হাব সভাপতির ফাউন্ডেশন করোনায় মৃতদের দাফন করছে
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কিংবা মন্ত্রণালয় এমনকি মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে ফোন পেলেই ঝটপট প্রস্তুত হয়ে ছোটেন তারা করোনায় মৃতদের লাশ দাফনের কাজে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সেবার জন্য প্রস্তুত নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষগুলো। যে কোনো মুহূর্তে করোনায় মৃতদের দাফন কাজে সেবা দিয়ে চলেছে আল রশীদ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক দল।
দিন দিন মরণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিংবা করোনা উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী মারা গেলে মরদেহের দাফনের (সৎকার) দায়িত্ব নিতে ভয় পাচ্ছে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনরা। সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় কোথাও কোথাও বাবার মরদেহের জানাজা বা দাফনের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না ছেলে সন্তানরা। হাসপাতালে মরদেহ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। এ তালিকায় নির্দিষ্ট শ্রেণির কোনো মানুষ নেই। সম্পূর্ণ জেনে-বুঝে নিজে বাঁচতে বাবা-মা কিংবা আত্মীয়ের লাশ দাফনে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
এমনই করুণ ও স্বার্থপর সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীর মরদেহ দাফন বা সৎকারের কাজে এগিয়ে এসেছেন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
তিনি গড়ে তুলেছেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের পরিবহন ও মরদেহ দাফনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আল রশীদ ফাউন্ডেশন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত এই ফাউন্ডেশনে নিজ অর্থায়নে একটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী পরিবহনের দুটি অ্যাম্বুলেন্স কিনেছেন। গঠন করেছেন ৩০ সদস্যের একদল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ আলেম ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
জানা গেছে, গত দুদিনে ঢাকা ও কুমিল্লায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আলেম ও স্বেচ্ছাসেবক দল আটটি মরদেহ দাফন করেছেন। সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই করোনারোগী পরিবহন এবং মৃতদেহ দাফন ও সৎকারের জন্য প্রস্তুত তারা। মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ধর্মের মরদেহ হাসপাতাল থেকে শ্মশান বা সৎকারের স্থানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
হাব সভাপতি ও আল রশীদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ দাফন ও সৎকারের ক্ষেত্রে একটি রূঢ় ও অমানবিক সময় আমরা পার করছি। বাস্তবতার নিরিখে এটা খুবই কষ্টের বিষয়। আসলে এই মুহূর্তে তো নানাভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার। কিন্তু করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় পরিবারের লোকজন যেখানে মরদেহ ফেলে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমার মনে হয়েছে, এ জায়গায় কাজ করা দরকার। সে হিসেবে আমরা কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেই। বিষয়টি নিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তিনিও করোনারোগীদের পরিবহন, মরদেহ দাফন ও সৎকারে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে উৎসাহিত ও পরামর্শ দেন।
জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শেই তিনি দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ফাউন্ডেশনটি গড়ে তোলেন তার বাবার নামানুসারে।
তসলিম জানান, বর্তমানে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তাদের অপারেশনাল অফিস রয়েছে। সেখানে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রস্তুত থাকেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা মরদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রহণ করে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, জানাজা পড়ে কবর দেওয়া এবং জানাজা পরবর্তী দোয়া ইত্যাদি করে থাকেন।
এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে অদূর ভবিষ্যতে আল রশীদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি রাজধানীসহ সারাদেশে দরিদ্রদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ক্লিনিক স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ফি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, লাশ পরিবহন ও দাফনের কাজও চালু থাকবে।
আল রশীদ ফাউন্ডেশন থেকে ঢাকার ছিন্নমূল ও পথশিশুদের জন্য একটি কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান এম শাহাদাত হোসেন তসলিম।
হজ এজেন্সি, হজযাত্রী ও হজ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে সোচ্চার এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম কুমিল্লা সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মরহুম মাওলানা রশিদ আহমেদের ছেলে। মাওলানা রশিদ আহমেদ অত্যন্ত নামকরা আলেম ছিলেন। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার বড় তসলিম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষার্থে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।
সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইর্য়ক থেকে পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে গড়ে তোলেন উদ্যোক্তা হিসেবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ডাইনেস্টি ট্রাভেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসাইন তসলিম হাবের নেতৃত্বে আসেন ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল। প্রথমে মহাসচিব এখন সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
হাবের দায়িত্ব পালনকালে শাহাদাত হোসেন তসলিম হজ এজেন্সি ও হাজীদের কল্যাণে নানামুখি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ও তা বাস্তবায়ন করেছেন।
করোনাকালে মৃত্যুবরণকারী কোনো মানুষের শেষযাত্রায় আপনজনের মতো পাশে থাকার সাহস ও মানসিকতা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।