পাপ মোচনকারী সহজ সাতটি আমল
গোনাহ এমন একটি বিষয়, যা একের পর এক করতে থাকলে মুমিন নারী-পুরুষের ঈমানি নূর নিভে যেতে থাকে। যা এক সময় তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে। পাপের অশুভ পরিণতি ও তার বহুবিধ ক্ষতিকর দিক রয়েছে। পাপের কারণে দ্বীনের ইলম পাপীর হৃদয়ে প্রবেশ করে না, পাপে জড়িত থাকলে আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব হয় না, আল্লাহর অনুগ্রহ পূর্ণরূপে তার প্রতি থাকে না, পাপী দুনিয়াতেই লাঞ্ছনার স্বীকার হয় (এছাড়া আখেরাতে অবমাননাকর শাস্তি তো আছেই), লজ্জা-শরম দূর হয়ে যায়, গোনাহের পরিণতি জাহান্নাম, পাপের কারণে মানুষ হিংস্র ও পশু স্বভাবের হয়ে ওঠে, বরকত চলে যায় ও হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে যায়।
শরিয়তে এমন অনেক আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। এখানে কোরআন-হাদিসের আলোকে এরকম কিছু আমল তুলে ধরা হলো-
১. পরিপূর্ণভাবে অজু করা ও মসজিদে গমন করা: হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা জানাব না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনি বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থায়ও পূর্ণাঙ্গরূপে অজু করা, নামাজের জন্য অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষায় থাকা।
হজতর রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি এভাবে (উত্তমরূপে) অজু করে, তার পূর্বেকার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ফলে তার সালাত ও মসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত আমল বলে গণ্য হয়।
২. অজুর পর নামাজ আদায় করা: হজরত উসমান বিন আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পূর্ণাঙ্গরূপে অজু করার পর বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এ অজুর ন্যায় অজু করার পর একাগ্রচিত্তে দু’রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এ সময় অন্য কোনো ধারণা তার অন্তরে উদয় হবে না। তাহলে তার পূর্বেকার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’
৩. বিনয় ও একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ আদায় করা: হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করবে, সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করবে এবং নামাজের রুকু-সিজদাহ ও খুশূ-খুজুকে পরিপূর্ণ করবে, তার জন্য আল্লাহর ওপর প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন। আর যে এরূপ করবে না, তার জন্য কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছে করলে ক্ষমা করবেন অথবা শাস্তি দেবেন।’
৪. জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা: হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে ফরজ নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়।
৫. বেশি বেশি সিজদা করা: মাদান ইবনে আবু ত্বালহা আল ইয়ামাবি হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আজাদকৃত গোলাম ছাওবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা আমি তাকে প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তখনও চুপ থাকলেন। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, ‘তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা এক ধাপ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
৬. জুমার দিন মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করা ও নামাজ আদায় করা: হজরত সালমান ফারসি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে। অতঃপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁকা করে না। অতঃপর তার নির্ধারিত নামাজ (ইমাম খুতবায় দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত যথাসাধ্য) আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তাহলে তার সে জুমা হতে অপর জুমার মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
৭. তওবা করা: আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা নয়, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের গোনাহসমূহ পরিবর্তন করে দিবেন নেকি দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।