সাজ-পোশাকে দ্যুতি ছড়াচ্ছে ‘দেবী’

  • ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

'দেবী'ময় পোশাক ও গহনা।

'দেবী'ময় পোশাক ও গহনা।

সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া দেবী- মিসির আলী প্রথমবার কিংবা দেবী সিনেমা জ্বরে ভুগছে সকলে। সেই জ্বরের উত্তাপ ছড়িয়েছে নারীদের সাজ পোশাকেও। ব্লাউজ, কামিজ, ওড়না, আংটি, মালা কিংবা কপালের মায়াময় টিপেও দেখা মিলেছে ‘দেবী’র। ‘হুমায়ূন আহমেদ’ ও ‘মিসির আলী’ নামগুলোর সঙ্গে প্রবল ভালোবাসা, আবেগ ও স্মৃতিকাতরতাকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব হয়নি অনেকের পক্ষেই। আর তাইতো হাতে তুলে নিয়েছেন কাঠ, কাপড়, রং ও তুলি। ভালোবেসে প্রকাশ করেছেন ‘দেবী’ কে।

সিনেমাটির ‘দেবী’ শব্দটাই যেন এক অনন্য মাদকতাময় শিল্পকর্ম। সেই দেবীকে জড়িয়ে গড়ে ওঠা আরও মনোমুগ্ধকর সকল শিল্পকর্ম ও তার পেছনে কাজ করা মানুষদের অনুভূতিকে নিয়েই আজকের গল্প।

বিজ্ঞাপন
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/31/1540976866221.jpg
ছবি: ত্রিনিত্রি'র তৈরি দেবী মালা।

 

প্রথমেই কথা হয় অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ত্রিনিত্রি’র প্রতিষ্ঠাতা অন্বেষা দত্তের সঙ্গে। দেবী থিমের উপর তৈরি করেছেন দেবী মালা। কাঠের বৃত্তাকার বেইসের উপরে কাঠের তৈরি দেবী লেখা বসিয়ে এনেছেন থ্রি ডাইমেনশনাল ইফেক্ট। ছিমছাম কিন্তু নয়নাভিরাম এই মালাটি নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, ‘ছোটবেলায় পড়া প্রিয় গল্পটার চরিত্রগুলাকে পর্দায় দেখবো, এটা ভেবেই অনেক ভালো লাগছিল। জয়া আহসান খুবই প্রিয় অভিনেত্রী, ব্যক্তিত্ব। সঙ্গে দেবী ছবির অন্যান্যরাও খুব প্রিয় মুখ। দেবী মালা করে সেটার ছবি প্রথমেই দেবীর অফিশিয়াল পেইজে পাঠাই। ওরা উৎসাহ দেওয়ার পরই পেইজে দেওয়া। পেইজে দেওয়ার পর সবার কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাই। যারা মালাটি নিয়েছেন সবাই দেবী সিনেমা দেখতে গিয়েছেন মালা পরে। খুবই অনুপ্রেরণা পেয়েছি কাজটি করে। মনে হচ্ছিল আমিও দেবী টিমেরই অংশ। দেবী মালা পরে আমিও দেবীদর্শন করে এসেছি। সব মিলিয়ে অসাধারণ অনুভূতি ছিল’।

বিজ্ঞাপন
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/31/1540981401277.jpg
ছবি: সারথী আর্ট ও ক্রাফটসের তৈরি দেবী আংটি।

 

ত্রিনিত্রি যেমন দেবী মালা নিয়ে কাজ করেছে, তেমনভাবেই হাতের শোভা বাড়াতে দেবী আংটি নিয়ে কাজ করেছে ‘সারথী আর্ট এন্ড ক্রাফটস’। সারথীর পেছনে কাজ করছেন সাদাত আহমেদ, এ্যাথিনা অরোরা তীর্থ ও রাকেশ সাহা। কিশোরবেলা থেকেই তারা হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত। এ্যাথিনা অরোরা তীর্থর সঙ্গে আলাপচারিতার সময় জানালেন, হিমুকে নিয়ে এর আগে কাজ হলেও, পর্দায় মিসির আলী এই প্রথমবার আসছে। তাও আবার দেবীর বদৌলতে। যেটা নিয়ে খুব আনন্দিত ছিলেন সকলেই। সেই ভালোলাগা থেকেই দেবী থিমে আংটি ও পেন্ডেন্টের কাজ করা। তিনি আরও জানান, বর্তমানে সারথীতে দেবী থিমের শাড়ি নিয়েও কাজ চলছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/31/1540981458420.jpg
ছবি: সারথী আর্ট ও ক্রাফটসের তৈরি দেবী পেন্ডেন্ট।

 

আংটি কিংবা গলার মালার মতোই ভিন্ন আবেদন ও আমেজ থাকে টিপের মাঝেও। অবশ্যই, দেবীর জন্য ভালোবাসায় সেই আবেদনে কমতি পরেনি। ক্ষুদ্রতম এই ক্যানভাসকে বহু আগেই আপন করে নিয়েছেন সুপরিচিত অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘গীতিকা’র রুবানা করিম। বড় হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্য সকল উপন্যস পড়ে। যে কারণে তার সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসাটা অন্যরকম। তবে বিশেষ ভালোবাসা ছিল ‘দেবী’ উপন্যাসকে ঘিরে। সেই ভালোবাসা প্রকাশের চমৎকার প্রয়াস ছিল রুবানার হাতে আঁকা দেবী টিপ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/31/1540977025625.jpg
ছবি: গীতিকার তৈরি দেবী টিপ।

 

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম- গহনা কিংবা কাপড়ে দেবীকে প্রকাশ না করে, কেন টিপে দেবীকে নিয়ে আসা? উত্তরে রুবানা বলেন, ‘আমি চাইলে মালা, হাতের রিং, ব্লাউজের পিসে এই কাজটা করতে পারতাম। কিন্তু আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে টিপের উপর আঁকতে। চাইলেই বড় কোন ক্যানভাসে খুব সহজেই দেবীকে উপস্থাপন করা যায়। কিন্তু টিপ ছোট বলে উপস্থাপন করা একটু কঠিন। যেহেতু দেবীর প্রতি ভালোবাসাটা একটু বেশি তাই কষ্টসাধ্য কাজটাই বেছে নিলাম’।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/31/1540976980394.jpg
ছবি: গুটিপোকার দেবী ব্লাউজ। 

 

সাজের অনুষঙ্গ গহনা ও টিপ নিয়ে তো কথা হলো, এবার তবে কাপড়ে করা দেবীর কাজকে নিয়ে কথা বলা যাক। জবাফুল জড়ানো দেবী লেখাটার মোহে পড়েই, দেবী ব্লাউজ বানিয়ে ফেলেছেন ‘গুটিপোকা’র আফসানা সুমী। তার ইচ্ছা ছিল দেবী জামা পরে তবেই যাবেন দেবী সিনেমা দেখতে। এরপর বন্ধুর পরামর্শে জামা না বানিয়ে, বানিয়ে ফেললেন দেবী ব্লাউজ। সুতি ও লিলেন দুই ধরণের তন্তুর উপরেই কাজ করেছেন দেবী ব্লাউজ নিয়ে। সুমী জানালেন, প্রথমদিকে হ্যান্ড পেইন্টে দেবী ব্লাউজ আনা হলেও, ক্রেতাদের প্রবল আগ্রহ ও চাহিদার ভিত্তিতে বর্তমানে স্ক্রিন প্রিন্টে পাওয়া যাচ্ছে চমৎকার এই ব্লাউজ পিসটি।

এদিকে দেবীর প্রতি ভালোবাসাকে বিস্তৃত আকারে প্রকাশ করেছেন অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অন ক্লাউড নাইন এন্ড হাফ’ এর প্রতিষ্ঠাতা আফরিন আহমেদ। একাধারে ব্লাউজ, কামিজ, ওড়না ও টিপে তুলে ধরেছেন দেবীকে। নিজের প্রতিষ্ঠানটির একেবারেই ব্যতিক্রমী নামের বিষয়ে জানতে চাইলে আফরিন জানালেন, ‘On Cloud Nine আমেরিকানদের একটা বহুল প্রচলিত বাগধারা। এর অর্থ অত্যন্ত আনন্দিত। আমি আরো এক ধাপ ওপরে। নাইনের ওপর আরো অর্ধেক। খুশির ওপর মহাখুশি। মানে ON CLOUD NINE AND HALF. ক্রাফট, সৃজনশীলতা এইসব আমার জীবনের আনন্দের অন্যতম অধ্যায়। সে বাগধারা থেকেই আমার স্বামী নামটা দিয়েছেন’।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/31/1540977102884.jpg
ছবি: অন ক্লাউড নাইন এন্ড ইলেভেন এর দেবী কামিজ।

 

আমেরিকা থেকে গহনা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে গহনা বানানো শুরু করেছেন আফরিন। এরপর ব্লাউজ পিসে হাতে আঁকা শুরু করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সেখানে থেকেই সাহস করে ব্লাউজে দেবীকে নিয়ে আসা। তবে শুধু দেবী লেখাটাই তুলির আঁচড়ে প্রকাশ করেননি তিনি। ক্রেতার চাহিদা ও নিজের কল্পনাকে মিশিয়ে তৈরি করেছেন ভিন্ন এক আমেজ। নিজের কাজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত আফরিন বলেন, ‘আঁকাআঁকির পুরো ব্যাপারটা চরিত্রগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিলো। যেন তারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী আমাকে দিয়ে নিজেদের আঁকিয়ে নিচ্ছিল। আমি কেবল উপন্যাসের আড়ালের একজন। রঙ-তুলি হাতে নিয়ে চরিত্রগুলোর ফরমায়েশ মত তাদের এঁকে যাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে এমন হল, আমি ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে রঙতুলি হাতে নিই। আমার মনে হচ্ছিল, তারা আমাকে ডাকছে বাকি কাজটুকু শেষ করার জন্য। এ এমন এক অনুভূতি যা কেবল অনুভব করা যায়, বর্ণনা করা যায় না! এভাবেই হয়ে গেল দেবী কামিজ আর ওড়না। সম্পূর্ণ আমার ডিজাইনে, আমার চিন্তায়, চরিত্রগুলোর ফরমায়েশিতে’।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/31/1540977157498.jpg
ছবি: অন ক্লাউড নাইন এন্ড ইলেভেন এর দেবী টিপ ও অন্যান্য।

 

মিনিয়েচার ও অ্যাবস্ট্র্যাক্ট আর্টের ভক্ত আফরিনের জন্য টিপেও দেবীকে ফুটিয়ে তুলতে খুব একটা সময় লাগেনি। এভাবেই নিজের চারপাশের সকল কাজের মাধ্যমে দেবীকে একে একে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

ভালোবাসার বিষয়ে বড্ড আবেগপ্রবণ আমরা সকলেই। সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই ‘দেবী’ উঠে এসেছে সকলের সৃজনশীলতায়, অনন্য কাজের ধারায়। নিখুঁত মমতায় নিজ হাতে করা কাজগুলো পূর্ণতা পেয়েছে স্বকীয়তায়। শুধু কি তাই! ভালোবাসায় গড়া দেবী থিমের কাজগুলো ভালোবাসা কুড়িয়েছে ক্রেতাদের কাছ থেকেও। মমতায় সিক্ত দেবী নিজস্ব আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে তার স্বরূপ প্রকাশ করছে সকলের মাঝে, সাজ ও পোশাকে।