সর্তক হউন, করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ মানেই পুরোপুরি রোগ মুক্তি নয়

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • নিতীশ কুমার কুন্ডু
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরবর্তী নিউনরমাল সময়ে আমরা অনেকই করোনাকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছি না। করোনায় আক্রান্ত প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের মধ্যে মারাত্মক উপসর্গ পরিলক্ষিত ১০-১৫ শতাংশ  রোগীর শরীরে। বিশেষ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা কো-মর্বিডিটি (অর্থাৎ যারা পূর্ব থেকে কঠিন রোগে ভূগছে) রোগীদের ক্ষেত্রে উপসর্গ মারাত্মক। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তেমন কোন উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে না (অ্যাসিটোমেটিক) বা মৃদু উপসর্গ প্রকাশ পেলেও বাসায় বসে তার চিকিৎসা হচ্ছে। ফলে আমরা করোনাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোন সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখতে পাচ্ছি না। যেমনটা আমরা দেখেছিলাম এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুতেই।

বর্তমান সময়ে করোনা নিয়ে খুব বেশী আতংকিত হওয়ারও কিছু নেই। কারণ জীবন রক্ষার্থে প্রয়োজন চলমান অর্থনৈতিক চাকা। বিশেষ করে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের মানুষের এটির কোন বিকল্প পথ নেই। অন্য দিকে করোনা নিয়ে সর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এই অতি সংক্রামক ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ মানুষের জীবন বলি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আশার বিষয়, সবকিছু ঠিক থাকলে বিশ্ববাসী আর কয়েক মাসের মধ্যেই পেয়ে যাবে কার্যকর ও নিরাপদ টিকা। বাংলাদেশও তিন কোটি ডোজ করোনার টিকা পাওয়ার জন্য এরমধ্যেই চুক্তি সম্পাদন করেছে। তবে টিকা আসা মানেই আমরা পুরাপুরি নিরাপদ তা কিন্তু নয়। টিকার মাধ্যমে মানব দেহে তৈরী হওয়া অ্যান্টিবডির কার্যকাল নিয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। এটির কার্যকালের উপরই নির্ভর করছে টিকার ডোজ ও কার্যকরিতার সময়কাল। করোনাভাইরাসের টিকার কার্যকারিতা অন্যান্য ফ্লু ভাইরাসের টিকার কার্যকারিতার মত হলে সর্বাধিক এক থেকে দুই বছর এটি কার্যকর হবে। তখন ফ্লু ভাইরাসের মত নির্দিষ্ট সময় পরপর নিতে হবে এই টিকা। আবার মানব দেহে এটির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কি হবে সেটিও বিবেচনা করতে হবে।

বিভিন্ন গবেষণার তথ্য মতে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় উপমহাদেশের মানুষের শরীরে উপর করোনাভাইরাসের প্রভাব তুলনামূলক মৃদু এবং মৃত্যুর হার কম।  এটির প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও ধরে নেওয়া হয় যে করোনা ভাইরাসের স্টেইনের ভিন্নতা ও উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গ হওয়ার কারণে, আমাদের দেশের মানুষ এই ভাইরাসের সংক্রমণকে জীবন যাপনের সাধারণ অংশ হিসাবে মেনে নিয়েছে। এভাবেই দেশে অর্জিত হচ্ছে প্রাকৃতিক হার্ড ইমিউনিটি। কোভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হওয়ার পরও আমরা সচেতন নই তার চিকিৎসা ও পরবর্তী পূনর্বাসনের জন্য। এই ভাইরাসের গতি প্রকৃতি সমন্ধে আমরা এখনও অজ্ঞ। করোনাভাইরাস আক্রমণে মানুষের শরীরে কোষ গুলির মধ্য আত্মগোপনের থেকে যায় এবং সময়ের সাথে সাথে কোষ গুলি ক্ষতি করতে থাকে। এভাবে একসময় কোভিড-১৯ মানব শরীরে শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম পুরোপুরি ওলটপালট করে দেয়। এ কারণে শরীরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় এটির উপসর্গ মৃদু বা না থাকলেও পরবর্তীতে এটি শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের প্রভূত ক্ষতি সাধন করে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণের পর উপসর্গ সেরে গেলে এবং পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট আসলেই আমরা পুরোপুরি সুস্থ ভাবি।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট মানেই কিন্তু পুরোপুরি সুস্থতা নয়। কারণ এর প্রভাবে থাকে পরবর্তী কয়েক মাস। ফলে আমরা দেখতে পাই, কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ হ্রাস পাওয়ার পরও শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ যেমন হৃদপিন্ড, লিভার, কিডনি, মস্তিস্ক সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে স্থানীয় ক্ষত সৃষ্টি হয়। ফলে কয়েক মাসের মধ্যে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ, হাইপো গ্লাইসেমিয়া, শরীর ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগ। বিশেষ করে কো-মর্বিডিটি রোগীর ক্ষেত্রে তাদের পুরানো রোগ আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এবং পরবর্তীতে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

তাই করোনা চিকিৎসা সুস্থতার জন্য সময় দিন এবং ধৈর্যের সাথে কয়েক মাস সর্তকতা অবলম্বন করুন যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়। বিশেষ করে কো-মর্বিডিটি রোগীর ক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষায় রেজাল্ট নেগেটিভ আসলেও সতর্ক জীবন-যাপন করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পরপর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার গুলি পরীক্ষা করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাতে হবে।

নিতীশ কুমার কুন্ডু, সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসী বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সন্তোষ, টাঙ্গাইল-১৯০২

ই-মেইলঃ [email protected]