কপটতা থেকে বেঁচে থাকার দোয়া

  • মুফতি শোয়াইব, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কপটতা থেকে বেঁচে থাকতে নবী করিম (সা.) এই দোয়া বেশি বেশি পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন

কপটতা থেকে বেঁচে থাকতে নবী করিম (সা.) এই দোয়া বেশি বেশি পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন

হজরত তাবেঈ জুবাইর ইবনে নুফাইর (রহ.) বলেন, ‘হজরত আবু দারদা (রা.) হিমসে থাকা অবস্থায় একবার আমি তার বাড়িতে প্রবেশ করলাম। তিনি তখন মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। তিনি যখন বৈঠকে বসলেন, তখন তাশাহহুদের পর আল্লাহর কাছে মুনাফিকি থেকে বেঁচে থাকার দোয়া করতে লাগলেন। নামাজ শেষ করার পর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সঙ্গে মুনাফিকির তো কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে আপনি এই দোয়া করছেন কেন? তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনবার ক্ষমা চেয়ে বলেন, কে এই বিপদ থেকে মুক্ত আছে? আল্লাহর কসম একজন মানুষ যেকোনো সময় ফিতনায় পড়ে দ্বিন থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতে পারে। -শোয়াবুল ঈমান : ৮৩১

তাইতো নবী করিম (সা.) দ্বীনের ওপর অটল থাকতে এই দোয়া বেশি পাঠ করতেন।

বিজ্ঞাপন

উচ্চারণ : ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব সাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিক।

অর্থ : হে মনের পরিবর্তনকারী, আমার মনকে দ্বিনের ওপর স্থির রাখুন। -সুনানে তিরমিজি : ৩৫২২

বিজ্ঞাপন

বস্তুত ‘মুনাফিকি’ বা কপটতা মানুষের সারা জীবনের আমলকে ধ্বংস করে দেয়। যাদের মধ্যে এই অভ্যাস আছে, মহান আল্লাহ তাদের চরমভাবে ঘৃণা করেন। তাদের এই ঘৃণিত চরিত্র সম্পর্কে কোরআনে কারিমের এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করছে; কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারছে না।’ -সুরা আল বাকারা : ৯

তাই আল্লাহর প্রিয় ও পছন্দনীয় বান্দা হতে চাইলে এই অভ্যাস থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর মুমিন আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করবে তার মধ্যে মুনাফিকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দোয়াও শামিল রাখবে। নিম্নে মুনাফিকি থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলো-

অন্তরে দৃঢ় ঈমানের চর্চা করা

ঈমান ও কপটতা দু’টি সাংঘর্ষিক জিনিস। এগুলো কখনও একত্র হতে পারে না। যার অন্তরে কপটতার প্রভাব রয়েছে, সে কখনও ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারে না। অথচ একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো- ঈমান। আর এটা মুমিন জীবনে চরম প্রত্যাশিত বিষয়। সুতরাং মুনাফিকি থেকে বাঁচতে এবং ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে ঈমানচর্চার বিকল্প নেই। যার ঈমানচর্চা যত বেশি হবে, মুনাফিকি থেকে বাঁচা তার জন্য তত সহজ হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা মুসলমান হয়ে আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। বলুন, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না; বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাকো।’ –সুরা আল হুজুরাত : ১৭

মুনাফিকি থেকে আশ্রয় চাওয়া

যেকোনো অকল্যাণ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া মুমিনের অন্যতম হাতিয়ার। দোয়াকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং না চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। তাইতো মুমিনের যখন যা প্রয়োজন তা আল্লাহর কাছে চাওয়া একান্ত কর্তব্য। কারণ তিনি বান্দার ডাকে সাড়া দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং তিনি আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন যখন সে তাকে ডাকে এবং বিপদ দূরীভূত করেন।’ -সুরা আন নামল : ৬২

নবী করিম (সা.) ও তার সাহাবিদের ভালোবাসা

মুমিনের অন্তরে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসা রাখা ঈমানের অংশ। হাদিসের ভাষ্যমতে, ‘যে ব্যক্তি নিজের জীবনের চেয়ে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসে না, সে প্রকৃত মুমিন নয়।’ নবীপ্রেমের অনন্য নিদর্শন ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম, কৃত্রিমতা, লৌকিকতা ও পার্থিব উদ্দেশ্য ছেড়ে যারা তাদের জীবন, সম্পদ ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই প্রেমের স্বাক্ষর রেখে গেছেন; তাদের প্রতি ভালোবাসা রাখাও ঈমানের আলামত।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঈমানের আলামত হলো- আনসারকে ভালোবাসা এবং মুনাফিকির চিহ্ন হলো- আনসারের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা।’ –সহিহ বোখারি : ১৭

মুনাফিকির ভয়াবহতা স্মরণ করা

মুনাফিকি থেকে বাঁচতে আরেকটি করণীয় হলো- কোরআন ও হাদিসে মুনাফিকির যে ক্ষতির দিকগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা বারবার স্মরণ করা। পরকালে এ শ্রেণির মানুষকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে পতিত করা হবে। তাই অন্তরে কপটতার প্রভাব অনুভূত হলে এর শাস্তি ও ভয়াবহতার কথা কল্পনা করা। কারণ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনো তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাবে না।’ -সুরা আন নিসা : ১৪৫