উত্তম চরিত্রের অপরিসীম সওয়াব

  • মুহাম্মাদ আবু আখতার, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘নিশ্চয় আপনি (হে রাসুল) মহান চরিত্রের অধিকারী’

‘নিশ্চয় আপনি (হে রাসুল) মহান চরিত্রের অধিকারী’

ইসলামে উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মুমিনদের জন্য বিভিন্ন গুণাবলীতে চরিত্রকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা ঈমানের দাবি। কেননা উত্তম চরিত্র ব্যতীত একজন মুমিনের ঈমান পরিপূর্ণ হতে পারে না। ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য উত্তম চরিত্র অর্জন করা অপরিহার্য। এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ওই মুমিন ঈমানে পরিপূর্ণ যার চরিত্র সর্বোত্তম।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৬৮২

আমাদের সমাজে মানুষের সর্বোত্তম হওয়ার বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। বিভিন্নজনের কাছে ভিন্ন মাপকাঠিতে ভিন্ন ধরণের মানুষ সর্বোত্তম। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে- উত্তম চরিত্র। এ ব্যাপারে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যার চরিত্র সর্বোত্তম।’ –সহিহ বোখারি : ৩৫৫৯

বিজ্ঞাপন

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি কখনও কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। চরিত্রবান মানুষদেরকে তিনি ভালোবাসতেন। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় মানুষদের কাতারে শামিল হতে চাইলে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া আবশ্যক।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত আরেকটি রেওয়াতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগতভাবে বা ইচ্ছাপূর্বক অশ্লীল ভাষী ছিলেন না। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ –সহিহ বোখারি : ৩৭৫৯

বিজ্ঞাপন

উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেও যে অপরিসীম সওয়াব লাভ হয় তা আমরা অনেকে জানি না। এর সওয়াব এত বেশি যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কেয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গোনাহ পরিমাপের জন্য মিজানে ওজন করা হবে। সেদিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো- উত্তম চরিত্র। এ সম্পর্কে হজরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোন জিনিস হবে না। কেননা, আল্লাহতায়ালা অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন।’ -সুনানে তিরমিজি : ২০০২

উত্তম চরিত্রের সওয়াব ওজনে সবচেয়ে বেশি ভারী হওয়ার রহস্য আরেকটি হাদিস হতে জানা যায়। ওই হাদিসে উত্তম চরিত্রের সওয়াবের পরিমাণ বর্ণনা করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি সারা দিন রোজা পালন করে ও সারা রাত নফল নামাজ পড়ে যেরূপ সওয়াব পায় আল্লাহতায়ালা উত্তম চরিত্রের বদৌলতে সেরূপ সওয়াব দান করেন। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) রোজা পালনকারী ও (রাতে) নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৯৮

জান্নাতে মানুষের আমল অনুযায়ী সম্মানজনক জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হবে। যার আমল যত ভালো হবে সে তত বেশি সম্মানিত হবে। উত্তম চরিত্র এমন ফজিলতপূর্ণ একটি নেক আমল হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে উত্তম চরিত্রবানদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘরের জিম্মাদারী নিয়েছেন। এ সম্পর্কে হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চস্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০

আমাদের জন্য সর্বোত্তম চরিত্রের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হলেন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)। তার আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই আমরা সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারি। তার সুমহান চরিত্রের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ -সুরা কলম : ৪

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তম চরিত্রের অসংখ্য ঘটনা হাদিস ও সিরাত গ্রন্থে বর্ণিত আছে। তিনি সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির সঙ্গেও সর্বোত্তম আচরণ করেছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) হতে এ সম্পর্কিত একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, ‘সে গোত্রের কতই না খারাপ লোক।’ অতঃপর তিনি বললেন, তাকে আসতে দাও। যখন সে ভেতরে এলো তখন তার সঙ্গে তিনি নম্রভাবে কথা বললেন। (সে চলে গেলে) হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এ ব্যক্তির সঙ্গে নম্রভাবে কথা বললেন, অথচ ইতিপূর্বে আপনি তার সম্পর্কে অন্য রকম মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বললেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে খারাপ, যাকে মানুষ তার অশালীন কথার ভয়ে ত্যাগ করেছে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৯১

আমরা তো তুচ্ছ থেকে অতি তুচ্ছ কারণে খাদেম কিংবা অধীনস্থদের বকাঝকা ও মারধর করি। কিন্তু হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কখনও কোনো খাদেমকে মারধর কিংবা বকাঝকা করেননি। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘মদিনায় আমি দশ বছর যাবৎ নবী করিম (সা.)-এর খেদমত করেছি। তখন আমি বালক ছিলাম। সব কাজ আমার মালিক যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে করতে পারিনি। সেজন্য তিনি আমার প্রতি কখনও মনক্ষুণ্নতা প্রকাশ করেননি এবং কখনও আমাকে বলেননি, তুমি এটা কেন করলে অথবা এটা কেন করলে না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৭৪

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কোনো খাদেমকে এবং কোনো মহিলাকে মারধর করেনেনি।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৮৬

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর কাছে তার সুন্দর চরিত্র গঠনের জন্য দোয়া করতেন। এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ আপনি আমার চরিত্রকে সুন্দর করুন যেমনভাবে আমার শারীরিক গঠনকে সুন্দর করেছেন।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৩৮২৩