হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর জীবন ও অবদান

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ক্যালিগ্রাফি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)

ক্যালিগ্রাফি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)

সাহাবি হজরত মুয়াবিয়া (রা.) ৬০৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর। তার বংশ পঞ্চম পুরুষে এসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবিবা (রা.)-এর সহোদর ভাই ছিলেন।

হজরত মুয়াবিয়া (রা.) আল্লাহপ্রদত্ত অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। রাসুল (সা.)-এর কাছে তিনি এতই নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন যে তিনি তাকে অহি লেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি ফকিহ (ইসলামি আইনে বিশেষজ্ঞ) সাহাবিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে তার সূত্রে ১৬৩টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সর্বপ্রথম তিনিই ইসলামের ইতিহাস রচনা করেছেন।

হজরত উম্মে হারাম (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের সর্বপ্রথম সামুদ্রিক অভিযানে অংশগ্রহণকারী বাহিনীর জন্য জান্নাত অবধারিত।’ -সহিহ বোখারি : ২৯২৪

বিজ্ঞাপন

বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাল্লাব (রহ.) বলেন, ‘হাদিসটিতে হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। কেননা হজরত মুয়াবিয়া (রা.) ছিলেন ওই বাহিনীর সিপাহসালার।’ -ফাতহুল বারী : ৬/১০২

হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবি উমায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) মুয়াবিয়ার জন্য এ দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! মুয়াবিয়াকে সঠিক পথে পরিচালনা করুন ও তাকে পথপ্রদর্শক হিসেবে কবুল করুন।’ -জামে তিরমিজি : ৩৮৪২

একবার হজরত মুয়াবিয়া (রা.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অজুতে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন, তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, ‘হে মুয়াবিয়া, যদি তোমাকে আমির নিযুক্ত করা হয়, তাহলে আল্লাহকে ভয় করবে এবং ইনসাফ করবে। মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, সেদিন থেকেই আমার বিশ্বাস জন্মেছিল যে, এ কঠিন দায়িত্ব আমার ওপর এসে পড়বে।’ -মুসনাদে আহমাদ : ১৬৯৩৩

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, একদিন হজরত জিবরাঈল (আ.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মদ (সা.), মুয়াবিয়াকে সদুপদেশ দিন, কেননা সে আল্লাহর কিতাবের আমানতদার ও উত্তম আমানতদার।’ -আল মুজামুল আওসাত : ৩৯০২

অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণে হজরত ওমর (রা.) তার খেলাফতকালে তাকে দামেস্কের আমির নিযুক্ত করেছিলেন। হজরত ওসমান (রা.) তাকে পুরো শামের (সিরিয়ার) আমির নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের খেলাফতকালে মুয়াবিয়া (রা.) ইসলামের বহু যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে অনেক দেশ জয় করেছিলেন।

হজরত মুয়াবিয়া (রা.) চরম সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সব ফেতনা দমন করে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনেন। পরিস্থিতি এমন হয় যে, নারীরা রাতে তাদের ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতেও ভয় করত না, কোনো ব্যক্তি পথে পড়ে থাকা কারো জিনিস ছুঁয়ে দেখার সাহস পেত না। তার শাসনামলে সারা পৃথিবীতে কোনো মুসলমান ভিক্ষুক ছিল না। রাজ্যের অমুসলিম নাগরিকদেরও শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম যোগাযোগের জন্য ডাক বিভাগ চালু করেন এবং সরকারি দলিল-দস্তাবেজ সংরক্ষণের জন্য পৃথক বিভাগ চালু করেন। তিনি মুসলিম বাহিনীকে সুশৃঙ্খল রূপ দেন ও ইসলামের দাওয়াত বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। -তারিখে ত্বাবারি, মুজামুল বুলদান : ৪/৩২৩

পর্তুগাল থেকে চীন পর্যন্ত এবং আফ্রিকা থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ৬৫ লাখ বর্গমাইল বিস্তৃত অঞ্চল তার শাসনামলে ইসলামের পতাকাতলে চলে আসে। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর খেলাফতের গুরুদায়িত্ব পালন করেন। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।