছরের বিরতির পর পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানের নাগরিকরা পবিত্র উমরা পালনের জন্য তেহরান থেকে পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল সোমবার পবিত্র উমরা পালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা করেছে বলে ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।

এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত বছরের মার্চ মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবারও সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। আর উভয় দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির পেছনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল চীন।

২০১৬ সাল থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ওই বছর সৌদি আরব সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দায়ে শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে।

মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।

এ ছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিল। আর তাই সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ছিল প্রায়ই অনেক বেশি।

গত বছর সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার আগে ইরানিরা শুধুমাত্র হজপালন করতে সৌদি আরব যেতে পারত।

রয়টার্স বলছে, তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে ৮৫ জন উমরাযাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন সৌদ আল আনজি।

;