হাজিয়া সোফিয়ায় ৮৬ বছর পর আজান, আনন্দিত তুর্কির জনগণ
৮৬ বছর পর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত দেশটির বিখ্যাত জাদুঘর হাজিয়া সোফিয়ায় আজান দেওয়া হয়েছে। এর আগে ওই জাদুঘরটি মসজিদে রুপান্তর সংক্রান্ত ডিক্রিতে সই করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। সাবেক এই মসজিদকে জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না বলে সম্প্রতি রায় দিয়েছে তুর্কি আদালত। ওই রায়ের পর সেখানে আজান দেওয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, ‘অন্যান্য মসজিদের মতো তুরস্কের হাজিয়া সোফিয়ার দরজা সব তুর্কি নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আগামী শুক্রবার (২৪ জুলাই) থেকে হাজিয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে খুলে দেওয়া হবে। এই স্থাপনাটি তুরস্কের আওতাধীন। আমাদের বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তে এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো আপত্তি প্রকাশ আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে ধরা হবে।’
শুক্রবারের জুমায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তুরস্কের শীর্ষ প্রশাসনিক আদালত শুক্রবার (১০ জুলাই) ১৯৩৪ সালের সরকারের আইন বাতিল করেছেন, যে আইনে হাজিয়া সোফিয়াকে একটি জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই রায়ে ইস্তাম্বুলের এই বিশেষ স্থাপনাকে মসজিদে রূপান্তরের পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
আদালতের এই রায় ঘোষণার পরেই এরদোগান হাজিয়া সোফিয়াকে তুরস্কের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। তিনি তুর্কি জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আদালত জানিয়েছেন, হাজিয়া সোফিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদ হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। মসজিদ ছাড়া অন্য যেকোনো কিছুর জন্য এটির ব্যবহার আইনসম্মতভাবে সম্ভব নয় বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
হাজিয়া সোফিয়াকে জাদুঘর রাখার সিদ্ধান্ত বাতিলের আবেদন জানায় ইস্তাম্বুলভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা দি পারমানেন্ট ফাউন্ডেশন সার্ভিস টু হিস্টোরিক্যাল আর্টিফ্যাক্টস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। গত ২ জুলাই আদালত এ পক্ষে যুক্তি শোনেন। আবেদনে উল্লেখ ছিল, হাজিয়া সোফিয়া উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তিনি ১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল জয় করেছিলেন এবং ধর্মীয় এ স্থাপনাটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছিলেন। আদালতের রায়কে তুরস্কের বিশিষ্টজনেরা প্রশংসা করে স্বাগত জানিয়েছেন। হাজিয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তুরস্কের বিরোধী দলগুলোও।
এ দিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেড় হাজার বছরের পুরোনো হাজিয়া সোফিয়া এক সময় ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা। পরে তা পরিণত হয় মসজিদে। এরপরেই একে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। এদিকে, তুর্কি আদালতের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ।
দেড় হাজার বছর পূর্বে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান গির্জা হিসেবে হাজিয়া সোফিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। কয়েক শতাব্দী পর অটোমান শাসকরা এটিকে মসজিদে রুপান্তরিত করেন। এরপর ১৯৩৪ সালে এটি জাদুঘরে পরিণত হয়। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত। তুরস্কের ইসলামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করার দাবি জানালেও ধর্মনিরপেক্ষ লোকজন এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছেন।