পাসপোর্ট ও প্রচারের অভাবে হজ নিবন্ধনে সাড়া কম
সরকারি-বেসরকারি হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। কিন্তু হজযাত্রীদের পাসপোর্ট না থাকায় প্রস্তুতি থাকলেও অনেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারছেন না। আবার প্যাকেজ ঘোষণায় বিলম্বের কারণে কেউ কেউ টাকা জোগাড় করে শেষ করতে পারেননি।
নানা কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারছেন না। ১ মার্চ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনার, ২ মার্চ থেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এই চূড়ান্ত নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ মার্চ।
হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বিমান ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকাসহ সর্বনিম্ন ১ লাখ ৫২ হাজার ১৯০ টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনকালে পাসপোর্ট স্ক্যান কপি আবশ্যক। কিন্তু বই সঙ্কটের কারণে অনেক হজযাত্রী পাসপোর্ট হাতে পাননি। তাই নিবন্ধন করতে পারছেন না বলে বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন হাব (হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
তিনি বলেন, ‘সবে শুরু হয়েছে চূড়ান্ত নিবন্ধন। নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। আশা করছি, এর মধ্যে হজযাত্রীরা পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।’ অন্যদিকে বেসরকারি হজ এজেন্সিসহ হজ পালনেচ্ছুদের প্রত্যাশা, হজযাত্রীদের পাসপোর্ট সহজে ও দ্রুত পাওয়ার ব্যবস্থা করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেবেন।
তবে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একাধিক হজ এজেন্সির মালিক বার্তা২৪.কমের কাছে আশঙ্কা প্রকাশে করে বলেন, বলা হচ্ছে হজযাত্রীদের পাসপোর্টের জন্য আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে বিশেষ বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কেউ সেবা পাচ্ছেন না। জেলা ও বিভাগীয় অফিসে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েও পাসপোর্ট মিলছে না। এমতাবস্থায় চূড়ান্ত নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন পাসপোর্ট না পেলে অনেকের হজযাত্রা ব্যাহত হবে। কারণ, প্রাক-নিবন্ধনকারীর তুলনায় হজের কোটা অনেক কম। সেহেতু নির্দিষ্ট ক্রমিকের মধ্যে থাকা প্রাক-নিবন্ধিতরা যথাসময়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন না করলে তারা এ বছর হজপালনে আগ্রহী নন মর্মে বিবেচনা করা হবে। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী ক্রমিকের প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তিদের নিবন্ধনের জন্য আহ্বান জানানো হবে।
বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকরা আশা করছেন, সময়মতো কোটা পূরণ হয়ে যাবে। তারা বলছেন, নিবন্ধনের শুরুতে গতি কিছুটা কম থাকে। নিবন্ধনের ঘোষণার পর হজযাত্রীদের টাকা সংগ্রহ করতে কিছুটা সময় লাগে। এরপর শেষ দিকে গতি অনেক বেড়ে যায়। আশা করছি, সময়মতো হজযাত্রীরা নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।
অন্যদিকে দেরিতে হজ প্যাকেজ ঘোষণা ও সেভাবে প্রচার না করার দরুণ অনেক হজযাত্রী এখনও টাকা জোগাড় করতে পারেননি। এটাও নিবন্ধন ধীরগতির অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনসহ দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইনে প্রচার করা দরকার। না হলে এবার হজ ব্যবস্থাপনায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ২০২০ সালের হজযাত্রীদের নিবন্ধন সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণায় প্রাক-নিবন্ধনকারীদের মধ্য থেকে সরকারিভাবে নিবন্ধনকারী সকলেই এবং কোটাপূরণ সাপেক্ষে ৬ লাখ ১৮ হাজার ২৫৯ হাজার ক্রমিক নম্বরের মধ্যে বেসরকারি নিবন্ধনকারীদের চূড়ান্ত নিবন্ধনে অংশ নিচ্ছেন।
এবার সরকারিভাবে হজপালনে প্যাকেজ-১ এ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। প্রথমবারের মতো প্যাকেজ-৩ এ ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রথমবারের মতো দূরের বাড়িতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই প্যাকেজটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়া বেসরকারিভাবে ‘সাধারণ’ প্যাকেজের মাধ্যমে এবার হজ পালনে ব্যয় হবে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা ও ‘ইকোনোমি’প্যাকেজের মাধ্যমে ব্যয় হবে ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্যকোনো প্যাকেজ সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে হজ এজেন্সিগুলো ঘোষণা করবে। চূড়ান্ত নিবন্ধনকারী হজযাত্রীদের ৩০ মার্চের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের পুরো টাকা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
হজ প্যাকেজে ব্যয়ের খাতগুলো হলো- বিমান ভাড়া এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা, সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া (প্যাকেজভেদে তারতম্য) ও অন্যান্য খরচ এক লাখ ৬১ হাজার ৮২১ টাকা, সৌদি আরবে প্রদেয় বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও পরিবহন, বাস সার্ভিস বাবদ, জমজম পানি, মিনা-আরাফার ট্রেন ভাড়া, মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফার সার্ভিস চার্জ, জেদ্দা বিমানবন্দরে আপ্যায়ন, লাগেজ পরিবহন, সৌদি ভিসা ফি, ইন্স্যুরেন্স ফি, স্থানীয় সার্ভিস চার্জ (আইডি কার্ড, লাগেজ ট্যাগ প্রভৃতি), আপদকালীন ফান্ড, প্রশিক্ষণ ফি, খাওয়া খরচ ও গাইড বাবদ খরচ। প্যাকেজ মূল্যের পাশাপাশি প্রত্যেক হজযাত্রীকে কোরবানির জন্য ৫২৫ সৌদি রিয়ালের সমপরিমাণ ১২ হাজার ৭৫ টাকা সঙ্গে নিতে হবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ জুলাই (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার জন হজে যাবেন।