সোয়া ৩ লাখ থেকে শুরু হজ প্যাকেজ
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের আগ্রহী করতে সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করতে চায় সরকার। তাই সরকার ঘোষিত সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য থাকছে সোয়া ৩ লাখ টাকা। বিগত দিনের রীতি ভেঙে এবার তিনটি হজ প্যাকেজ করার খবর পাওয়া গেছে।
বিগত বছর সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এবার সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণে ২৯ হাজার টাকা কমানো হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে দু’টি প্যাকেজ ছিল। ২০১৯ সালে প্যাকেজ (১) ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫’শ টাকা এবং প্যাকেজ (২) ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল।
এবার সেখানে তিনটি প্যাকেজ করা হচ্ছে। হজ প্যাকেজ (১) ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা, প্যাকেজ (২) ৩ লাখ ৬০ হাজার এবং প্যাকেজ (৩) তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
১৪৪১ হিজরি সালের প্রস্তাবিত হজ প্যাকেজ শিগগিরই মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। সূত্র জানিয়েছে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের কথা রয়েছে। কোনো কারণে পিছিয়ে গেলে ২৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত হবে। প্রস্তাবিত হজ প্যাকেজ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজপালনের জন্য সৌদি আরব যাবেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং ১ লাখ ২০ হাজার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। এ যাবত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ৯৫৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ লাখ ১০ হাজার ৪৯ জন হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।
এবার বিমানের জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি না পেলেও গত বছরের চেয়ে বিমান এবার হজ টিকিটের মূল্য ১২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহর আপত্তির মুখে আরও দুই হাজার টাকা কমিয়ে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা প্রস্তাব করে হজ প্যাকেজ অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে এ কথা জানা গেছে। ২০১৯ সালের হজ টিকিটের মূল্য ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
২০১৯ সালে বিমান ১ লাখ ২৮ হাজার টাকায় হজযাত্রী পরিবহন করলেও এবার ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার কমে যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
গত বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন প্যাকেজ (প্যাকেজ-৩) মূল্য কমলেও প্যাকেজ-১ ও প্যাকেজ-২ এর কয়েক হাজার টাকা করে বাড়ছে। মক্কার পায়ে হাঁটা দূরত্বে প্যাকেজ-৩ এর হজযাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানিয়েছে, প্যাকেজ-৩ এর হজযাত্রীদের আগে মদিনায় নিয়ে যাওয়া হবে। তারা সৌদি আরব থাকবেন এক মাস। প্লেন ভাড়া ও আবাসনসহ হজের অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এই প্যাকেজে খরচ পড়বে সোয়া ৩ লাখ টাকা।
গত বছর পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থায় বাংলাদেশি হজযাত্রীদের আবাসন প্যাকেজ ‘এ’ এবং প্যাকেজ ‘বি’র আওতায় মক্কার মিসফালাহ ও ইবরাহিম খলিল রোডে থাকলেও এবারই প্রথমবারের মতো আড়াই হাজার মিটার দূরে ‘দুর কুদাই’ এলাকায় হোটেল বা বাসা ভাড়া করে হজযাত্রীদের রাখা হবে। এ এলাকায় ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার হজযাত্রীরা থাকেন।
এদিকে হজযাত্রীদের প্লেন ভাড়া এক লাখ টাকার নিচে কমিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। হজের প্লেন ভাড়া নির্ধারণে ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং (হাব) নেতারা প্লেন ভাড়া বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে হাব নেতারা সভা ওয়াকআউট করেন। পরে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর দাবিতে সংগঠনের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ২৩ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে করে প্লেন ভাড়া কমানোর দাবি করেন এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ২০২০ সালে কোনোভাবেই বিমান ভাড়া বাড়ানো যুক্তিযুক্ত হবে না। হাব সভাপতি বলেন, সরকার হজ প্যাকেজের প্লেন ভাড়া নির্ধারণ করে ডেডিকেটেড ফ্লাইটের জন্য। কিন্তু এয়ারলাইন্সগুলো একই ভাড়ায় রেগুলার ফ্লাইটেও হজযাত্রী নেয়। বছরের অন্য সময়ে সৌদি আরবের ভাড়া ৪৪ হাজার টাকা থেকে ৫৭ হাজার টাকার মধ্যে। আর আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে ৮৮ হাজার থেকে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ফলে হজের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি প্লেন ভাড়া হতে পারে না।
হাবের যুক্তি হলো, চলতি বছর বাংলাদেশ ও সৌদি আরবে হজের কোনো ধরনের চার্জ বাড়েনি, জ্বালানির মূল্য উল্টো কমেছে। ফলে এ বছর প্লেন ভাড়া বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজযাত্রীদের প্লেন ভাড়া যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত।
হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার দাবিতে বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের অতি সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন ও মতিঝিলস্থ বিমান অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসব কর্মসূচিতে প্লেন ভাড়া এক লাখ টাকার নিচে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি হজ টিকিটের প্রস্তাবিত ভাড়াকে সম্পূর্ণ বেআইনি ও অযৌক্তিক এবং হজযাত্রীদের ওপর জুলুম হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সাধারণ হজযাত্রী ও বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকরাও হজ টিকিটের মূল্য বৃদ্ধিতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক হজ এজেন্সির মালিক বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, এবার সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু খাতে খরচ বাড়িয়েছে। সেখানে আবার প্লেন ভাড়া বাড়ানো হলে মানুষের হজপালন কষ্ট হয়ে যাবে।