মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি

  • মাওলানা আবদুল ওয়াহাব, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে

যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে

মানুষকে কষ্ট দেওয়া নিন্দনীয় আচরণ। কথা ও কাজে অন্যদের পীড়া দিতে মনের লাগাম ছেড়ে দেওয়ার কাজটি শুধু প্রবৃত্তির অনুসারী দুর্বল ঈমানের অধিকারী লোক থেকেই প্রকাশ পায়। অন্যায় তাকে তাড়িত করে। মন্দ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশদাতা মন তাকে পরিচালিত করে। যারা অন্যকে পীড়া দেওয়া থেকে নিজেকে সংযত রাখবে, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপদ থাকবেন এবং সাফল্য লাভ করবেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ -সুরা আহজাব : ৫৮

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভুল কিংবা গোনাহ করে, অতঃপর কোনো নিরপরাধের ওপর অপবাদ আরোপ করে, সে নিজের মাথায় বহন করে জঘন্য মিথ্যা ও প্রকাশ্য গোনাহ।’ -সুরা নিসা : ১১২

বিজ্ঞাপন

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সুস্পষ্টভাবে এসব আয়াতের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরছেন। অন্যদের কষ্ট দেওয়া, নির্যাতন করা, তাদের প্রতি বৈরিতা প্রদর্শন ও তাদের ক্ষতির ক্ষেত্রে রাসুলের পক্ষ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি ও শক্ত নিষেধাজ্ঞার বিবরণ ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি অবিচার করবে না, তাকে অবজ্ঞা করবে না, তাকে অসহযোগিতা করবে না।’ –সহিহ মুসলিম

ইমাম মুসলিম (রহ.) রাস্তাঘাটের মধ্যখানে বসে থাকার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত হাদিসও উল্লেখ করেছেন। তাতে নবী করিম (সা.) রাস্তাঘাটে বসার হকগুলো বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে আছে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।

বিজ্ঞাপন

মুসলমানদের পীড়া দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করতে গিয়ে নবী করিম (সা.) প্রবল নিষেধাজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা মুখে মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছে, যাদের হৃদয়ে ঈমান পৌঁছেনি, তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিও না। তাদের তিরস্কার করো না। তাদের গোপন বিষয়াদির পেছনে লেগো না। কেননা যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয়তা তালাশ করে আল্লাহ তার গোপনীয়তা তালাশ করেন। আর আল্লাহ যার গোপনীয়তা সন্ধান করেন তা ফাঁস করে দেন, যদিও সে তার বাড়ির অভ্যন্তরে থাকে।’ –তিরমিজি

কাতাদাহ (রহ.) বলেন, ‘তোমরা মুমিনকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকো। কেননা আল্লাহ তাকে বেষ্টন করে রাখেন। এতে তিনি ক্রুদ্ধ হন।’ ইসলামের শিক্ষা হলো, অন্যকে পীড়া দেওয়া থেকে বেঁচে থাকুন। নিজের মনকে বৈরিতা প্রদর্শন করতে বাধা দেন। তাহলে আপনি লাঞ্ছনা ও আঘাত থেকে নিরাপদ থাকবেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলিম সেই যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ –সহিহ বোখারি

মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া হারাম ও নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি শুধু ব্যক্তিবিশেষ বা তাদের কোনো সদস্যকে কষ্ট দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মুসলমানকে পীড়া দেওয়ার বিষয়টি তাদের জনস্বার্থ ও যৌথ কল্যাণকেও আওতাভুক্ত করে। যেমন জনসম্পদ, চাকরি, পেশা ইত্যাদি। ইসলামের অন্যতম একটি মূলনীতি হচ্ছে, ‘না নিজের ক্ষতি করা যাবে, না অন্যের ক্ষতি করা যাবে।’

অন্তরকে শিরক, বেদাত, শত্রুতা, হিংসা-প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত রাখা মুক্তি লাভের অন্যতম একটি উপায়, এটি জান্নাতবাসীর একটি গুণ। আল্লাহ নিজের বান্দা ও বন্ধু হজরত ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে বলেন, যা তিনি নিজের রবের কাছে দোয়ায় বলেছিলেন, ‘পুনরুত্থান দিবসে আমাকে লাঞ্ছিত করো না, যে দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো উপকারে আসবে না; কিন্তু যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।’ -সুরা শুআরা : ৮৭-৮৯

মুসলমানের হৃদয়কে ঘৃণা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা ও অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে মুক্ত রাখার বিশাল প্রতিদান ও মর্যাদার সুস্পষ্ট বিবরণ সংবলিত বহু বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেসব হাদিসের একটি হলো- এক আনসারি লোকের গল্প, যার জন্য নবী করিম (সা.) জান্নাতের সাক্ষ্য দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) লোকটির বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে তার কাছে দিন-রাত থাকেন। তিনি তার সৎকর্ম বলতে দেখতে পেলেন, সে রাত জেগে কোনো ইবাদত করে না, তবে যখন সে তার বিছানায় জেগে একটু শব্দ করে ওঠে এবং পাশ বদল করে তখন সে আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহু আকবার বলে। আর এক পর্যায়ে ফজরের নামাজ পড়তে ওঠে। তিনি তাকে ভালো কথা ছাড়া কিছুই বলতে শোনেননি। তারপর তিনি লোকটিকে জানালেন নবী করিম (সা.) তার ব্যাপারে যা বলেছেন। তখন লোকটি তার আমল সম্পর্কে বলল, আপনি যা দেখেছেন এতটুকুই। তবে, আমি কোনো মুসলিমের জন্য আমার মনের মধ্যে কোনো কিছু পোষণ করে রাখি না। কারও ভালো কিছু থাকলে সেটা নিয়ে হিংসা করি না, যেটা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। তখন আবদুল্লাহ (রা.) বললেন, ‘এটাই সেই জিনিস যা তোমাকে এ মর্যাদায় নিয়ে এসেছে আর আমরা সেটা পারি না।’