দুই লক্ষাধিক কওমি শিক্ষকের কথা ভাববার কেউ নেই!



রশীদ জামীল, অতিথি লেখক
কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ায় শোকরানা মাহফিল, ছবি: সংগৃহীত

কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ায় শোকরানা মাহফিল, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তিনি একটি দাওরায়ে হাদিস মাদরাসার হাদিসের উস্তাদ। সহিহ হাদিসের কিতাব মুসলিম শরিফ পড়ান। প্রতি বৃহস্পতিবার জোহরের পরে বাড়ি যান। শনিবার সকাল ১০টার আগে আবার ফিরে আসেন। এটা কোনো গল্প নয়, নিজের দেখা একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আর বলে রাখি, তিনি আমার উস্তাদ ছিলেন, কিন্তু আমি সেই মাদরাসার ছাত্র ছিলাম না।

এক বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর তার রুমে গিয়ে দেখলাম বাম হাতের কনুইয়ের ভেতরের অংশ চোখের ওপর রেখে লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। ভাবলাম, শরীর খারাপ হলো কি না! বললাম, হুজুর! শরীর খারাপ?
তিনি চোখের ওপর থেকে হাতটা সরালেন। বললেন, না।
বললাম, তাহলে বাড়ি যাবেন না? আজ তো বৃহস্পতিবার।
তিনি বললেন, মনে হয় আজ যাওয়া হবে না।

কিন্তু কেন?
বললেন, আজ মাসের ১১ তারিখ। বেতন দেওয়ার কথা ছিল। একটু আগে হিসাবরক্ষক জানিয়েছেন আজ বেতন হবে না। অথচ আমি জানি ফান্ডে টাকা আছে, অন্যদের দিয়েছেও। শুধু আমাকে দেয়নি। জেদ মেটাচ্ছে আমার সঙ্গে। সেদিন তার সঙ্গে একটু তর্ক হয়েছিল আমার। ব্যাটা আমাকে প্রতি সপ্তাহে একদিন বলে চিল্লায় যেতে বলে। আমি তখন, ‘দেখি, নিয়ত আছে’ ইত্যাদি বলে পাশ কাটাই। কিন্তু একই কথা বারবার বলতে থাকলে কার মেজাজ ঠিক থাকে বলো? সেদিন যখন বলল, ‘আপনাকে কতদিন বললাম চিল্লায় যেতে। আমরা তাবলিগে আলেম পাচ্ছি না। আপনারা আলেমরা সময় দিতে চান না। তখন আমি বললাম, কিছুদিন থেকে আমিও তাই ভাবছি। কত টাকা হলে একটা চিল্লা দিয়ে আসা যাবে? সে বলল, টাকা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। টাকা আমি দেব, আর আপনার বেতনও ঠিক থাকবে। আমি বললাম, তাহলে তো আরও ভালো। এবার শুধু একটা কাজ বাকি। এই কাজটিও যদি করে ফেলেন, তাহলে আর কোনো চিন্তাই থাকল না।
তিনি বললেন, কী সেটা?
আমি বললাম, এই চল্লিশ দিন আমার মুসলিম শরিফটা আপনাকে পড়াতে হবে।
তিনি বললেন, এটা কী বললেন?
ঠিক তখনই মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে গেল। বললাম, ‘এই মিয়া! তাবলিগের কী বুঝেন আপনি? আমাকে হাদিসের দরস ফেলে চিল্লায় চলে যেতে বলেন, আপনার মতো মানুষের এক চিল্লা থেকে যে আমার ৪৫ মিনিটের হাদিসের দরস বড় তাবলিগের কাজ- এটা কি আপনার মাথায় ঢুকে না?

এর পর থেকে সে আমার ওপর ফুলে লাউ হয়ে আছে। আজ সবার বেতন দিয়েছে, শুধু আমারটা দেয় নাই। এদিকে আবার...

একটু থামলেন তিনি। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলছেন না।
বললাম, এদিকে আবার কী? আরও কোনো সমস্যা?
বললেন, না, কিছু না।
বললাম, ছাত্র তো সন্তানের মতো। সন্তানের কাছে বাবাদের কিছু লুকাতে হয় না, কী হয়েছে বলেন?
শোয়া থেকে উঠে বসলেন তিনি। একটু বিব্রত, লজ্জা এবং কষ্ট মেশানো সুরে বললেন, ‘সকালে তোমার চাচী ফোন করে বলেছে চাল শেষ হয়ে গেছে। রাতের খাবার হবে, সকাল থেকে চাল লাগবে...
কথাগুলো তিনি বলছিলেন নিচের দিকে তাকিয়ে। চোখ দু’টো ছলছল করছিল। কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমরা ছাত্র মানুষ, কীইবা করার থাকে? তবে হুজুর সেদিন বাড়ি যেতে পেরেছিলেন।

১৯৯৪-৯৫ সালে আমি আমার নিজের দেখা একটি ঘটনা শেয়ার করলাম। ঘুরে ফিরে অন্যভাবে ভিন্ন কারণে এমন অবস্থার মুখোমুখি আরও অনেক জায়গায় আরও অনেককেই হতে হয়। কেউ মুখ ফুটে বলেন না। বলেন না বলে আমরাও তাদের নিয়ে ভাবি না। দিনরাত পড়ে থাকেন কিতাব আর ছাত্র নিয়ে। আমাদের কি উচিত ছিল না তাদের কথা ভাবা? অন্তত তাদেরও যে একটা ফ্যামিলি আছে, তাদের ঘরেও যে ছোট ছোট বাচ্চা আছে, কথাটি মাথায় রাখা?

আমাদের উস্তাদরা ঠিকমতো বেতন পান না কয়েক কারণে। কিছু কারণ আবার খুবই অকারণ। এই যেমন এখানে একটা অকারণের কথা বলা হয়েছে। কিছু কিছু মাদরাসা আর্থিক সংকটের কারণে তার উস্তাদদের বেতন দিতে পারে না। এটা কিছু সময়ের জন্য মানা গেলেও যে ব্যাপারটি কোনোভাবেই মানা যায় না- সেটি হলো, ফান্ডে পর্যাপ্ত টাকা থাকার পরও উস্তাদদের বেতন না দেওয়া। উপরন্তু যদি দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান প্রধান আয়েশি জীবন-যাপন ঠিকই করে যাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষকদের বেতনের বেলায় অভাব আর অভাব।

এই যে এখন সারাবিশ্বে একটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে, সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনিতেই মাদরাসাগুলো শাবানের ১৫ তারিখের পর বন্ধ ঘোষণা করা হতো। কিন্তু এবার করোনার কারণে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতির কারণে অনেকটা তড়িঘড়ি করে মাদরাসাগুলো বন্ধ দিতে হয়েছে। পরে আবার বন্ধের মেয়াদ বেড়েছে। আপাতত রমজানের আগে আর খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখন কী হবে?

আমাদের মাদরাসাগুলোর একাডেমিক বছর শুরু হয় শাওয়াল থেকে, শেষ হয় শাবান মাসে। তারপর রমজানের জন্য একমাস বন্ধ হয়ভ এই সময়ে পুরো বছরের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার একটা ব্যাপার থাকে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বেতন পরিশোধ করে দেয়। যারা পারে না, তারা কিছু দেয় কিছু বাকি থাকে। এখন যে দুইমাস আগে মাদরাসা বন্ধ হয়ে গেল, এই অবস্থায় বাংলাদেশের দুই লক্ষাধিক কওমি উস্তাদের কী হবে? যে প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাববার দরকার ছিল, এগুলো নিয়ে কেউ ভাবছেন বলে মনে হচ্ছে না। যেমন-

১. তারা কি রজব এবং শাবান মাসের বেতন পাবেন?
২. যাদের কয়েক মাসের বেতন বাকি, তাদের কী অবস্থা?
৩. এ বিষয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কি কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে?
৪. মাদরাসাগুলোরও কি সেই সামর্থ্য আছে? যদি না থাকে, তাহলে তাদের কী করা উচিত?
৫. এ ব্যাপারে আমাদের বোর্ডগুলোর কি কোনো মাথাব্যথা আছে, কিংবা কোনো দিক-নির্দেশনা?
৬. এমন ঘোরতর দুর্দিনে এই দুই লক্ষাধিক উস্তাদ যদি তাদের বেতন না পান, তাহলে তাদের পরিবার চলবে কী দিয়ে?

সবচে বড় কথা হলো, এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাববার মতো অথরাইজড কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকা। আমাদের কওমি শিক্ষাবোর্ডগুলো ছাত্রদের কাছ থেকে ফি আদায় করা এবং বছরে একটি করে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা ছাড়া আর কোনো কাজ আছে বলে তারা মনে করেন কি না- আমরা জানি না। তাহলে সবমিলিয়ে অবস্থাটা কী দাঁড়াল?
সমাধানের পথ কী?
চলুন ভাবি, সাধ্যেরটুকু নিজেরা করি।
বাকিটা পরামর্শ দেই যথাস্থানে, যথাযথ বিনয়ের সঙ্গে।

রশীদ জামীল: কলাম লেখক ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা।

আরও পড়ুন: কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য আপৎকালীন তহবিল গঠন আবশ্যক

   

ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা কী?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত জিবরাইল (আ.) রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবার আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন, রাসুল (সা.) বললেন, ‘ঈমান হলো, তুমি ঈমান রাখবে আল্লাহর প্রতি, তার (আল্লাহর) ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলদের প্রতি এবং শেষ দিবসের (কেয়ামত) প্রতি। (এবং) তুমি ঈমান রাখবে তাককিরের ভালো-মন্দের প্রতি।’ হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। -সহিহ মুসলিম : ৮

ঈমানের স্বাদ
হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে রবরূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুলরূপে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে। -সহিহ মুসলিম : ৩৪

সুস্বাদু খাদ্যের স্বাদ সেই বুঝতে পারে যার জিহ্বায় স্বাদ আছে। রোগ-ব্যাধির কারণে নষ্ট হয়ে যায়নি। তদ্রূপ ঈমান ও যাবতীয় আমলের স্বাদও ওই খোশনসিব ব্যক্তিই অনুভব করে, যে সম্পূর্ণ সন্তুষ্টিচিত্তে ও সর্বান্তকরণে আল্লাহকে রব ও পরওয়ারদিগার এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল ও আদর্শ এবং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে।

আল্লাহতায়ালা, নবী মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের সঙ্গে যার সম্পর্ক কেবলই বংশগত ও প্রথাগত বা কেবলই চিন্তাগত ও বুদ্ধিগত পর্যায়েই নয় বরং সে আল্লাহর বন্দেগি, মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য এবং ইসলামের অনুসরণকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে গ্রহণ করে নেবে। সেই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

ঈমানের মিষ্টতা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে। আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া, কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা, আর কুফুরিতে ফিরে যাওয়াকে এমন ঘৃণা করা, যেমন সে ঘৃণা করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। -সহিহ বোখারি : ১৬

এই হাদিসের বিষয়বস্তুও আগের হাদিসের বিষয়বস্তুর প্রায় কাছাকাছি। উপস্থাপনায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসে বলা হচ্ছে, ঈমানের মিষ্টতা ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারবে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সমর্পিত থাকবে; আল্লাহ ও তার রাসুলকে জগতের সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসবে। অন্য কারও প্রতি যদি তার ভালোবাসা হয়, তা হবে সম্পূর্ণ এই ভালোবাসার অধীন। আর ইসলাম তার এতই প্রিয় যে, ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়া, কুফুরিতে লিপ্ত হওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সমতুল্য। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

;

মসজিদ নির্মাণ করবে দাউদ কিম

কোরিয়ার প্রতিটি গলি থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী দক্ষিণ কোরিয়ান ইউটিউবার দাউদ কিম মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে মসজিদের জন্য জমিও কিনেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে ওই জমি ও তার দলিলের ছবি শেয়ার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক এই নওমুসলিম। তিনি দেশটির ইঞ্চোন শহরে মসজিদটি নির্মাণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

ইনস্টাগ্রামে কিম লিখেছেন, ‘অবশেষে আপনাদের সাহায্যে আমি ইঞ্চোনে মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। খুব শিগগিরই জায়গাটিতে মসজিদ নির্মিত হবে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার এই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘ওই জমিতে মসজিদের পাশাপাশি একটি ইসলামিক পডকাস্ট স্টুডিও তৈরির ইচ্ছা আমার। সত্যি এটি একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ, এতে বহু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস- আমি এগুলো সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’

দাউদ কিম আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন যে, ‘এমন একটি দিন আসবে, যেদিন কোরিয়ার প্রতিটি গলি আজানের সুমধুর ধ্বনিতে ভরে উঠবে। এ জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কিম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। এরপর ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তিনি সারাবিশ্বে বিখ্যাত বনে যান। জনপ্রিয় এই ইউটিউবার তার নিয়মিত ব্লগে ইসলামিক বিভিন্ন কনটেন্ট, নামাজ পড়ার ভিডিওসহ নানা কিছুই পোস্ট করে থাকেন। ২০২২ সালে কিম বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ ঘুরে তিনি পবিত্র উমরা পালন করতে সৌদি আরব যান।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই গায়ক ইউটিউবিং করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান। ঘুরতে ঘুরতে তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তিউনিশিয়া যান। দেশগুলোতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাছ থেকে দেখে ও বুঝে তিনি আকৃষ্ট হন। ইসলামের জীবনবিধান দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পুরোপুরি মুসলমান হয়ে যান।

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। যা কোরিয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশ নিয়ে গঠিত। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। সিউল বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী শহরের তালিকায় থাকা একটি শহর।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলামের উপস্থিতি খুবই সামান্য। ২০০৫ সালেও দেশটির আদমশুমারিতে মুসলিমদের কোনো বিভাগের সদস্য হিসেবে ধরা হত না। বর্তমানে দেশটিতে ২ লাখ মুসলিম রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং কিছু ধর্মান্তরিত বাসিন্দা। দেশটিতে ২১টি মসজিদ, ১৩টি ইসলামিক সেন্টার ও ১৪০টির মতো নামাজের স্থান রয়েছে।

১৯৬৯ সালে কোরিয়ান সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিউল সেন্ট্রাল মসজিদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ। যা হেনামডং সিউলে অবস্থিত। মসজিদটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

;

তীব্র গরম মুমিনকে যা শিক্ষা দেয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। বস্তুত শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি সবই আল্লাহর দেওয়া। তীব্র শীত আর প্রচণ্ড গরমে রয়েছে মুমিনে জন্য শিক্ষা। জনজীবন অতিষ্ট হওয়া গরম আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আজাবের কথা। তাই তীব্র তাপদাহের সময় দয়াময় আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি।

পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে মানবতার কল্যাণ সাধনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। ফলে তীব্র গরমের সময় ইবাদত-বন্দেগি সহজ করেছে ইসলাম। হজরত আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।
এক সময় মোয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী কারিম (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মোয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবী কারিম (সা.) পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।
এরপর নবী কারিম (সা.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। -সহিহ বোখারি : ৫৩৯
বর্ণিত হাদিসের আলোকে বিধান হলো, অতীব গরমের সময় কিছুটা বিলম্ব করে জোহরের নামাজ আদায় করা সুন্নত।

গরমের সময় এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর সওয়াব অনেক। একজন মুমিন সেসব আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। ওই সব আমলের কয়েকটি হলো-

নফল রোজা
গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। গরমের কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী বুজুর্গরা বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।

পিপাসার্তকে পানি পান করানো
পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচণ্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরও উত্তম হবে। এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো।’ -সুনানে নাসাই : ৫৪৫৬
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।’
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সদকা।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৭৪৩৫

নফল নামাজ
অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস।’ -মেশকাত : ৫৯১

গরম থেকে শিক্ষা
গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নামের তীব্রতা অনুমান করে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো।’ -সহিহ বোখারি : ৫৪৫৫

গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, গরিবদের মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

বৃষ্টির জন্য নামাজ
প্রচণ্ড গরমে একপশলা বৃষ্টির জন্য মুমিনরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। শস্য ফলানোসহ পশুপাখির খাবারের জন্য যেমন বৃষ্টি দরকার, তেমনি তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট নানা জটিলতা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতেও আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে দয়াময় আল্লাহতায়ালার দরবারে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ পড়া ও দোয়া করা সুন্নত। পরিভাষায় এই নামাজের নাম ‘ইসতিসকা’ বা বৃষ্টির নামাজ।

ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় বান্দা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। প্রচণ্ড গরমের সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়। তীব্র তাপদাহের সময় মানুষের উচিৎ জাহান্নামের গরমের কথা স্মরণ করা। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে আত্মনিয়োগ করা।

একটু শান্তির জন্য দুনিয়ার জীবনে গরমের কষ্ট ও তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য যদি আমরা সম্ভবপর সব উপায় অবলম্বন করতে পারি, তাহলে আখেরাতের আজাব ও ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য আমলদার এবং সাধনাকারী হওয়া জরুরি।

;

৪০ বছর ধরে মদিনায় বিনামূল্যে চা-কফি খাওয়ানো বৃদ্ধের মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মদিনা জিয়ারতকারীদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা। গত ৪০ বছর ধরে তিনি পবিত্র হজ-উমরা পালনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে চা, কফি, রুটি ও খেজুর বিতরণ করেছেন। অনেক বাংলাদেশি হাজি তার হাতে চা-কফি পান করেছেন।

সদাহাস্য সিরিয়ান এই নাগরিক মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৯৬ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হারামাইনের খবর সরবরাহকারী ভেরিফায়েড পেইজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এই খবর জানিয়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাস্কে করে চা-কফি আনতেন তিনি। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রলি ব্যবহার করতেন, মসজিদে নববিতে যাওয়া অন্যতম পথ জায়েদিয়া এলাকায় বসতেন তিনি। সবুজ চা, লাল চাসহ নানা স্বাদের চা বানিয়ে আনতেন। থাকত চিনিযুক্ত, চিনিমুক্ত চা-কফি। এছাড়া এলাচযুক্ত চা, পুদিনা চা, বিভিন্নরকমের মশলাযুক্ত চা আনতেন।

তিনি রাস্তার পাশে বসে পথচারীদের মধ্যে চা, কফি, খেজুর, রুটি ও বিস্কুট বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন ছেলেরা। কেউ কিছু দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করতেন।

গত বছর সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আল আরাবিয়া তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিরিয়ার নাগরিক শায়খ ইসমাইল প্রায় ৪০ বছর ধরে মদিনায় বসবাস করে আসছিলেন। মদিনার কুবা এভিনিউতে একটি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করলেও নিজের সম্পদ পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন হজ ও উমরা যাত্রীদের খেদমতে।

টানা চার দশক ধরে অনন্য এই সেবার কারণে সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হন। তার মৃত্যুতে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

;