অসত্য খবর আর গুজবে বিশ্বাস পাপের কাজ

  • শাহ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অসত্য খবর আর গুজবে বিশ্বাস পাপের কাজ

অসত্য খবর আর গুজবে বিশ্বাস পাপের কাজ

আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের মানুষের সঙ্গে মুহূর্তেই যোগাযোগ করা সম্ভব। এটা কোনো অলিক কল্পনা নয়, নিরেট বাস্তবতা। বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও বিশেষায়িত করেছে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। শিশু-কিশোর, যুবক কিংবা বৃদ্ধ- সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছেন। ভাগাভাগি করছেন, মনের অব্যক্ত কথা, আবেগ ও অনুভূতি। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে যাচ্ছে বন্ধুমহলের কাছে। মানুষ ভালোর জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছেন। কিন্তু ভালোর মাঝে অনেকেই এটাকে নেতিবাচক নানা কাজে ব্যবহার করছেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী নিজেদের মন্দ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অসত্য খবর ও গুজব ছড়িয়ে থাকে। পরে যা সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি সৃষ্টি বয়ে আনে। এই অশান্তির মাত্রা কখনও কখনও খুন-খারাবির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা মোটেও উচিত নয়। এমন অনৈতিক কর্মকান্ড কঠিন পাপের কারণ।

বিজ্ঞাপন

শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম এমন কাজ কোনোভাবেই সমর্থন করে না। ইসলাম গুজব রটনাকারী ও যারা প্রচার করে উভয়কেই নিরুৎসাহিত করে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে, যেন অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না করে এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ -সুরা হুজরাত : ৬

বর্ণিত আয়াতের শিক্ষা হলো- কোনো সংবাদ দেখলে কিংবা শুনলেই তা যাচাই-বাছাই ছাড়া বিশ্বাস করা অনুচিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নাই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর এগুলো সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ –সুরা বনি ইসরাইল : ৩৬

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ কোনো তথ্য সঠিকভাবে না জেনে তার অনুসরণ করা, প্রচার করা কোরআনের শিক্ষার পরিপন্থী কাজ। আর যে কাজ কোরআনের শিক্ষার পরিপন্থী, তা কোনো প্রকৃত মুসলমান করতে পারে না।

সমাজের কেউ গুজব সমর্থন করে না। আইনের দৃষ্টিতেও গুজব রটনা অপরাধ। এর পরও সমাজের অনেককেই দেখা যায়, প্রচারিত কোনো সংবাদ নিজের মতের অনুকূলে হলে তা যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনবোধ করে না। পাওয়া মাত্রই তা প্রচার শুরু করেন। ইসলাম এই প্রবণতা পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে। গুজব প্রচারকারীকে হাদিসে পাপী ও মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সব শোনা কথা যাচাই-বাছাই ছাড়া বলা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ –সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৯২

হাদিস বিশারদগণ এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘কোনো কথা শুনেই প্রচারের প্রবণতা মানুষকে মিথ্যায় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়।’ বর্তমানে যাচাই-বাছাই ছাড়া কথা বলা ও প্রচার মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে গুজব প্রচার হলো- ভয়ংকরতম মিথ্যা।’ –সহিহ মুসলিম : ১৯৭২

মিথ্যা সব পাপের মূল। মিথ্যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। তাই সবার উচিত, গুজব রটনা ও প্রচার পরিহার করা। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা যেকোনো উপায়ে গুজব বা বিভ্রান্তিকর কোনো তথ্য ছড়িয়ে পড়লে মুসলমানদের উচিত তা পরিহার করা এবং প্রচার না। সম্ভব হলে প্রচারকারীকে সতর্ক ও সাবধান করা। প্রয়োজনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্মরণাপন্ন হয়ে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করা।