ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায়
মানবদেহে যখন ইনসুলিন নামের হরমোনের ঘাটতি হয় অথবা ইনসুলিন কার্যকরভাবে শরীরে ব্যবহৃত হয় না কিংবা নিষ্ক্রিয় থাকে, তখন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। সেই গ্লুকোজ পরবর্তী সময়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এ অবস্থার নামই হলো ডায়াবেটিস, যাকে বাংলায় বলা হয় ‘বহুমূত্র’ রোগ।
ডায়াবেটিসে কেউ আক্রান্ত হলে কিডনি, হার্ট, লিভার, পায়ের সমস্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ জন্য ডায়াবেটিস প্রতিরোধের বিষয়টিতে জোর দেওয়া দরকার। নগরায়ণ ও পরিবর্তিত জীবনধারণের কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জীবনযাপনের ধরন পাল্টাতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম শুধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে তা নয়, বরং সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যম্ভাবী। যারা অলস জীবন যাপন করে তারা দ্রুত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এ জন্য প্রতিদিন আধাঘণ্টা করে সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন ব্যায়াম করুন। দৈহিক শ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দিন।
অতিরিক্ত ওজন কমান: অতিরিক্ত ওজন কমালে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ওজন হলে ডায়াবেটিস শরীরে বাসা বাঁধে। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজনের একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড আছে। তাই সে অনুযায়ী ওজন বজায় রাখুন।
আঁশজাতীয় খাবার খান: খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত আঁশ বা ফাইবারজাতীয় খাবার রাখুন। এসব খাবার দেহের শর্করার শোষণক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। টমেটো, ব্রকলি, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, ফুলকপি, গমের রুটি, ওটস, সবুজ শাক, সালাদ, টকজাতীয় ফল ইত্যাদি খেতে পারেন।
সকালে নাশতা করুন: অনেকে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে এবং অনেক দেরিতে সকালের নাশতা করে। আবার অনেকে নাশতা করেই না। এই দুই অভ্যাস শরীরের জন্য বেশ খারাপ, যা ডায়াবেটিস ডেকে আনতে পারে। তাই সকালের নাশতা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে করার চেষ্টা করুন।
মানসিক চাপ কমান: স্ট্রেস বা টেনশন রক্তের শর্করার লেভেল বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মানসিক চাপে ছিলেন। এ জন্য মানসিক চাপ কমিয়ে উত্ফুল্ল জীবনযাপনের চেষ্টা করুন।
ধূমপান বন্ধ করুন: আপনি যদি ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে চান, তবে এখনই ধূমপান বন্ধ করুন। ধূমপান কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় ডায়াবেটিসের প্রবণতা।
চিকিৎসকের পরামর্শে চলুন: যথাসম্ভব শর্করা নিয়ন্ত্রণ করুন। সাধারণত চর্বি, কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার বেশি খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে মাঝেমধ্যে রক্ত পরীক্ষা করে দেখুন কোলেস্টেরল লেভেল বেশি কি না। বেশি থাকলে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ব্লাড সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখুন।