যে আমলে আল্লাহর সন্তুষ্টি মেলে

  • মুহাম্মদ ইউনুছ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী (ফেরেশতা) তার নিকটেই রয়েছে

মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী (ফেরেশতা) তার নিকটেই রয়েছে

হজরত বেলাল বিন হারেস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এমন কথা বলে, যার কল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারে। না অথচ কেয়ামত পর্যন্ত তার দরুণ তার সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন। আবার মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টির এমনও কথা বলে, যার অকল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারে না। অথচ তার দরুণ কেয়ামত পর্যন্ত তার অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন।’ -মুয়াত্তা মালেক

মিষ্টভাষী হওয়া
হজরত আলী (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে বালাখানা থাকবে যার ভেতরের সব কিছু বাহির থেকে দেখা যাবে। একজন বেদুঈন দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, ওই বালাখানা কাদের জন্য হবে? আল্লাহর রাসুল (সা.) জবাবে বললেন, যারা মিষ্টভাষী হবে, অভাবীদের আহার দেবে ও রাতের গভীরে নামাজ পড়বে। -তিরমিজি

বিজ্ঞাপন

সুতরাং আমাদের সকলের সঙ্গে মিষ্টি ভাষায় কথা বলতে হবে। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, পরিচিত-অপরিচিত, নেতা-কর্মী, শাসক-শাসিত সকলেই পরস্পরের সঙ্গে মিষ্টি ভাষায় কথা বলে আমরা সদকার সওয়াব অর্জন করতে পারি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, মানুষের প্রত্যেক সংযোগস্থলের ওপর প্রত্যেক দিন সদকা ওয়াজিব হয়। তবে দু’জনের মধ্যে ইনসাফ করা দরকার। কোনো ব্যক্তিকে তার সওয়ারির ওপর উঠিয়ে দেওয়া কিংবা তার মালপত্র তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করা সদকা। ভালো কথা বলা সদকা। নামাজের জন্য যত কদম চলবে প্রত্যেক কদমে সদকা। আর রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়াও সদকা। -সহিহ বোখারি

সর্বদা সত্য কথা বলা
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, সদা সত্য বল। কেননা সত্য ভালো কাজের পথে পরিচালিত করে। আর ভালো কাজ জান্নাতে নিয়ে যায়। যে ব্যক্তি সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদিতার চেষ্টায় থাকে একপর্যায়ে আল্লাহর খাতায় সিদ্দিক (চির সত্যবাদী) নামে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। -সহিহ মুসলিম

বিজ্ঞাপন

জিহবাকে আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত রাখা
এক সাহাবি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামের বিধানতো অনেক। আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন, যা আমি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করব। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, তোমার জবান যেন সদা আল্লাহর জিকির দ্বারা সতেজ থাকে। -তিরমিজি

কথা বলার ক্ষেত্রে নম্রতা বজায় রাখা
জিহবা একটি নরম গোশতের টুকরা। কথা বলার সময় নম্রভাবে বলা উচিত। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার একদল ইহুদি আল্লাহর রাসুলের কাছে এসে বলল, ‘আসসামু আলাইকুম’ অর্থাৎ তোমার মরণ হোক। হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, তোমাদের ওপর আল্লাহর লানত ও গজব পড়ুক। তখন নবী করিম (সা.) বললেন, হে আয়েশা! একটু থাম। নম্রতা অবলম্বন করা তোমাদের কর্তব্য। রুঢ়তা ও অশালীনতা বর্জন কর। হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, তারা যা বলেছে, আপনি কি তা শোনেননি। তিনি বললেন, আমি যা বললাম, তুমি কি তা শোনোনি। কথাটি তাদের ওপরই ফিরিয়ে দিয়েছি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে আমার কথা কবুল হবে। আর আমার সম্পর্কে তাদের কথা কবুল হবে না। -সহিহ বোখারি

সান্তনার বাণী শোনানো
আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে নানা সমস্যায় জর্জরিত। অনেক মানুষ অসহায় অবস্থায় রয়েছে। তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা দরকার। শুধু হতাশা নয়, মানুষের মাঝে সান্তনার বাণী ছড়িয়ে দেওয়া নেকির কাজ। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি এমন নারীকে সান্তনার বাক্য বলে, যার ছেলে নিখোঁজ হয়ে গেছে বা মারা গেছে; তাহলে আল্লাহতায়ালা ওই সান্তানাদানকারীকে জান্নাতে মূল্যবান জামাজোড়া পরিধান করাবেন। কোনো ব্যক্তি পথ চিনছে না আমরা যদি তাকে পথ দেখাতে সাহায্য করি এটাও নেকির কাজ। কোনো ব্যক্তি দুঃখ-কষ্টের মাঝে থাকলে তাকে সান্তনা দিলে বা তার পেরেশানি দূর করার জন্য পরামর্শ দিলে সওয়াব মেলে।

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে

 

জিহবা দ্বারা দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া
জবান দ্বারা কাউকে যদি দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহলে অনেক নেকি অর্জন হবে। যেমন কেউ কোরআন পড়তে পারে না। তাকে কোরআন শিক্ষা দেওয়া। কেউ ভুলভাবে নামাজ পড়ে। তাকে নামাজের সঠিক নিয়ম শিক্ষা দেওয়া। জিহবার সামান্য নড়াচড়ায় যদি কারও নামাজ সহিহ হয়ে যায়, এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে?

আল্লাহ অসন্তুষ্ট এমন কথা না বলা
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি তোমার কোনো বিপদ আসে- তাহলে এরূপ বলো না, যদি আমি এরূপ করতাম- তাহলে এরূপ হতো। বরং তুমি বল, আল্লাহ তাকদিরে লিখেছেন। আর তিনি যা চান তা করেন। কারণ যদি শব্দটি শয়তানের কাজ চালু করে দেওয়া। -সহিহ মুসলিম

বৈরী পরিবেশেও ইনসাফের কথা বলা
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, স্বৈরাচারী শাসকের সামনে ন্যায় ও ইনসাফের কথা বলা উত্তম জিহাদ। - তিরমিজি

অধীনস্থদের সঙ্গে ব্যবহার
হজরত আনাস (রা.) বলেন, কোনো পশমি ও রেশমি কাপড়কেও আমি রাসুল (সা.)-এর হাতের তালুর চেয়ে অধিকতর নরম ও মোলায়েম মনে করি না। কোনো সুগন্ধিকেও আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শরীরের সুগন্ধির চেয়ে অধিকতর সুগন্ধি পাইনি। আমি দীর্ঘ দশ বছর তার খেদমতে ছিলাম। কিন্তু কখনও তিনি আমার প্রতি উহ শব্দ উচ্চারণ করেননি। আমার কৃত কোনো কাজের জন্য বলেননি যে, কেন তুমি এটা করলে? আর কোনো কাজ না করার জন্য বলেননি কেন তুমি করলে না? –সহিহ বোখারি

সুসংবাদ ও মোবারকবাদ দেওয়া মুস্তাহাব
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, অতএব সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদের যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং যা ভালো তা গ্রহণ করে। -সুরা জুমার : ১৭-১৮

একাধিক হাদিসে বলা হয়েছে, কেউ কোনো ভালো কাজ করলে; তার জন্য তাকে মোবারকবাদ দেওয়া কিংবা কাউকে কোনো সুসংবাদ পৌঁছানো মুস্তাহাব।

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে দোয়া করা
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) নিজের পরিবারের কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তার ওপর ডান হাত বুলিয়ে বলতেন, হে আল্লাহ মানুষের প্রভু। রোগ দূরকারী রোগমুক্তি দান করো। তুমিই রোগমুক্তি দানকারী। তোমার রোগমুক্তি ছাড়া কোনো রোগমুক্তি কার্যকর নয়- যা কোনো রোগকে ছাড়ে। সহিহ বোখারি

হজরত সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, যখন আমি অসুস্থ ছিলাম তখন আল্লাহর রাসুল (স.) আমাকে দেখতে এলেন এবং বললেন হে আল্লাহ! সাদকে রোগ মুক্তি দান করো। হে আল্লাহ! সাদকে রোগমুক্তি দান করো। হে আল্লাহ! সাদকে রোগমুক্তি দান করো। -সহিহ মুসলিম