চলার পথে পালনীয় সওয়াবের কাজ
মানুষ হিসেবে আল্লাহতায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত-বন্দেগির জন্য। তাই ফরজ ইবাদতগুলো নিয়মিত আদায়ের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে। এ লক্ষে এখানে চলার পথে সহজে করা যায়, এমন কিছু আমলের কথা উল্লেখ করা হলো। যেগুলো পালনের জন্য আলাদা কোনো সময় ব্যয় করতে হয় না। শুধুমাত্র নিজ ইচ্ছা আর মনোভাব দ্বারা সম্পন্ন করা যায়।
সালাম আদান-প্রদান
চলাফেরায় সালাম আদান-প্রদান অনেক সওয়াবের কাজ। সালামের সাধারণ নিয়ম হলো, আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাঁটা ব্যক্তিকে আর হেঁটে চলা ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আরোহী পথচারীকে, পথচারী উপবিষ্টকে ও অল্প মানুষ বেশি মানুষকে সালাম দেবে। -সহিহ বোখারি: ৬২৩২
সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, হেঁটে চলা মানুষ উপবিষ্টকে সালাম দেবে। বসা ব্যক্তির দায়িত্ব সালামের জবাব দেওয়া। দুনিয়া ও আখেরাতে সালামের ফায়েদা অনেক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মুমিন হওয়া ছাড়া জান্নাতে যেতে পারবে না, আর পরস্পরে (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) ভালোবাসা ছাড়া মুমিন হতে পারবে না। আমি কী তোমাদের এমন বিষয়ের কথা বলবো না, যার দ্বারা তোমাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? নিজেদের মাঝে সালামের প্রসার ঘটাও। -সহিহ মুসলিম: ৫৪
সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা
এটা এমন এক আমল, যা প্রত্যেক মুমিন ও মুসলমানের জন্য সর্বদা জরুরি। বিশেষত রাস্তাঘাটে। কারণ সেখানেই সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত হয়। তাই ‘সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করাকে বিশেষভাবে রাস্তার হকের মাঝে গণ্য করা হয়েছে। এটা শুধু চলাচলের সময় নয়, সব অবস্থায়ই এটি মুমিনের দায়িত্ব; কোনো অন্যায় দেখলে সাধ্যমতো তা দূর করার চেষ্টা করা।
পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেওয়া
পথ চলতে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যায়, যারা পথ চেনে না। এমন পথিকদের পথ দেখিয়ে দেওয়া মহৎ নেক কাজ। এর গুরুত্ব কেবল পথহারা লোকেরাই উপলদ্ধি করতে পারে। এটিকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকা বলে গণ্য করেছেন। তিনি বলেছেন, পথ না চেনা ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেওয়া তোমার জন্য একটি সদকা। -জামে তিরমিজি: ১৯৫৬
এই আমলের অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয় হলো- অন্ধ, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের রাস্তা পারাপারে সাহযোগিতা করা।
অত্যাচারিত ও বিপদগ্রস্তের সাহায্য করা
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। নানা কারণে রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে নানা স্থানে মানুষ অত্যাচারের শিকার হয়, বিপদের সম্মুখীন হয়। ফলে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। কাউকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলমানগণ পরস্পর ভাই ভাই। কেউ কারো প্রতি জুলুম করে না এবং শত্রুর কাছে হস্তান্তর করে না। যেব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে কোনো মুসলমানের একটি কষ্ট লাঘব করবে আল্লাহ তার কেয়ামতের দিনের একটি কষ্ট লাঘব করবেন। যেব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটিও গোপন রাখবেন। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৯৩
ইসলাম তো বিপদাপন্ন জীব-জন্তুর সহায়তাকেও সওয়াবের কাজ বলে বিবেচনা করে। এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক প্রাণীতেই আজর-সওয়াব রয়েছে। -সহিহ বোখারি: ২৪৬৬
বোঝা বহনকারীকে সহযোগিতা করা
রাস্তায় চলাচলকারীদের মধ্যে কেউ থাকে খালি হাতে, কারো সঙ্গে থাকে ভারি বোঝা। ভারি বোঝা যদিও একা বহন করা যায়, কিন্তু উঠানো বা নামানোর সময় কারো না কারো সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। যেব্যক্তি এ কাজে সাহায্য করে তার জন্য বোঝা বহনকারীর হৃদয় থেকে দোয়া আসে, এটাই স্বাভাবিক।
মাথায় করে ভারি বোঝা বহন করা কষ্টকর। এক্ষেত্রে যদি এমন হয়, আমার বাহনে আমি কারো ভারি বোঝা বহন করে দিলাম। সেটা উঠানো-নামানোর চেয়ে আরো বেশি ফজিলতের। তেমনি আমার বাহন আছে, আরেকজনের নেই। আমার বাহনে আরেকজনকে নিতে পারি। এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো, আমি ও সে একই দিকে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে যদি আমার বাহনে তাকে উঠিয়ে নেই- এটা হবে অনেক বড় সওয়াবের কাজ। হাদিস শরিফে এসেছে, কোনো ব্যক্তিকে সওয়ারিতে ওঠানো বা তার সামানা বহনে সহযোগিতা করাও একটি সদকা। -সহিহ বোখারি: ২৯৮৯
ভালো কথা বলা
পথে একে অন্যের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। কুশলাদি বিনিময় হয়। এক্ষেত্রে সহাস্য বদনে সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত। কারণ, অনর্থক, অশালীন, অন্যায় কথার কারণে অনেক সময় পথে ফ্যাসাদ হয়। আর মুমিনের শানই হলো ভালো কথা বলা; অন্যথায় চুপ থাকা। হাদিস শরিফে এসেছে, যেব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। -সহিহ বোখারি: ৬০১৮
আর সবচেয়ে ভালো কথা হলো, আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা। ভালো কাজের প্রতি আহ্বান করা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, কথায় কে উত্তম ওই ব্যক্তির চেয়ে, যে মানুষকে আল্লাহর প্রতি আহ্বান করে। -সূরা হামীম আস সাজদাহ: ৩৩
হাঁচির জবাব দেওয়া
সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ, এটি মুসলিমের একটি বৈশিষ্ট্য। দৈনন্দিন জীবনের মাসনূন দোয়াগুলো আল্লাহর স্মরণের মাধ্যম। হাঁচি আসা, এটি আল্লাহর রহমত। এর মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক জীবাণু বের হয়ে যায়। তাই হাঁচি এলে মুমিন আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে বলে, আলহামদুলিল্লাহ। হাদিস শরিফে একেও পথ চলার হক বলা হয়েছে। সুতরাং পথেও এ সুন্নতের প্রতি খেয়াল রাখা কর্তব্য।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, কেউ হাঁচি দিলে বলবে, আলহামদুলিল্লাহ। এর জবাবে আশপাশে যারা থাকবে, বলবে, ইয়ারহামুকাল্লাহ। প্রতি উত্তরে হাঁচিদাতা বলবে, ইয়াহদিকুমুল্লাহু ওয়া ইউছলিহু বালাকুম। -সহিহ বোখারি: ৩৭১৫