হজযাত্রীর টাকা হজের কাজ ছাড়া ব্যয় না করার নির্দেশ
করোনাভাইরাসের কারণে সৌদি সরকার ২৭ ফেব্রুয়ারি উমরা ও ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। কবে উমরা ভিসা চালু হবে, এটা বলা যাচ্ছে না। ফলে বেসরকারি ট্র্যাভেল এজেন্সি ও হজ এজেন্সির মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের এখন মাথায় হাত।
সাধারণত রমজানসহ এর আগের দুই মাস মানুষ উমরা করতে যান বেশি। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কে উমরা বন্ধের ঘোষণা আসার পর বদলে গেছে চিত্র। উমরা বন্ধ হওয়ায় শুধু টিকিটের টাকা নয়, উমরার ফি হিসেবে জনপ্রতি যে অফেরতযোগ্য টাকা সৌদি দূতাবাসে জমা দেওয়া হয়েছে সে টাকাও কাস্টমারকে ফেরত দিতে হচ্ছে এজেন্সি কর্তৃপক্ষের। টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়ায় লাভের টাকাও হাতে থাকছে না। ফলে অফিস ভাড়া, কর্মচারিদের বেতনসহ অফিস খরচ হিসেবে যা ব্যয় হচ্ছে- তার পুরোটাই খরচ করতে হচ্ছে পকেট থেকে।
এই ব্যবসায়িক মন্দা ও আগামী হজ নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝে শুরু হয়েছে ২০২০ সালের হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন। অর্থাভাবে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য সংগৃহীত টাকা যেন বেসরকারি হজ এজেন্সি কর্তৃপক্ষ অন্যকোনো খাতে খরচ না করেন- এটা নিয়ে চিন্তিত ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। এ কারণে চলতি বছর হজে যাওয়ার জন্য হজযাত্রীদের দেওয়া অর্থ বেসরকারি এজেন্সিগুলো হজের কাজ ছাড়া অন্য কোনোভাবে ব্যয় করতে পারবে না মর্মে অফিস আদেশ জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সোমবার (২৩ মার্চ) জারি করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় হজযাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া বিমান ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ গ্রহণ করা অর্থ বিমানের টিকিট ক্রয়ের জন্য এয়ারলাইন্স বরাবর পে-অর্ডার এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব মাধ্যমে (আইবিএএন) সৌদি আরবে প্রেরণ ব্যতীত স্থানান্তর বা উত্তোলন করা যাবে না।
চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে বেসরকারি এজেন্সিগুলো হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু করে। বিষয়টি উল্লেখ করে আদেশে বলা হয়, নিবন্ধনের সময় হজযাত্রী কর্তৃক জমার্কত অর্থ কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। ২০২০ সালের হজে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি এজেন্সিকে শুধুমাত্র একটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী এজেন্সিকে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যাংকের হজযাত্রী নিবন্ধন হিসাব নম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে।
এর আগে হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ১৯ মার্চ রাতে দেওয়া এক চিঠিতে হজযাত্রীদের নিবন্ধনের টাকা সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া বা অন্য কোনো খাতে ব্যয় না করার অনুরোধ জানায়।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের কারণে আসন্ন হজের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা থাকায় হজের টাকা যাতে এজেন্সিগুলো না ব্যয় করে তার জন্য হাব ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হলো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একদফায় ১০দিন সময় বাড়ানোর পরও হজযাত্রীদের নিবন্ধন হয়েছে কোটার মাত্র ২০ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের হজযাত্রী নিবন্ধন কাঙ্খিত সংখ্যায় হচ্ছে না। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব হজযাত্রীদের নিবন্ধন করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন এবং হজযাত্রীদের কোনো প্রকার আর্থিক ক্ষতি না হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
সোমবার পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মোট নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ২৮ হাজার ১৫ জন। এ বছর বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৯৮ জন। প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের প্রথম ক্রম থেকে দেওয়া নির্ধারিত হজযাত্রীর মূল নিবন্ধনের বর্ধিত সময় শেষ হবে বুধবার।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ জুলাই এ বছরের হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।