হজের সফরে যেসব স্থানে কষ্ট ও ঝগড়া হয়



মুফতি অহিদুল আলম, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। হজে রয়েছে ঈমানি উদ্দীপনার বিরাট উৎস। এর ঐতিহাসিক পটভূমি ও ফজিলত সম্পর্কে প্রতিটি মুসলমান কমবেশি অবগত।

হজে রয়েছে মুমিনের জন্য প্রচুর কল্যাণ। একজন মুমিন একটা সময়ের জন্য আত্মীয়-স্বজন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করে দীর্ঘ সফরের কষ্ট স্বীকার করে হজব্রত পালন করতে পারে তখনই যখন তার অন্তর আল্লাহভীতি ও ভালোবাসায় পূর্ণ হয়। তাই হজের প্রথম ও প্রধান কল্যাণ হলো- হজব্রত পালনের মাধ্যমে হাজি সাহেবরা অন্তরে নতুন করে অর্জন করে হৃদয়ের সজীবতা, প্রেমের উষ্ণতা এবং ঈমানের দৃঢ়তা।

হজের সফরে যেহেতু ঘর-বাড়ি ছেড়ে, ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়, তাই কিছুটা কষ্ট করতে হয়। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, হজের সফরে এমন কিছু স্থান রয়েছে যেখানে কষ্ট হয়, আর সেই কষ্টের কারণে অনেক মেজাজ চড়া হয়ে যায়, ফলশ্রুতিতে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। হজপালনকারীদের একান্ত কর্তব্য হলো- কষ্টের এ জায়গাগুলোতে ধৈর্য্যধারণ করা, কোনোভাবেই ঝগড়ায় লিপ্ত না হওয়া।

কষ্টের স্থানসমূহ
১. সমগ্র দুনিয়া থেকে হজকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কিছু দিনের মধ্যে জেদ্দা অথবা মদিনা এয়ারপোর্টে হজপালনকারীরা অবতরণ করেন। তাই এয়ারপোর্টের সব কাজে অস্বাভাবিক ভিড় হয়।

২. কাবা শরিফের চত্বর (মাতাফ), মসজিদে হারাম, সাফা-মারওয়া, মদিনা শরিফ, মসজিদে নববি ও রওজা শরিফ নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা অবস্থিত হওয়ায় হজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলগুলো একসঙ্গে করতে যেয়ে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়- সুতরাং এখানে একটু কষ্ট হয়।

৩. মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় একই দিনে একই স্থানে ৩০-৩২ লাখ মানুষ জমা হওয়া ও আসা-যাওয়া করতে গাড়ীতে কষ্ট হয়, পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। কখনও যান্ত্রিক গোলোযোগ দেখা দেয়, দূর্ঘটনাও ঘটে। তাই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখানে ৫-৬ গুণ সময় বেশি লাগে। ইহরাম অবস্থায় এখানে কষ্ট হয়। তাই সাবধানে থাকা।

৪. সৌদি আরবের আবহাওয়া বিশেষ করে মক্কা, মিনা, আরাফা ও মুজদালিফার তাপমাত্রা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি রুক্ষ্ম। রোদের তাপ ও গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই চলাফেরায় ছাতা রাখা, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।

৫. হজের সফরে মক্কা ও মদিনার সব কাজকর্মের জন্য সৌদি মুয়াল্লিমের দারস্ত হতে হয়। অনেক মুয়াল্লিমের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হয়। এসব কারণে পরিস্থিতি বুঝা, মেজাজ ঠাণ্ডা রাখা।

৬. ফাইভ স্টার হোটেলসহ বিলাসবহুল হোটেল মক্কা-মদিনাতে অনেক আছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অন্য স্থানের হোটেলের মতো এসব হোটেলে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। অধিকাংশ হাজি সাধারণ হোটেল বা বাড়িতে থাকেন। কিছু কিছু হোটেল বা বাড়ি এত নিম্নমানের যে- এসি, বাথরুম বা অন্যান্য বিষয়ে হাজিদের কষ্ট পোহাতে হয়।

৭. মক্কা ও মদিনার সব হোটেলে রান্না করার অনুমতি নেই। অনেক দূর থেকে কষ্ট করে খাবার পৌঁছানো হয়। নামাজের জামাতের আগে পরে ভিড় না কমা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা যায় না। আবার কখনও পুলিশের যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এমনকি আইনের খেলাফ হলে পুলিশ অনেক সময় খাবার ফেলে দেয়। তাই যথাসময় খাবার না পৌঁছানোর কারণে কষ্ট হয়।

অন্যদিকে নিম্নরুচিবোধসম্পন্ন, অতিলোভী এজেন্সি বা দায়িত্বশীলের পরিকল্পিত কৃত্রিম সঙ্কটও অনেক সময় কষ্টের কারণ হয়।

/uploads/files/OaydYvxSq2SATQ9Gi9jS2VECkq95m4IsdfPQC9jV.jpeg

যে সব স্থানে ঝগড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
হজ আল্লাহতায়ালার এমন একটি ব্যতিক্রমী বিধান- যার পবিত্রতা ও সুমহান মর্যাদা সুরক্ষার জন্য তিনি সকল প্রকার অশ্লীলতা, গালি-গালাজ, ঝগড়া ও মারামারি করা হতে কঠিনভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

হজের সফরের নিম্নোক্ত স্থানে সাধারণত ঝগড়া বেশি হয়। তাই এমন স্থানগুলো একটি ধারণা দেওয়া হলো- যাতে সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।

১. যারা হজের প্রশিক্ষণ নেয় না, কোনো আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্যে যায় না, তাবলিগ জামাতে সময় লাগায় না, হজের মাসয়ালা-মাসয়েলের ওপর পড়াশুনা করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের অবান্তর ও অন্যায় আচরণ দ্বারা হজের সফর কলুষিত হয়।

২. দুর্ভাগ্যক্রমে কোনো প্রতারক, ঠকবাজ এজেন্সির মাধ্যমে হজে গেলে তার কষ্টের শেষ থাকে না। তাই তাদের সস্তা প্রলোভন ও চটকদার কথায় আকৃষ্ট না হয়ে বরং টাকা কিছু বেশি গেলেও যথাসম্ভব নির্ভরযোগ্য এজেন্সির মাধ্যমে হজে যেতে হবে।

৩. কম টাকার প্যাকেজে গিয়ে যে সব সম্মানিত হাজি বেশি সুযোগ-সুবিধা নিতে চান, তাদের দ্বারা সাধারণত ঝগড়াটা বেশি হয়। কখনও ঝগড়া মারামারির পর্যায়ে চলে যায়।

. বাংলাদেশ থেকে প্রথমে মক্কা অথবা মদিনার হোটেলে উঠার পর। হোটেল, সীট বা ওয়াশরুম পছন্দ না হওয়ার কারণে অথবা দূরত্বের কারণে।

৫. ফিতরা অর্থাৎ শিফটিয় পদ্ধতির হজ যাত্রীরা ঝগড়া সৃষ্টি করে। হজের সময় মক্কার পার্শ্ববর্তী এলাকা আজিজিয়া, শওকিয়া, কাকিয়া বা অন্যকোনো দূরের হোটেলে যখন তাদেরকে দেওয়া হয়।

৬. খাবার নিয়ে। সুস্থ-অসুস্থ, বিভিন্ন স্বভাব ও মানসিকতার লোকেরা হজে যান, প্রত্যেকের রুচিসম্মত খাবার পরিবেশন করা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। তাই নিজের ঘরের কথা খেয়াল করা উচিৎ। সবদিন চাহিদামতো খাবার নিজের ঘরেও হয় না। মক্কা-মদিনাতে খাবার পাকানো ও হোটেলে পৌঁছানো একটি জটিল কাজ।

৭. মক্কা ও মদিনার হোটেলে পান করার পানি নিয়ে ঝগড়া হয়। অথচ কাবা শরিফ এবং মসজিদে নববিতে পর্যাপ্ত জমজম পানির ব্যবস্থা আছে। প্রতি নামাজের ওয়াক্তে একটি বোতল ভরে আনা যায় অথবা প্রয়োজনে সামান্য কিছু রিয়াল দিয়ে পানি ক্রয় করা যায়।

৮. নাস্তা নিয়ে। বাবুর্চিরা দুপুর এবং রাতের খাবার পাকাতে পাকাতে এবং সবকিছু গোছাতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই সকালে ঘুমায়। এজন্য সকালের নাস্তা তৈরি করতে সাধারণত তারা রাজি হয় না। অন্যদিকে হোটেলওয়ালারাও বিভিন্ন কারণে অনেক লোকের নাস্তা পার্সেল দিতে বিরক্তবোধ করে। এসব বিবেচনায় নিজ দায়িত্বে নাস্তা করতে পারলে ভালো হয়।

৯. মক্কা শরিফ থেকে মিনার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ঝগড়া সৃষ্টি হয়। মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশ্যে। আরাফা থেকে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে গাড়ীতে উঠা নিয়ে, গাড়ীর সীট সামনে ও পেছনে নিয়ে এবং পছন্দমতো সীট না পাওয়াকে কেন্দ্র করে কখনও কখনও তুমুল বাকযুদ্ধ ও ঝগড়া হয়।

মনে রাখবেন, সৌদি আরবের রাস্তাগুলো অনেক মসৃণ ও সুন্দর। গাড়ীর পেছনে বসলেও কোনো কষ্ট হয় না। মক্কা ও মদিনা শরিফে যাতায়াতের পথেও ঝগড়া হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় আমরা পরস্পরে সর্বোচ্চ ত্যাগ, সম্প্রীতি ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পারি।

১০. মিনায় ৫০-৬০ জন হাজির জন্য একটি তাঁবু বরাদ্দ থাকে। খুব সংকীর্ণ জায়গায় অবস্থান করতে হয়। পছন্দমতো প্রশস্ত জায়গা না পাওয়ায় অনেকের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। স্মরণ রাখতে হবে, মিনাতে শুধুমাত্র ওই রাত্রটি সকলে অবস্থান করেন। বাকি এ রাতগুলো হাজিরা চলাচলের মধ্যে থাকেন। ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা উচিত।

১১. দমে শোকর (কোরবানি) দেওয়া নিয়ে ঝগড়া হয়। উত্তম হয় নিজ হাতে কোরবানি সম্পন্ন করা। আর অন্য কারও মাধ্যমে করলে চুক্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ রিয়াল দিয়ে দিতে হবে। কত রিয়াল লাগলো না লাগলো এসব বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে কোনো সমালোচনা একেবারেই ঠিক নয়।

মুফতি অহিদুল আলম: খতিব, মসজিদ আল মাগফিরা, সেক্টর- ৩, উত্তরা, ঢাকা- ১২৩০

   

মসজিদের ইমাম থেকে সংসদ সদস্য



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
লোকসভায় শপথ নিচ্ছেন মুহিব্বুল্লাহ নদভি, ছবি: সংগৃহীত

লোকসভায় শপথ নিচ্ছেন মুহিব্বুল্লাহ নদভি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সোমবার (২৪ জুন) দুপুর ১টা। ভারতের পার্লামেন্ট ভবনের বিপরীতে অবস্থিত মসজিদে মুসল্লিরা এসেছেন জোহরের নামাজের জন্য, অথচ ইমামের দেখা নেই; তার রুমেও তালা ঝুলছে। অপেক্ষমান মুসিল্লদের মাঝে চলছিল কৌতূহলী আলোচনা, ‘ইমাম সাহেব কি আজ নামাজের ইমামতি করার সময় পাবেন?’

আলোচনা শেষ হতে না হতেই দেখা গেল, ৪৮ বছর বয়সী ইমাম মাওলানা মহিব্বুল্লাহ নদভি মসজিদে হাজির। নির্ধারিত সময়েই নামাজ শুরু হয়। নামাজ শেষে ইমাম সাহেব আবার চলে যান পার্লামেন্ট ভবনে।

সেই মসজিদের ইমাম এবার লোকসভার সদস্য হয়েছেন। মাওলানা মহিব্বুল্লাহ নদভি ভারতের উত্তর প্রদেশের রামপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় প্রথম সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে ব্যস্ত ছিলেন। সমাজবাদী পার্টির সাইকেল প্রতীকে তিনি বিজেপির এমপি ঘনশ্যাম লোধিকে ৮৭ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করে সংসদে এসেছেন।

দিল্লির সংসদ ভবনের ঠিক উল্টো দিকের মসজিদটি সংসদ মার্গ বা সংসদওয়ালি মসজিদ নামে পরিচিত। মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদটি আয়তনে বড় হলেও সেটিতে লোকজনের আনাগোনা কম। এলাকার হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী শুক্রবার জুমার নামাজে শরিক হন, অন্যান্য দিন মুসল্লির সংখ্যা খুব হয় না।

এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি জাকির হোসেন, ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ এবং এপিজে আব্দুল কালাম। প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ হামিদ আনসারিসহ বিভিন্ন সময় মন্ত্রী-এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা। এমনকি বিদেশি মুসলিম অতিথিরাও এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।

বিজেপির টিকিটে বহু হিন্দু সাধুসন্ত সংসদ সদস্য হয়েছেন। তারা গেরুয়া পোশাক পরেই সংসদে যান। কেউ কেউ মন্ত্রী। এবারও জিতেছেন বেশ কয়েকজন গেরুয়াবসনধারী। সেই ভিড়ে ভিন্ন চেহারা, ভিন্ন পোশাকে দেখা যাবে মাঝবয়সি ইমাম নদভিকে।

সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বারক ও অখিলেশ যাদবের মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ছবি: সংগৃহীত

রামপুরের সুয়ার অঞ্চলের রাজানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, মাওলানা মহিব্বুল্লাহ লখনউর দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় যাওয়ার আগে জেলার জামেউল উলুম ফুরকানিয়া থেকে কোরআনের হাফেজ হন। পরে দিল্লিতে চলে যান, যেখানে তিনি আরবি ভাষায় স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং ২০০৫ সালে পার্লামেন্ট স্ট্রিট মসজিদে ইমামের চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইমাম হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে কীভাবে আসলেন, এমন প্রশ্নে মাওলানা নদভি জানান, সমাজবাদী পার্টির পাঁচবারের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বারক এই মসজিদে নিয়মিত নামাজে আসতেন। তিনি আমাকে গত জানুয়ারিতে লখনউতে সমাজবাদী পার্টির সদর দফতরে সভাপতি অখিলেশ যাদবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এর কিছু দিন পর সম্বলের সংসদ সদস্য বারক ইন্তেকাল করেন। কিন্তু অখিলেশের সঙ্গে আমার যোগযোগ থাকে। তিনি আমাকে রামপুর থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। আমিও রাজি হয়ে যাই।

ভবিষ্যত নিয়ে সংসদ সদস্য মাওলানা মহিব্বুল্লাহ বলেন, আগামী পাঁচ বছর সংসদে রামপুরের বেকারত্ব, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলব। তার মতে, ‘আমার ফোকাস থাকবে এই তিনটি বিষয়ে। এ জন্য ইউপির মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, তাও করব।

এখনও কি মসজিদে ইমামতিও চালিয়ে যাবেন? ‘নামাজে খুব কম সময় লাগে। আর সংসদ ভবন এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে আমার বাসভবনের দূরত্ব মাত্র ৫০ গজ। সোমবার সংসদের প্রথম দিন ছিল, আমি নামাজের ইমামতিও করেছি এবং সংসদেও উপস্থিত ছিলাম’ তিনি বলেছিলেন।

সোমবার বিকাল সোয়া পাঁচটায় মাওলানা মহিব্বুল্লাহ আবার সংসদ ভবন থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হয়ে আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করেন। মঙ্গলবার তিনি এমপি হিসেবে শপথ নেন। শপথ নিয়ে ফিরে এসে কথা দিয়েছেন, ‘ইমামের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংসদ এবং রামপুরের প্রতিও কর্তব্য পালন করবেন।’

;

ঢাকার বুকে কাবার আদলে মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদ আল মোস্তফা, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদ আল মোস্তফা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। এই শহরের অলি-গলিতে রয়েছে নতুন-পুরাতন অসংখ্য মসজিদ। কিন্তু রাজধানীর ভাটারা এলাকায় অবস্থিত মসজিদ আল মোস্তফা যেন সবার থেকে আলাদা।

অনিন্দ্যসুন্দর এই মসজিদের অবস্থান রাজধানীর মাদানি এভিনিউ সড়কে। ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির প্রবেশমুখে মসজিদটির অবস্থান। মসজিদের একদিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, অপরদিকে ইউনাইটেড প্রকল্প।

পবিত্র কাবার আদলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। দেখলে মনে হবে মসজিদটির নির্মাণ কাঠামোতে কাবা শরিফের ছোঁয়া লেগে আছে। চোখধাঁধানো এই মসজিদের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো, সামনের দিকে কালো রংয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পবিত্র কাবার আকৃতি। দেয়ালে সোনালী রং দিয়ে লেখা হয়েছে আল্লাহর নাম এবং তার প্রিয় বান্দা শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম। এর সৌন্দর্য দূর থেকেই অবলোকন করা যায়।

রাতের দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদের ভেতরে মিম্বরের দেয়ালের ডিজাইনও একই। ওপরের দিকে বড় করে সোনালী রং দিয়ে লেখা হয়েছে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)।

ইউনাইটেড গ্রুপের আইকনিক এই প্রজেক্ট মসজিদ আল মোস্তফায় বেশ কিছু ভিন্নতা রয়েছে। নামাজের কাতারে বেশ কয়েকটি বেঞ্চ রাখা হয়েছে। যা অন্যকোনো মসজিদে দেখা যায় না। কেউ ক্লান্ত হলে বসতে পারেন। আবার কেউ হেলানও দিতে পারেন।

মসজিদটি রাজধানীর ১০০ ফিটে মাদানি এভিনিউয়ে ইউনাইটেড সিটিতে অবস্থিত। পাঁচতলা বিশিষ্ট এই মসজিদে আলাদা কোনো জানালা নেই। এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যা প্রাকৃতিক আলোয় ভরপুর। দেশের অন্যকোনো মসজিদের প্রতিটি ফ্লোর থেকে ইমাম-খতিবকে দেখা যায় না। কিন্তু মসজিদ আল মোস্তফার প্রতিটি ফ্লোর থেকেই ইমাম-খতিবকে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা নামাজের জায়গা। পুরুষ-নারী মিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ১১ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।

নান্দনিক ডিজাইনের কারণে এটি এখন শুধুমাত্র মসজিদ নয়, পরিণত হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রে। দেশের বিভিন্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন দেখতে আসেন এই মসজিদের অপরুপ সৌন্দর্য। মসজিদের চারপাশে চারটি খেজুর গাছ লাগানো হয়েছে। যার কোনোটিতে খেজুরও দেখা যায়। রয়েছে চোখজুড়ানো পানির ফোয়ারা। দর্শনার্থীরা বিমোহিত হয় এর গঠন কাঠামো আর চারপাশের সবুজেঘেরা প্রকৃতির ছোঁয়ায়।

মসজিদের ভেতরের দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদ আল মোস্তফায় রয়েছে দুটি চলন্ত সিড়ি। লাগানো হয়েছে চমৎকার ঝাড় বাতি। যা এখনও চালু হয়নি। চীন থেকে আনা হয়েছে মেঝেতে বিছানোর কার্পেট। লাগানো হয়েছে উন্নত মানের সাউন্ড সিস্টেম। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনের মাধ্যমে শীতল রাখা হয় মসজিদ। আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের অজুখানা। যেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বেসিন। যারা গাড়ি নিয়ে নামাজে আসেন তাদের জন্য রয়েছে স্বস্তি। কারণ মসজিদের নিচে বিশাল পার্কিংয়ে ১০৫টি গাড়ি রাখা যায়। জনশ্রুতি রয়েছে, মসজিদ আল মোস্তফার নির্মাণ খরচ তিনশ’ কোটি টাকার বেশি।

সুউচ্চ বিশেষ ধরনের একটি গম্বুজ রয়েছে। যার রং সোনালী। গম্বুজ ও পাশে থাকা বিশাল উচ্চতার মিনারের কাজ এখনও শেষ হয়নি। গম্বুজ ও মিনারটি মসজিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাতে যখন মসজিদের সব বাতি জ্বলে ওঠে, তখন তৈরি হয় বিমুগ্ধ এক অপার্থিব পরিবেশ। যে পরিবেশ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সৎ পথে চলতে, সততা আর বিবেক দিয়ে নতুন জীবন গড়তে।

মসজিদটি দেখতে হলে প্রথমে আসতে হবে রাজধানীর ভাটারা থানার সামনে। তারপর অটোরিক্সায় যেতে হবে একশফিট ইউনাইটড ইউনিভার্সিটির সামনে।

;

হাজিদের সেবায় বিশাল বহর, প্রয়োজনে খোঁজ মেলে না কারও



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
কংকর মারার স্থানে যাওয়ার সময় হাজিরা বেশি পথ হারান, ছবি: সংগৃহীত

কংকর মারার স্থানে যাওয়ার সময় হাজিরা বেশি পথ হারান, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এক সিনিয়র সাংবাদিক পবিত্র হজ পালন শেষে এখন মদিনায় অবস্থান করছেন। সোমবার (২৪ জুন) তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শরীর ব্যাথা ও ১০৩ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে গেলাম মদিনায় হজ মিশনে। পুরো বর্ণনা শোনার মতো সময় মনে হচ্ছে তাদের নেই। চিকিৎসক এজিথ্রোমাইসিন আর প্যারাসিটামল দিলেন। এক‌ই এন্টিবায়োটিক তারা হাতের ফোস্কার জন্য‌ও দিয়েছে এক রোগীকে। সবরোগের মহৌষধ এক এন্টি বায়োটিক! হজ মিশনের এই দূরবস্থা কবে কাটবে?’

ওই স্ট্যাটাসের নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘মাকে নিয়ে গিয়েছিলাম অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু তারা একটুও কেয়ার করেনি; ওষুধও দেয়নি-নিদারুণ অবহেলা করেছে। তাদের কাজ নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘২০০০ সালে প্রথমবার যখন যাই, তখনও মিশনে কর্মকাণ্ড প্রত‍্যক্ষ করতে গিয়ে হতাশ হই।’

মদিনায় বাংলাদেশের হজ মিশন নিয়ে এমন অভিযোগ নতুন কিছু নয়, মক্কা হজ মিশন নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিশেষ করে এবার হজের পাঁচ দিন মিনা-আরাফাত ও মুজদালিফায় হজ মিশনের লোকদের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। অথচ বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করার লক্ষে চলতি বছর ৪৫৩ জন ব্যক্তি সরকারি খরচে হজে গেছেন। এ জন্য সরকারের ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সময়ে এই বিশাল বহরের কারও দেখা মেলেনি বলে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপকালে অভিযোগ করেছেন সরকারি-বেসরকারি হাজিরা।

আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফা ও বিশেষ করে মিনায় মানুষকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। মুজদালিফায় খোলা ময়দান থেকে জামারাত যাওয়া এবং জামারাত থেকে দলছুট হাজিদের নির্দিষ্ট তাঁবু চিনতে না পারার কারণে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়েছে। ছায়া ও পানিহীন গরম পরিবেশে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবকদের দেখা মিললেও বাংলাদেশি কোনো স্বেচ্ছাসেবকের দেখা মেলেনি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার মিনার যে ম্যাপ হজপোর্টালে আপলোড করেছে, তাতে রয়েছে মারাত্মক ভুল। ৫৮ নম্বর ও ৫৯ নম্বর মক্তবের স্থান অদল-বদল হয়েছে। এই ম্যাপ দেখে আরও ঘুরতে হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে হজযাত্রীদের জন্য কোনো কার্যকারী হেল্পলাইন নেই, সবক্ষেত্রে হাজিদের প্রতি দায়সারা ভাব। সরকারি খরচে বিশাল বহরের হজসেবকদের থেকে সেবা পাওয়া নিতান্তই ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌদি আরব থেকে এভাবেই নিজেদের অসহায়ত্ব ও কষ্টের কথা বলছিলেন এক হজযাত্রী।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে যাওয়া অবসরপ্রাপ্ত ওই আমলা অত্যন্ত সচেতনভাবেই নিজের কষ্টের বদলে অন্য হাজিদের কষ্টের কথা বলছিলেন। তার মতে, মিনা-আরাফাত-মুজদালিফা ও জামারাতেই তো হজের সব। এখানেই যদি কোনো স্বেচ্ছাসেবকের দেখা না মেলে, তাহলে এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু নেই।

সুমাইয়া নামের এক নারী পরিবারের ৭ জন সদস্যসহ হজ পালনে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। তার অভিজ্ঞতা আরও খারাপ। তার মতে, ‘আমি জানি না, এ বছর কি হয়েছে! এই কয়দিন অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হলো। সব হাজিদেরই কষ্ট পেতে হয়েছে। সৌদি সরকার, বাংলাদেশ সরকার কিংবা মোয়াল্লেমও ভালো আচরণ করেননি। ৪৫ ডিগ্রী গরমে ১ বোতল পানির জন্য রীতিমতো কান্নাকাটি করেছে লোকজন। চারদিকে মানুষ কাঁদছে। তীব্র গরমে সবাই একটু আশ্রয় ও ছায়ার সন্ধান করেছে। পাকিস্তান ও ভারতের প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক রাস্তায় নিজ নিজ দেশের হাজিদের সেবা দিয়েছে। কিন্তু কোনো বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকের দেখা মেলেনি।’

চলতি বছর হাজি সেবার নামে সরকারি খরচে হজে যাওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সেই সিদ্ধান্ত মানেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়। কারণ এবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৩০ কর্মকর্তা হজে গেছেন। আবার হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনসহ হজযাত্রীদের সহায়তার জন্য সরকারি খরচে হজে গেছে ১০ সদস্যের একটি গ্রুপ।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের কর্মকর্তা ও কয়েকজন মিডিয়াকর্মী নানাভাবে তদবির করে রাষ্ট্রীয় অর্থে হজে যাওয়ার দলে যুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মন্ত্রী তাদের পছন্দের কয়েকজনকে এই দলে যুক্ত করেছেন। এই তালিকায় আছেন একাধিকবার হজে যাওয়া ব্যক্তিরাও। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হলেও হাজিরা কোনোভাবেই উপকৃত হননি, সেটা হাজিদের কথাতেই বেশ স্পষ্ট।

যদিও হজযাত্রীদের সেবায় পাঠানোদের শর্ত দেওয়া হয়েছে, হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করা। কিন্তু কে কোন ধরনের সেবা প্রদান করবেন তা স্পষ্ট বলা হয়নি। আরও বলা হয়েছে, টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন মর্মে বিবেচিত হবেন। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রামের বিষয়ে কিছু বলা নেই। সরকারি খরচে হজে যাওয়ার তালিকায় অনেক ব্যক্তির হজ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই।

তালিকাভুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে বার্তা২৪.কমের কথা হয়েছে, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে না পারলেও ‘হাজি সাহেবদের সেবা’ করতে গেছেন- এমন একটি সাধারণ উত্তর পাওয়া গেছে।

আর ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে হাজি সেবা দলের সদস্যদের হজ করার কোনো সুযোগ নেই। তালিকাভুক্তরা বলছেন, প্রতিবছর বলা হয় হজ করা যাবে না। কিন্তু সবাই হজ করে আসেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার সরকারি খরচে হজে যাওয়া ব্যক্তিরা বিমানের টিকিট বাবদ এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৩৫ হাজার টাকা করে হজ অফিসে জমা দিতে হবে খাওয়ার খরচ বাবদ। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিমানভাড়ার বাইরে সব খরচ সরকার বহন করবে। একেকজনের পেছনে সরকারের খরচ হবে চার লাখ টাকা।

হজপোর্টালে আপলোড করা মিনার ম্যাপ, ছবি: সংগৃহীত 

চলতি বছর হাজিদের সেবায় সৌদি আরবে অনেকগুলো দল গিয়েছে। ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে হজ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাতজন সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিব, দুজন অতিরিক্ত সচিব, দুজন সংসদ সদস্য এবং একজন নির্বাচন কমিশনার। ৫৫ সদস্যের হজ প্রশাসনিক দলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের কর্মকর্তা আছেন ২২ জন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ৩৩ জন। হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী ৭৪ সদস্যের দলে রয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ২২ পিয়ন এবং ১২ জন গাড়িচালক। ২৫ সদস্যের কারিগরি দলে আছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাতজন কম্পিউটার অপারেটর। সমন্বিত হজ চিকিৎসা দলে আছেন ২৮৯ জন। এর মধ্যে ৮৫ জন চিকিৎসক, ৫৫ জন নার্স, ২৪ জন ফার্মাসিস্ট, ২৫ জন ওটি/ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। এখানেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ইসলামিক মিশনে কর্মরতদের সংখ্যা অনেক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এসব দলের অনেক কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দলের কাজ সম্পর্কে কিছু জানেন না।

অন্যদিকে সরকারি খরচে হজে নিতে এবার সাংবাদিকদের নামে অসাংবাদিকদের নিয়ে দল গঠন করার অভিযোগ উঠেছে। ধর্মমন্ত্রী ও সচিব তাদের নিজ এলাকার তিনজন সাংবাদিকের নাম দিয়ে ১০ জনের একটি তালিকা করেন। এখানেও চালাকির আশ্রয় নেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। সাংবাদিকদের তালিকা প্রকাশের প্রজ্ঞাপনে কে কোন গণমাধ্যমে কর্মরত সেটা উল্লেখ না করে তাদের নাম ও পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। তাদের মক্কা, মদিনা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানসহ বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনসহ হজযাত্রীদের সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুই একজন বাদে আর কারো কোনো সংবাদ পরিবেশন নজরে আসেনি।

গত বছর (২০২৩) হাজিদের সেবায় গিয়ে না জানিয়ে তায়েফ ভ্রমণ করার দায়ে ৭ জনকে শোকজ করা হয়। অন্যদিকে চলতি বছরের সমন্বিত হজ চিকিৎসক দলে নার্স না হয়েও নার্স হিসেবে তালিকাভুক্তি, বয়স বেশিসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে এক বা একাধিকবার চিকিৎসক দলে নাম থাকা নয় নার্সের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল রাখে, ফলে তারা সৌদি যেতে পারেননি। এর আগে নানা অভিযোগে তালিকা সংশোধন চারজনের বাদ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এসব ঘটনায় সহজেই অনুমান করা হয়, সেবার নামে সৌদি আরবে যাওয়ার এত মরিয়া চেষ্টা কেন? অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ মিশনের একাধিক কর্তকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া মেলেনি।

;

দেশে মসজিদের সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মসজিদ রয়েছে, এসব মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-মোয়াজ্জিন কর্মরত- বলে সংসদে জানিয়েছে ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্যের প্রশ্নে মন্ত্রী এই তথ্য জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী।

তিনি জানান, দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-মোয়াজ্জিন কর্মরত।

মসজিদগুলোর মধ্যে বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদ, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ এবং জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের তিনজন খতিব, ছয়জন পেশ ইমাম ও ছয়জন মোয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত সরকারিভাবে প্রদান করা হয়।

আর প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় একজন ইমাম, একজন মোয়াজ্জিন ও একজন খাদেমকে বর্তমানে পর্যায়ক্রমে সম্মানীর ভিত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ৫৬৪টি মডেল মসজিদের রাজস্ব খাতে পদ সৃজনের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। পদ সৃজনের পর তাদের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত বেতন স্কেল থেকে প্রদান করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারাদেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে ৪৯ হাজার ৭১৯ জন ইমাম ও মোয়াজ্জিন কর্মরত রয়েছেন। তাদেরকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা হারে সম্মানী প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের পরিধি বাড়িয়ে দেশের অন্যান্য ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের পর্যায়ক্রমে সন্মানীর আওতায় আনা হবে- ইনশাআল্লাহ।

ইমাম ও মোয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় প্রতিবছর ন্যূনতম ৫৫০০ জনকে ৪ হাজার টাকা হারে মোট ২ কোটি ২০ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়। তবে ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আর্থিক সাহায্য গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইমাম ও মোয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় প্রতিবছর ৬০০ জনকে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার ও ২৫ হাজার-এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে সর্বমোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকা সুদবিহীন ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ইমাম ও মোয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের আয়বর্ধক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। ট্রাস্টের আয় বৃদ্ধি পেলে ভবিষ্যতে দেশের সব ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের অনুদানের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে দেশের সব মসজিদের ডেটাবেইস তৈরির কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

;