উমরা শেষে পাঁচজন না ফেরায় দুই এজেন্সিকে শোকজ

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কাবা শরিফ, মক্কা, ছবি: সংগৃহীত

কাবা শরিফ, মক্কা, ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরব গিয়ে পবিত্র উমরা পালন শেষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) চার শিক্ষার্থীসহ পাঁচজন দেশে ফিরে না আসায় বেসরকারি দুই হজ এজেন্সিকে শোকজ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

রোববার (৩১ মে) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আমিনুর রহমান এই দুই এজেন্সিকে নোটিশ প্রদান করেন।

বিজ্ঞাপন

নোটিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত পত্রের বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ৪ ছাত্রসহ পাঁচজন উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যান। তন্মধ্যে সাদমান ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নম্বর- ১১৪৪) থেকে তিনজন ও বিএমএস ট্রাভেল (উমরা লাইসেন্স নম্বর- ৬৯) এজেন্সির মাধ্যমে দুইজন সৌদি আরব গমন করেন। পবিত্র উমরা পালন শেষে তারা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেননি।

জাতীয় হজ ও উমরা নীতি-১৪৪০ হি./২০১৯ এর ২২.২.১ এবং ২০২০ সালের জন্য বৈধ প্রকাশিত এজেন্সির তালিকার শর্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এজেন্সি কর্তৃক প্রেরিত উমরাযাত্রীকে দেশে ফেরত আনা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সে হিসেবে পাঁচ উমরাযাত্রীর দেশে ফেরত না আসার বিষয়ে কেন সংশ্লিষ্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে বিস্তারিত জবাব আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে নির্দিষ্ট ই-মেইলের মাধ্যমে জানানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।

নোটিশ সাদমান ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মালিক ড. মো. হাসানুজ্জামান (২০ সাহেব আলী রোড, নতুন বাজার, ময়মনসিংহ) ও বিএমএস ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মালিক এমএ খান বেলালকে (৮৭ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, রেডক্রিসেন্ট চেম্বার, ঢাকা-১০০০) দেওয়া হয়েছে।

সাদমান ট্রাভেলসের মালিক ড. মো. হাসানুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, তারা মক্কা থেকে পালিয়ে গেছে। আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে জানিয়েছি। নোটিশের জবাব যথাসময়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

উমরা শেষে দেশে না ফেরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ৪ ছাত্র, ছবি: সংগৃহীত

বিএমএস ট্রাভেলসের এমডি এমএ বেলাল খানের বিরুদ্ধে হজে অনিয়ম ও মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে মানবপাচারকারী চক্রের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন সংস্থার ৮৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তালিকাভুক্ত করে। সেখানে এমএ বেলালের নাম রয়েছে। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উমরা পালন করতে গিয়ে নিখোঁজ বাকৃবির চার শিক্ষার্থী হলেন- কৃষি অনুষদের আল আমিন, ফাহিম হাসান খান ও শেখ মিজানুর রহমান এবং কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের আবদুল মোমেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতেন এবং তাবলিগ জামাতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

তন্মধ্যে ফাহিম ও মোমেন ঢাকার বিএসএস ট্রাভেলস এবং মিজানুর ও আল আমিন ময়মনসিংহের সাদমান ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে উমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যাত্রা করেন। এই দুইজনের সঙ্গে মো. রিয়াজুল ইসলাম (পিতা মো. মকবুল হোসেন, হরিপুর, থানা পত্নীতলা, নওগাঁ) নামে আরেকজন রয়েছেন।

ফেব্রুয়ারি মাসে ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, সৌদি আরবে পালিয়ে থাকা ‘কথিত ইমাম মাহদি’ দাবিদার ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচণায় তারা মক্কা থেকে পালিয়েছে।

এদিকে ৫ মে ঢাকার কাকরাইল থেকে ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের ১৭ অনুসারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ। তারা তাবলিগের নামে সৌদি আরব গিয়ে কথিত ইমাম মাহদির সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় একমাস আগে ‘হিজরত’ করে ঘর-বাড়ি ছেড়েছিলেন।

ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান তাবলিগের বিতর্কিত মুরব্বি মাওলানা সাদের অনুসারী। তবে তাবলিগের এই অংশের মুরব্বিদের মাঝে ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাকের ইমাম মাহদি দাবি করা নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। বিষয়টিকে তার ব্যক্তিগত বলে আখ্যা দিয়েছেন।

নোটিশ দেখতে ক্লিক করুন