পবিত্র হজ পালন শেষে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) জেদ্দার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ১০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইটে (বিজি-৩৩২) ৪১৭ জন সরকারি ব্যবস্থাপনার হাজি শুক্রবার (২১ জুন) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছেছেন।
বিমানবন্দরে হাজিদের স্বাগত জানাতে স্বজনদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বেবিচক চেয়ারম্যান, বিমানের এমডিসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় হাজিদের। এয়ারপোর্টেই দেওয়া হয় জমজমের পানি।
বিজ্ঞাপন
হজ পোর্টাল আইটি হেল্প ডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে জানা গেছে, শুক্রবার ১০টি ফিরতি হজ ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন আরও ৪ হাজার ৩৭ জন হাজি।
এ বছর মোট ৮৫ হাজার ২২৫ জন হজযাত্রী ও ব্যবস্থাপনা সদস্য হজে যান। তারা ২১৮টি ফ্লাইটে ধারাবাহিকভাবে দেশে ফিরবেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ১০৬টি, সৌদি এয়ারলাইনস ৭৫টি ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ৩৭টি এয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করে হাজিদের দেশে ফিরিয়ে আনবে। এ বছর হজ অনুষ্ঠিত হয় ১৫ জুন।
হজের ফিরতি ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২২ জুলাই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অর্ধেক হজযাত্রী পরিবহন করবে। বাকি অর্ধেক পরিবহন করবে সাউদিয়া এয়ারলাইনস ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স।
এদিকে চলতি বছর হজে গিয়ে সৌদি আরবে এ পর্যন্ত ৩২ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গেছেন। অন্যদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে চলতি বছর এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। হজের সময় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন সৌদিতে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের হাজীরা।
চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৮ লাখ মানুষ হজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব সফর করছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বয়স্ক এবং দূর্বল। মরুভূমির দেশ সৌদি আরবে এবারের গ্রীষ্মের তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়। ফলে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে গিয়ে প্রচণ্ড গরম এবং রোদের তাপে হাজিরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত ৭৭ জন কোরআনের হাফেজকে সংবর্ধনা দিয়েছে মেডিকেল দাওয়াহ সোসাইটি অব বাংলাদেশ। একইসঙ্গে তাদের মধ্য থেকে সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেরও পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা তুলে ধরার পাশাপাশি মানসম্মত চিকিৎসা প্রদানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বৈশিষ্ট্যগুলো পূর্ণ অনুসরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশিষ্ট ধর্মীয় আলোচক মাওলানা আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি পদচারণা, তার প্রতিটি বাণী হেদায়েতের স্নিগ্ধ কিরণ হয়ে আমাদের আলোকিত করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শকে।
ডা. এ বি এম আল আমিনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর ডা. সাজেদ আবদুল খালেক, ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডা. নুরুল্লাহ, ডা. হাফেজ রেজুয়ানুল হক ও ডা. হাফেজ মাহমুদুল বাশার।
অনুষ্ঠানে মেডিকেল ফিকহের গুরুত্ব, ডাক্তারদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা-বাস্তবতা এবং হাসপাতালে মুসলিম রোগীদের ইসলামি কনসেপ্টসহ নানা বিষয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক ডিন ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সাধারণত সমাজে খুব সাধারণ একটি বিষয়, কিন্তু ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একজন মৃত্যু পথযাত্রী মুসলিম রোগীকে তালকিন (পাশে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ) করা। অথচ আইসিইউ বা সিসিইউ বা জেনারেল বেডের কোনো রোগীকে কেউ তালকিন করার নেই। এসব বিষয়ে ডাক্তার নার্স বা ব্রাদারদের কোনো প্রশিক্ষণ বা কোনো হাসপাতালে ধর্মীয় প্রতিনিধি কী আছেন? নেই।
তারা বলেন, ক্যাপসুলে জেলোটিন ব্যবহার হয় এমনকি নানা ধরনের হালাল-হারামের মিশ্রণ হয়। এসব বিষয়ে কি আমাদের কোনো ধারণা আছে? আমরা এই বিষয়গুলো কতটুকু গুরুত্ব দেই? আমার মনে হয় আমাদের কাজ করার অসংখ্য জায়গা এবং প্রয়োজনীয়তা আছে।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা বলেন, কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কোরআন মাজিদ যথাযথভাবে অনুসরণ করলে এখানে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে ইসলামি অনুশাসন অনুসরণে চিকিৎসা প্রদানের একটি রূপরেখাও তুলে ধরা হয়। এসময় একজন কোরআনের হাফেজ হিসেবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অধ্যয়নের পাশাপাশি কোরআনের সার্বজনীন শিক্ষা সবার পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।
পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের প্রবর্তক হিসেবে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা মেডিকেল পড়াশোনায় চির প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে এ ধরনের আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত ৭৭ জন হাফেজে কোরআন সংবর্ধনা ও সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ ও উপহার তুলে দেওয়া হয়।
হজের খরচ কমানোর জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর নতুন সভাপতি ও মহাসচিব ছিলেন।
হাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ পুনর্গঠন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ তারা নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। হাব নেতারা জানান, উড়োজাহাজ ভাড়া কমানো হলে হজের খরচ কমে আসবে। হজের খরচ কমলে হজযাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ইচ্ছা থাকা সত্তেও বেশি খরচের জন্য হজে যেতে পারেন না। আমরা চাই হজের খরচ কমানো হোক। এ সময় তারা সিভিল এভিয়েশনের অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে যৌক্তিক উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) হাবের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুফতি জুনায়েদ গুলজারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার হাব কার্যনির্বাহী পরিষদের দশম সভায় উপস্থিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে কার্যনির্বাহী পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। কার্যনির্বাহী পরিষদ পুনর্গঠনে হাবের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফারুক আহমদ সরদার। তিনি আগে মহাসচিব ছিলেন। ফরিদ আহমেদ মজুমদারকে মহাসচিব করা হয়েছে। আর ইসি সদস্য হয়েছেন মেজবাহ উদ্দিন সাঈদ।
হাব কার্যনির্বাহী পরিষদের ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের নির্বাচনে নির্বাচিত সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম অসুস্থতার কারণে গত ২২ আগস্ট পদত্যাগ করায় সভাপতির পদটি শূন্য হয়।
হজযাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং রাজকীয় সৌদি সরকারের অনুমোদিত হজ এজেন্সিগুলোর মালিকদের সংস্থা হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
বর্তমানে হাবের সদস্য সংখ্যা এক হাজার ১১৭২ জন। এ প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রথম শ্রেণির বাণিজ্যিক সংগঠন যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত। বাণিজ্য সংগঠনের টিও রুল অনুযায়ী পরিচালিত হাব শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর অন্তর্ভুক্ত একটি অন্যতম প্রথম শ্রেণির অলাভজনক সেবামূলক সংস্থা, যা হজ ও উমরা যাত্রীদের কল্যাণে দেশে-বিদেশে সুনাম সুখ্যাতির সঙ্গে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিত।
নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক আহমদ সরদার ও মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার নতুন দায়িত্ব পেয়ে সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আল্লাহর মেহমানদের খেদমতের মাধ্যমে হয়রানিমুক্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্নীতির সুযোগ নাই। হাজিদের হয়রানি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জুমার দিন একটি বিশেষ সময় আছে, বান্দা তখন যে দোয়া করবে; আল্লাহতায়ালা তাই কবুল করবেন। মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে যা চাইবে, আল্লাহতায়ালা তাই দান করবেন। অনেক হাদিসে এই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জুমার দিনের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন বলেছেন, এইদিন একটা সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি ওই সময়ে নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায় আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করবেন।
(হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,) এরপর হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দিয়ে ইশারা করেছেন যে, ওই মুহূর্তটা অতি অল্প সময়। -সহিহ বোখারি : ৯৩৫
মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় স্পষ্ট এসেছে, ওই মুহূর্তটি খুব সামান্য সময়। -সহিহ মুসলিম : ৮৫২
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনের বারো ভাগ। (এর মধ্যে একটি সময় আছে, যাতে) মুসলিম বান্দা আল্লাহতায়ালার কাছে যা প্রার্থনা করবে আল্লাহতায়ালা তাকে তাই দান করবেন। সুতরাং তোমরা সে সময়টি অনুসন্ধান করো আসরের পর দিনের শেষ অংশটিতে। -মুস্তাদরাকে হাকেম : ১০৩২
জুমার দিনের যে সময়টিতে দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে সেটা কোন্ সময়? ওপরের হাদিসটিতে আসরের পরের কথা বিবৃত হয়েছে। তবে অন্যান্য হাদিতস ও আছার থেকে আরও বিভিন্ন সময়ের কথা জানা যায়।
এ সব হাদিস ও আছারের ভিত্তিতে আলেমরা জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময় সম্পর্কে অনেক মত বর্ণিত হয়েছে। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) ৪৩টি মত উল্লেখ করেছেন। -ফতহুল বারী : ২/৪১৬-৪২১
সবগুলো মত উল্লেখ করার পর হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, এখানে হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) যা বলেছেন- এর সারমর্ম হলো- এই সব মতের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধতম মত দুইটি-
১. খতিব খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে ওঠার পর থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত। এ সময়ের কথা হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।
২. আসরের নামাজের পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। এ সময়ের কথা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
মুহিব্বুদ্দীন আবুল আব্বাস তবারি (রহ.) বলেছেন, হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ আর হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত মতটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। -ফতহুল বারী : ২/৪২১
সুতরাং উচিত হলো, জুমার দিন ওই দুই সময়েই দোয়ার গুরুত্ব দেওয়া।
ইমাম আবু উমর ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, তার দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ের জন্য কবুলের আশা নিয়ে এই দুই সময়ে গুরুত্বের সঙ্গে দোয়া করা। তাহলে ইনশাআল্লাহ সে আশাহত হবে না। -আততামহিদ : ১৯/২৪
মাফুসি দ্বীপ মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। অল্প সময়ে যাওয়া যায় বিধায় দ্বীপটি অনেকেরই পছন্দের স্থান। এখানে রোমাঞ্চের স্বাদ মিলবে উইন্ড সার্ফিং, কায়াকিং, স্কুবা ডাইভিং ও প্যাডেল নৌকার মাধ্যমে। এর আছে হোয়াইট স্যান্ডি সৈকত ও স্পার্কলিং ওয়াটার। এই নির্জনতার স্বাদ পেতে তীরের অদূরে মাঝে মধ্যে চলে আসে তিমি ও হাঙর। স্পীড বোর্ড বা ফেরিতে দূর থেকে এই দ্বীপটিকে দেখতে অসাধারণ লাগে। যতই কাছাকাছি পৌঁছা যায় ততই যেন এর সৌন্দর্য বাড়তে থাকে।
তবে দ্বীপটির যে বিষয়টি সবার চোখ আটকায়, তা হচ্ছে- জলযান থেকে নামতেই চোখে পড়বে একটি সাইনবোর্ড। তাতে বড় করে ইংরেজিতে লেখা- ATTENTION, NO BIKINI। অর্থাৎ দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন তবে বিকিনি পরিধান করা যাবে না।
জানা গেছে, শুধু মাফুসি দ্বীপেই নয়, মালদ্বীপের অধিকাংশ দ্বীপেই বড় বড় সাইনবোর্ডে লেখা, সাঁতারের ড্রেসে লোকাল এরিয়ায় চলাফেরা নিষেধ, অথবা নো বিকিনি বা আপত্তিকর আচরণ নিষেধ। তবে শুধুমাত্র প্রাইভেট রিসোর্টের প্রাইভেট বীচ এবং কয়েকটি হাতেগোনা কয়েকটি সৈকতে গেলেই বিকিনি পরার অনুমতি মেলে। এখানেও বীচ থেকে উঠে এই পোশাকে লোকাল এরিয়ায় চলাফেরা করা যাবে না। দেশটির সরকারের এমন নির্দেশনা সাবলীলভাবেই মেনে চলে পর্যটকরা। যাদের অধিকাংশই ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ স্বল্প কাপড় পরিধান করা দেশ থেকে আসেন। তারা মালদ্বীপে এসে শতভাগ মুসলিম অধ্যূষিত এলাকার নিয়মকানুন মেনেই দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
নানাবিধ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ মোকাবেলা করেই পর্যটনকে এগিয়ে নিচ্ছে মালদ্বীপ সরকার। স্বচ্ছ সবুজ পানিতে সাঁতার, বালুময় সৈকতে সূর্যস্নান, প্রবালদ্বীপের বিলাসবহুল রিসোর্টে ছুটিযাপন, স্নোরকেলিং ও স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো নানা রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড বলা যায় পর্যটকদের চাহিদা পূরণে সমস্ত সম্ভার নিয়ে বসে আছে মালদ্বীপ। তাই তো রোমাঞ্চপ্রিয় ও নিরিবিলি আয়েশি অবকাশযাপন সন্ধানী ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও পছন্দের এক গন্তব্য ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটির সহজ ভিসানীতি, নিরাপত্তা আর নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
মালদ্বীপে সহস্রাধিক দ্বীপ আছে, এই দ্বীপগুলোকে দুই নামে ডাকা হয়- লোকাল আইল্যান্ড আর রিসোর্ট আইল্যান্ড। লোকাল আইল্যান্ডে স্থানীয় জনগণ থাকে, তবে পর্যটকদের থাকারও ব্যবস্থা আছে। আর রিসোর্ট আইল্যান্ডে শুধুই রিসোর্ট। ১৯৭২ সালে এমনই একটি দ্বীপে দুটি রিসোর্ট নিয়ে পর্যটনশিল্পের গোড়াপত্তন করে মালদ্বীপ। বর্তমানে দেশটিতে রিসোর্টের সংখ্যা ১৮০। এ ছাড়া আছে হোটেল, গেস্টহাউস ও সাফারি জাহাজসহ নানা কিছু।
মালদ্বীপের পর্যটনের সঙ্গে অনেক দেশেরই কোনো তুলনা চলে না। একসময় মালদ্বীপের মানুষের মূল আয় ছিল মাছ ধরা। সেখান থেকে তারা আজ কোন পর্যায়ে এসেছে সেটা দৃশ্যমান। বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করে তারা নিজেদের পর্যটন অবকাঠামো তৈরি করেছে। বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে তারা এ পর্যায়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের একটি বড় মিল রয়েছে, দুই দেশই মুসলিম অধ্যুষিত। তবে এই ধর্ম পরিচয় তাদের উন্নয়নের পথে বাধা হয়নি। তারা রক্ষণশীলতা পাশে রেখেই পর্যটনকে এগিয়ে নিয়েছে। তাদের পর্যটন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এখন ৯৫ ভাগ। যারা বিনিয়োগ করেছে তারাই এর প্রচার করছে। সরকার কখনোই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। তারা পুরো বিষয়টি পেশাদারদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।
মালদ্বীপে মূলত এককেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। সেটি সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটন। তারা (মালদ্বীপ) এগিয়ে আছে বিদেশি পর্যটকের কারণে। শতভাগ মুসলিম অধ্যূষিত হবার পরও বেশ কিছু ধর্মীয় বিধি নিষেধ থাকার পরও সেখানে পর্যটকরা আসেন। তবে লোকাল এরিয়ার বাইরে তারা বিদেশীদের জন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। বিশেষ করে বীচ এলাকায় নির্বিঘ্নে পর্যটকরা তাদের সময় ব্যয় করতে পারেন। সেগুলোতে স্থানীয়দের সেভাবে যেতেও দেখা যায় না।
মালদ্বীপ শতভাগ মুসলিম একটি দেশ। এখানে স্থানীয় অধিবাসীরা যেসব দ্বীপে বাস করেন সেখানে ধর্মীয় বিষয়গুলোতে তারা বেশ সচেতন। এরপরেও তারা ধর্মীয় শ্রদ্ধার জায়গাটিকে অটুট রেখেই পর্যটন খাতকে উন্নত করেছে। রিসোর্ট আইল্যান্ডগুলোতে আপনি বিনোদনের জন্য সব করতে পারেন, কিন্তু স্থানীয় দ্বীপগুলোতে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। এ জন্য এখানে লাখ লাখ পর্যটক আসছেন। বিশ্বসেরা যত হোটেল রিসোর্ট ব্র্যান্ড আছে, তাদের প্রত্যেকেরই রিসোর্ট এখানে আছে। প্রত্যেকটি রিসোর্টেই নিজেদের মতো করে পর্যটন ব্যবস্থাপনা রাখার অধিকার রয়েছে। সেখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করে না।
মালদ্বীপের সৌন্দর্যে সবাই মুগ্ধ। আর এ কারণে তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই মালদ্বীপ ভ্রমণে ভিড় করেন। বর্তমানে মালদ্বীপ সবারই স্বপ্নের গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সারা বছরই এ দেশে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। তবে অত্যন্ত সুন্দর এই স্থানে গিয়েও কিন্তু মানতে হবে কিছু নিয়ম-কানুন। না হলে আপনি বিপদে পড়তে পারে। তাই মালদ্বীপে যাওয়ার কথা পরিকল্পনা করলে প্রথমেই জেনে নিন সেখানে ঘোরাঘুরির সময় কোন কাজগুলো করলে বিপদে পড়বেন। মালদ্বীপের রাস্তায় এমন কাজ করা নিষেধ, যা মানুষকে বিব্রত করবে। এমনকি রাস্তায় হাঁটার সময় গালে চুম্বন করাকেও সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
মুসলিম দেশ হওয়ায় মালদ্বীপে প্রকাশ্যে মদ খাওয়া নিষিদ্ধ। যদি কোনো দ্বীপের হোটেল বা রিসোর্টে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। মুসলিম দেশ হওয়ায় মালদ্বীপ গিয়ে জনসমক্ষে বিকিনি বা অতিরিক্ত খোলামেলা পোশাক পরার সুযোগ একেবারেই কম।
শতভাগ মুসলমানের এই দেশের মনেপ্রাণে ধর্মপালন করেন। রাজধানী মালেসহ পাশের বিলিকিলি, হুনহুমালে বা আরেকটু দূরের মাফুশি দ্বীপে গেলেই দেখা মেলে মাথায় স্কার্ফ কিংবা হিজাব পরা মালদ্বীপের মেয়েদের। ভারতীয় মহাসাগরের এই দেশে প্রায় ৯৬ ভাগ নারীই হিজাব পরে রাস্তায় বের হন। মালদ্বীপের নারীদের মধ্যে কেউ পুরো শরীর কালো বোরকায় ঢাকা। কেউ শরীরের ওপরের অংশ ঢেকে রাখেন। কেউবা শরীরের সঙ্গে লেগে থাকা পোশাকের সঙ্গে শুধু মাথায় স্কার্ফ পরেন। শুধু নারীরাই নয়, মালদ্বীপের পুরুষরাও ব্যাপকহারে মসজিদমুখী। মালেতে নামাজের সময় হলেই সব দোকানপাঠ বন্ধ রাখা হয়। আজান হলেই দোকানি দরজার সামনে ‘ক্লোজড’ (বন্ধ) প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে মসজিদে চলে যান।
মালে শহরে কিছু নারী আধুনিক পোশাক পরলেও দ্বীপগুলোতে হিজাব ছাড়া কোনো নারী তেমন দেখা যায় না। মালদ্বীপের মেয়ে বা মায়েরা সমুদ্র বিচে নামলেও বোরকা পরেই নামেন। পশ্চিমা দেশের পর্যটকরা এই দেশে এসে স্বল্প পোশাক পরেই নেমে পড়েন সাগরে। তবে মালেতে এই স্বল্প পোশাক পরে কেউ বিচে যেতে পারবে না। বিশেষ করে নারীরা। বিচের পাশে লেখা সাইনবোর্ডে- ‘নো বিকিনি’।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের পাশাপাশি মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগির জন্য মালদ্বীপে রয়েছে ছোট বড় অনেক মসজিদ। তবে রাজধানি মালেতে মসজিদের সংখ্যা বেশি। ২০১৮ সালে মালেতে উদ্বোধন করা হয় মালদ্বীপের সবচেয়ে বড় মসজিদ কিং সালমান মসজিদ। নান্দনিকতায়ও এটি অদ্বিতীয়। এ মসজিদে একসঙ্গে ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।