সুস্থ পরিবেশ-স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পরিবেশ সংরক্ষণ জরুরি: পরিবেশমন্ত্রী



স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট, বার্তা২৪. কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪, বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৪’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিবেশমন্ত্রী

ছবি: বার্তা২৪, বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৪’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিবেশমন্ত্রী

  • Font increase
  • Font Decrease

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, সুস্থ পরিবেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পরিবেশ সংরক্ষণ জরুরি। শুধু দেশের জিডিপির হার বৃদ্ধি করে উন্নয়ন করলে পরিবেশের দিকে নজর না দিলে কিছুই স্থায়ী হবে না।

বুধবার (৩ জুলাই) পরিবেশ অধিদফতরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৪’ সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পরিবেশমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, যুবকদের পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন কাজে সংশ্লিষ্ট হতে হবে। জাতির জনকের পরিবেশ নিয়ে দূরদর্শী চিন্তা ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই বৃক্ষরোপন কর্মসূচি করেন তিনি।

এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় সংসদে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে বলেও জানান তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।

ফারহিনা আহমেদ বলেন, পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকদের নিজের জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। এককভাবে সরকারের পক্ষে পরিবেশের সমস্যা সমাধান করা কঠিন। নাগরিকেরা দায়িত্ববান হলে সবাই মিলে সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

ফারহিনা আহমেদ আরো বলেন, ২০২৩ সালে আমরা প্লাস্টিকের দূষণ রোধে এবং সচেতনতায় কাজ করেছি। এ বছর মরুময়তা রোধ, জমির উর্বরতা নষ্ট রোধ, ভূমি পুনরুদ্ধার ও ভূমি রক্ষায় কাজ করছি।

বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করেন।

মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়নে সবুজায়ন প্রকল্প



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী

ছবি: সংগৃহীত, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি পরিবেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সবুজায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাত এবং পরিবেশের উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে ‘স্মার্ট নাগরিক’ গড়তে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।

শনিবার (২৯ জুন) রাজধানীর খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিভাগীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও নবীন বরণ অনুষ্ঠান-২০২৪-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক উন্নয়নের জন্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত করে সব ক্ষেত্রে জয়ী হতে নিজেকে প্রস্তুত করবে।

এ সময় তিনি সব ধরনের অনিয়ম থেকে দূরে থেকে যথাযথভাবে পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের আহ্বান জানান তিনি

পরিবেশমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে নতুন বিভাগ খোলা, নতুন ভবন নির্মাণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সুবিধা প্রদানসহ শিক্ষার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণেরও আশ্বাস দেন।

প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইমাম জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গভর্নিং বডির সভাপতি মো. আবদুর রউফ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষকমণ্ডলি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিবেশমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে গাছের চারা রোপন করেন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ ও নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেন।

;

গাছেদের পরিচর্যায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাছ, আরো গাছ। এখন যেভাবে উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী, তাতে প্রকৃতিতে ধস নামার জন্য হাতে আর খুব বেশি সময়ও নেই বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদেরা। এই সময়ে শুধু নতুন গাছ লাগানোই নয়, পুরনো গাছেদের যত্ন এবং পরিচর্যাও সমান প্রয়োজন। পরিবেশ রক্ষার জন্য একটি ছোট্ট পদক্ষেপকেও স্বাগত জানাচ্ছে বিশ্ব। ঠিক এমনই এক সময়ে সম্প্রতি পার হয়ে যাওয়া ‘বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস’ উপলক্ষে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চালু হয়েছে গাছেদের অ্যাম্বুলেন্স সেবা!

জানা যায়, নানা সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপড়ে যায় বহু গাছ। কখনো আবার নির্মাণের কাজে বাধা তৈরির ‘অপরাধে’ নির্বিচারে কেটে ফেলা হয় তাদের। এই অ্যাম্বুলেন্স সেবায় তাদেরই তুলে নিয়ে গিয়ে নতুন করে মাটিতে লাগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ধারণাটি প্রথম মাথায় এসেছিল পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারী ডা. কে আবদুল ঘানির মাথায়। ভারতের সবুজ মানুষ, ‘গ্রিন ম্যান অব ইন্ডিয়া’ বলে পরিচিত ডা. আবদুল ঘানি ইতোমধ্যে ৫০ লাখ গাছ লাগিয়েছেন।

একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে তিনি এ প্রস্তাব রাখলে, সংস্থাটি তার চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করতে রাজি হয়।

কীভাবে কাজ করে গাছেদের অ্যাম্বুলেন্স
জানা গেছে, উপড়ে যাওয়া গাছকে নিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় লাগানোর পাশাপাশি এই অ্যাম্বুলেন্স বিভিন্ন জায়গায় বয়ে নিয়ে যায় নানান গাছের বীজও। শহরের মানুষদের মধ্যে গাছ লাগানো-সংক্রান্ত সমস্ত রকম সচেতনতা ও সাহায্য করেন তারা। কোনো গাছ মারা গেলে, তার অংশগুলো ঠিক জায়গায় পৌঁছেও দেন তারা।

এই অ্যাম্বুলেন্সেই থাকেন দক্ষ মালী ও গাছকর্মীরা। তাদের সঙ্গে থাকে বাগান করার নানান জিনিসপত্র- সার, পানি, ঝারি, খুরপি ইত্যাদি।

এই প্রকল্পে বিশেষভাবে সহায়তাকারী বেসরকারি সংস্থা ‘সাসা'-এর কর্মকর্তা সুরেশ কুমার যাদব বলেন, একইসঙ্গে যেমন পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, সেইসঙ্গে গাছের সংখ্যাও কমছে। এই অবস্থায় বড় বড় প্রাপ্তবয়স্ক গাছগুলির মৃত্যু বোধহয় আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর! সে জন্যই কোনো গাছ যাতে প্রাকৃতিক বা বিশেষ কারণে মরে না যায়, সে কারণে সেগুলিকে রক্ষা করার এই উদ্যোগ এই সময়ে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে হয়েছে আমাদের। এ জন্য যেসব যন্ত্রপাতি বা ওষুধপত্র দরকার, তা সবই আমরা রেখেছি অ্যাম্বুলেন্সে। কোথাও থেকে গাছ তুলে এনে অন্য জায়গায় লাগানোর জন্যও অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ভারতের এই 'সবুজ মানুষ' ডা. আবদুল ঘানি ইতোমধ্যে ৫০ লাখ গাছ লাগিয়ে ফেলেছেন, ছবি- সংগৃহীত

অ্যাম্বুলেন্স প্রকল্পের উদ্যোক্তা ডা. আবদুল ঘানি বলেন, কত গাছ ঝড়ে উপড়ে যায়। পড়ে পড়ে মারা যায়। সেগুলো নতুন করে আর লাগানোর ব্যবস্থা করাই হয় না। এই অ্যাম্বুলেন্স আর তা হতে দেবে না। হেল্পলাইনে ফোন করা মাত্রই আমরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পৌঁছে যাবো এবং বিনামূল্যে গাছটিকে সরিয়ে আনবো।

আবদুল ঘানি আরো বলেন, শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপড়ে যাওয়াই নয়, অনেক সময়েই দেখা যায়, গাছের কারণে সমস্যায় পড়ছেন পথচারী বা শহরবাসী। সেগুলি কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আমাদের জানালে আর এভাবে মারতে হবে না গাছগুলিকে। যত্ন করে তাদের সরিয়ে অন্যখানে লাগিয়ে দেবো আমরা।

;

জলবায়ু মোকাবিলা-পানি ব্যবস্থাপনায় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি: পরিবেশমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, জলবায়ু মোকাবিলা ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাস্তব প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

তিনি বলেন, পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও ক্রায়োস্ফিয়ার সংরক্ষণ বিষয়ে কথার ফুলঝুরি ও প্রতিশ্রুতি প্রদানের চেয়ে বাস্তব পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

মন্ত্রী এ চ্যালেঞ্জগুলির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে সক্ষম বৈশ্বিক সংহতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থানের আহ্বান জানান।

তাজিকিস্তানের দুশানবেতে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য পানি’ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে মঙ্গলবার (১১ জুন) কান্ট্রি স্টেটমেন্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এসব কথা বলেন।

এ অধিবেশনে বৈশ্বিক নেতা ও স্টেকহোল্ডাররা পানি, জলবায়ু এবং ক্রায়োস্ফিয়ার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, আমাদের কথা এবং প্রতিশ্রুতির চেয়ে পানি, জলবায়ু এবং ক্রায়োস্ফিয়ার বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ এবং কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য অর্জন এবং একটি স্থায়ী ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সংহতি, রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা এবং নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, আন্তর্জাতিক দশক ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য পানি’ উদ্যোগের ৩য় হাই লেভেল আন্তর্জাতিক সম্মেলন দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা এবং টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু একটি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রচেষ্টার সমন্বয় ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

তার বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী বাংলাদেশে এ বৈশ্বিক উদ্যোগগুলির প্রতি অঙ্গীকার এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগের গুরুত্বও তুলে ধরেন।

;

স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক প্রাণপ্রকৃতি!



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ তাণ্ডব চালিয়েছে দেশে। ভয়াবহ এই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে মৃতের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান না মিললেও এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে এ সংখ্যা ১০।

ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঘরবাড়ি ছাড়া অগণন। কেবল মানুষই নন, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য সম্পদ, গবাদি পশুও। এই ঘূর্ণিঝড়ে সম্পদ ও মৃত মানুষের সংখ্যা গোনা হবে কিন্তু গোনা হবে না সেই পশুপাখির সংখ্যা।

মানবিক দৃষ্টিতে মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাণের কথা বলছি ঠিক, তবে এটা সম্ভব হবে না। অবশ্য ওই পথে যাবেনও না কেউ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবপ্রাণ-সম্পদের পাশাপাশি অগণন প্রাণের ক্ষয় হয়। সেদিকে দৃষ্টিও দেওয়া হয় কম। এটাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিয়েছি আমরা।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রথম আঘাত আসে সুন্দরবনে। বাংলাদেশের ফুসফুস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরবন প্রতিবারই প্রাথমিক আঘাত সামলায় প্রকৃতির। নিজে লণ্ডভণ্ড হয়ে বাঁচিয়ে দেয় উপকূলীয় এলাকাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

এবারও 'রিমাল'কেও বুক চিতিয়ে রুখে দিয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের ক্ষতি হলেও আরো ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়েছে এ বন, ছবি-সংগৃহীত

সিডর, আইলাসহ আরো অনেক দুর্যোগের মতো এবারও ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও ৩০ ঘণ্টাব্যাপী জলমগ্ন থাকায় বিশাল ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০টি হরিণের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে, আরো কয়েকটি হরিণ। বনের মধ্যে থাকা ৮০টি পুকুরে লবণ পানি ঢোকায় মিষ্টি পানির উৎস নষ্ট হয়ে গেছে।

এখানে হয়ত বাঘ ও হরিণের সংখ্যাই আমাদের চোখে পড়বে। এর বাইরে আরো অসংখ্য প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে সুন্দরবনে। তারা গুণতিতে আসলেও আলোচনায় আসবে না।

বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানতে বন বিভাগের সদস্যরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বন ও সাগরের প্রতিকূল যে অবস্থা, তাতে এই পরিদর্শন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্ণয় সম্ভব হবে না। সময় লাগবে এর। প্রাণ ও সম্পদের এই ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় কাগজে-কলমে হলেও এই ক্ষতি কিন্তু পূরণীয় নয়।

সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করতে বন বিভাগ কাজ করবে কিন্তু উপকূলের মানুষজনের যে ক্ষয়ক্ষতি, সেটা নির্ধারণ হবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাঠপ্রশাসনের দায়িত্বশীলদের অনুমানে ভিত্তিতে। ফলে, বাস্তবতা আর কাগজের মধ্যে থেকে যাবে বিস্তর ব্যবধান। প্রাণপ্রকৃতির ক্ষতির পাশাপাশি এটাও অপূরণীয় এবং একান্তই ব্যক্তিগত অর্থাৎ যার গেছে, তারই কেবল গেছে!

সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় যা কিছু দেওয়া হবে, সেটা স্রেফ স্মারক সাহায্য হিসেবে থেকে যাবে। এধরনের সাহায্য-সহযোগিতা এমনই হয়ে থাকে। তবে মানুষকেই এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এসব ক্ষেত্রে আগেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা।

‘নার্গিস’, ‘মহাসেন’, ‘বিজলি’, ‘মোরা’, ‘রোয়ানু’, ‘মিধিলি’, ‘মোখা’, ‘আমফান’, ‘ফনি’, ‘সিত্রাং’, ‘বুলবুল’, ‘সিডর’, ‘আইলা’, ‘রিমাল’সহ দুর্যোগ মোকাবিলা করেছেন উপকূলীয় মানুষ

প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপক্ষে জীবনসংগ্রামের লড়ার যে দুরন্ত অভিজ্ঞতা আর সাহস, এখানেও পথ দেখাবে তাদের।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্কয়ী ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং কোটি মানুষ সব হারালেও সেই উপকূলের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মোকাবিলা করেছেন ‘নার্গিস’, ‘মহাসেন’, ‘বিজলি’, ‘মোরা’, ‘রোয়ানু’, ‘মিধিলি’, ‘মোখা’, ‘আমফান’, ‘ফনি’, ‘সিত্রাং’, ‘বুলবুল’, ‘সিডর’, ‘আইলা’, ‘রিমাল’সহ নানা নামের ছোটবড় নানা দুর্যোগকে।

প্রতিবারই ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ, জলোচ্ছ্বাস হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষ, প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রকৃতির এ ধারা চলতেই থাকবে। কখনো ছোট আবার কখনো বা বড় দুর্যোগ আঘাত হানবে। এটাই ভবিতব্য। এটাকে যখন খণ্ডনের সুযোগ নেই, তখনও সুযোগ আছে মোকাবিলার। মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সেটা মোকাবিলা করে আসছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সহায়তা করছে। এই সহায়তার বাইরে জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচাতে যে বেড়িবাঁধের কথা বলা হয়, সেটা কি পুরোপুরি হচ্ছে আদৌ!

বিভিন্ন মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখনো অনেক বেড়িবাঁধ অরক্ষিত। অনেক জায়গায় সরকারি বরাদ্দ থাকলেও কাজ হয় না ঠিকমতো। ‘রিমাল’ ঘূর্ণিঝড়ের খবরে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধ মেরামত করেছেন এবারও। উপকূলবাসীকে বাঁচাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজগুলো করা উচিত। এটা দেশের অন্য যেকোনো মেগা প্রকল্পের চাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং বলা যায়, সবচেয়ে জরুরি এটা! কারণ, এখানে মানুষের বেঁচে থাকা আর জীবনমরণের প্রশ্ন!

দেশের একদিকে যেমন তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’, অন্যদিকে কিছু লোক সামাজিক মাধ্যমে ব্যস্ত ‘ভিউ ব্যবসায়’। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ছবি প্রবল আবেগে ভাসিয়েছে সবাইকে। যে ছবিতে দেখা যায়, কর্দমাক্ত স্থানে এক মা তার সন্তানকে জড়িয়ে শুয়ে আছেন। ছবিটি এবারের ঘূর্ণিঝড়ের বলে দাবি করা হয়। অথচ এই ছবিটি ভুয়া। বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান ‘রিউমার স্ক্যানার’ জানিয়েছে, মা ও তার সন্তানকে আগলে রাখার এই ছবিটি সঠিক নয়। এটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

বার্তা২৪.কমকে ছবিটি যে অসত্য, তা নিশ্চিত করেছেন ‘রিউমার স্ক্যানার’-এর হেড অব অপারেশনস সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী।

'রিউমার স্ক্যানার’-এর হেড অব অপারেশনস সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, ছবিটি আর্টফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তৈরি, বাস্তবে নয়

প্রতিষ্ঠানটির অনুসন্ধানে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর তাণ্ডবে ভোলার চরফ্যাশনে কর্দমাক্ত স্থানে মা ও সন্তানের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয়। ছবিটি গত মার্চ মাস থেকেই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে, যা এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি।

যে বা যারা ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স-সহ নানান মাধ্যমে ছড়িয়েছেন নিশ্চিতভাবেই তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। সামাজিক মাধ্যমের ‘ভিউ ব্যবসার’ কারণে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলেছেন। এখানে তাদের প্রাপ্তির জায়গা হলো কিছু ‘লাইক’, ‘কমেন্ট’ ও ‘শেয়ার’।

সামাজিকমাধ্যম থেকে অর্থ উপার্জনের সুযোগ যেখানে রয়েছে, সেখানে তারা এই মানুষের আবেগ ও সমবেদনাকে পুঁজি করে নিজেরা কিছু কামাই করতে চেয়েছেন। এটা অনৈতিক চেষ্টা তাদের। মানুষ যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে লড়ছেন, সেখানে তারা মানুষের অসহায়ত্বকে উপলক্ষ করে মানবিকতার নামে অনৈতিক চর্চা করছেন।

সামাজিকমাধ্যম থেকে অর্থ উপার্জনের সুযোগ নিতে অনেকেই আবেগ ও সমবেদনাকে পুঁজি করে নিজেরা কিছু কামাই করতে চেয়েছেন, ছবি- রিউমার স্ক্যানার

রিউমার স্ক্যানার নামের প্রতিষ্ঠানটি ফ্যাক্ট চেক করায়, এখন ছবির অসঙ্গতিগুলো নিয়ে কথা বলছেন অনেকেই। দোষারোপ করছেন যারা ছবিটি প্রচার করছেন তাদের। এই প্রচারকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই হয়ত সরল বিশ্বাসে প্রবল আবেগে আলোড়িত হয়েছিলেন। দুর্যোগেও মানবিকতাকে নিয়ে ব্যবসা করার যে কূটচিন্তা যাদের মাথা থেকে এসেছে, তারা সঠিক কাজ করেননি। এটা অন্যায় হয়েছে তাদের। এই ছবি দিয়ে হয়ত বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি কারো কিন্তু এর দ্বারা মানুষের সরল বিশ্বাস, আবেগকে নিয়ে খেলা করা হয়েছে। এ বিষয়টির আইনি প্রতিবিধান থাকলে সেটা অনুসরণ করা উচিত হবে।

ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আঘাতে প্রাণপ্রকৃতি ও সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটা অপূরণীয় হলেও ক্রমে সবকিছু ফিরবে স্বাভাবিক নিয়মে, স্বভাব ছন্দে। এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ মোকাবিলা করেছে যে, প্রাণপ্রকৃতি, তাদের মধ্যে রয়েছে টিকে থাকার অফুরন্ত শক্তি। দুর্যোগ-পরবর্তী এই পর্বেও তারা বিজয়ী হবে নিশ্চিত।

কবির য়াহমদ: অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম

;