হাফেজিয়া মাদরাসা চালুর বিষয়ে ইফার বিজ্ঞপ্তিতে আলেমদের ক্ষোভ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রোববার থেকে দেশের হাফেজিয়া মাদরাসাগুলো চালু হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

রোববার থেকে দেশের হাফেজিয়া মাদরাসাগুলো চালু হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

দেশের হাফেজিয়া মাদরাসাগুলো খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। বুধবার (৮ জুলাই) বিকেলে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মাদরাসা চালুর বিষয়ে প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করেছেন।

এরই মধ্যে আবশ্যিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের হাফিজিয়া মাদরাসাগুলো চালুকরণ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ গণমাধ্যমে আরেকটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (সমন্বয় বিভাগ) মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস)-এর প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাফেজিয়া মাদরাসার (হিফজখানা) কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন অধ্যাবসায়ের আবশ্যকতার কথা উল্লেখ করে এর কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮ জুলাই আবশ্যিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শুধুমাত্র হাফেজিয়া মাদরাসার কার্যক্রম রোববার (১২ জুলাই) থেকে চালু করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি তদারকি করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা শিক্ষক ও কর্মচারিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হলো।

বিজ্ঞাপন

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আলেমদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বনানী দারুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শাহেদ বলছেন, ‘দেশের কওমি মাদরাসাগুলো কোনোভাবেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে না। আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আইনেও কওমি মাদরাসা নিয়ে কোনো কর্তৃত্ব দেওয়া নেই। এমতাবস্থায় এ জাতীয় নির্দেশনা তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত।’

এর আগে (১ জুন) দেশের কওমি মাদরাসাসমূহে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুবিধার্থে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কওমি মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে অফিস খোলার অনুমতি সংক্রান্ত নোটিশ দিয়েছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আনিস মাহমুদ এটাকে কওমি মাদরাসায় কর্তৃত্ব কিংবা নজরদারি হিসেবে বলতে নারাজ। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, দেশব্যাপী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশাল জনবল রয়েছে। তারা হাফেজিয়া মাদরাসাগুলোকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে, যেন সুন্দরভাবে মাদরাসাগুলো পরিচালিত হয়। এটা এক ধরনের সহযোগিতা। এমন পরিস্থিতি আমাদের আগে মোকাবিলা করতে হয়নি। আমরা চাই, মাদরাসাগুলো সুন্দরভাবে পরিচালিত হোক; শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকুক।

এ বিষয়ে মতামত জানতে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার (কেফাক) ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে বেফাকের সহকারী মহাসচিব মাওলানা নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি দেখেছি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনেরটা দেখিনি। এর আগে অফিস খোলা নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নোটিশ জারির বিষয়ে আমরা প্রয়াত ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর কাছে আমাদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলাম। হেফজখানা নিয়ে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা বেফাকের মিটিং করে বলতে হবে। আমি একা কিছু বলতে পারবো না।

কওমি মাদরাসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর অধীন ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল, ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তরকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে ছয়টি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। সেগুলো হলো- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক), বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ, তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ ও জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ।

সংসদের পাসকৃত আইনে স্পষ্ট বলা আছে, আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ তাদের কার্যক্রম বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। কিন্তু কওমি মাদরাসা খোলা, বন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে আলেমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রাখতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করেন। এমতাবস্থায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতা বহির্ভূত বিভিন্ন নোটিশ অনেকটা অনাকাঙ্খিত। আলেমরা বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে নারাজ।