শীতকালীন দেশীয় ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
আমাদের শরীরের সুস্থতা রক্ষায় প্রয়োজন বিভিন্ন ধরণের ভিটামিনের। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ফলে এসব ভিটামিন প্রচুর পরিমানে রয়েছে। শীতে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের দেশি-বিদেশি ফলের সমাগম ঘটে। তেমনই কিছু ফলের ভিটামিন ও খনিজ লবণের উপস্থিতি ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ফুসফুস এবং ক্যাভিটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর কমলা
কমলায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনের পাশাপাশি রয়েছে আলফা ও বেটা ক্যারোটিনের মতো ফ্ল্যাভনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কমলায় উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুণ হচ্ছে ফ্ল্যাভনয়েড যা ফুসফুস এবং ক্যাভিটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর। তাই ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন ১টি কমলা খাওয়া উচিত। কমলায় আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান যা হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম এবং ক্যালশিয়ামের মতো খনিজ উপাদানগুলো শরীরে সোডিয়ামের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে দ্বিগুণ বাড়ায় জলপাই
প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাই ফলে রয়েছে- খাদ্যশক্তি ৭০ কিলো ক্যালরি, শর্করা- ৯ দশমিক ৭ কিলো ক্যালরি , ক্যালসিয়াম- ৫৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিনসি ১৩ মিলিগ্রাম ।
জলপাইয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি । জলপাই সর্দি, জ্বর এবং নানান রোগ থেকে দূরে রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে আছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘সি’ ও ‘এ’। এই ভিটামিন দুটি চোখের বিভিন্ন রোগকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। ত্বক, চুল, দাঁত, হাড়কে রাখে মজবুত। নিয়মিত জলপাই খেলে গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে পাথর, বাতের ব্যথা কিংবা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের পরিমাণ কমে যায়। জলপাইয়ে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, যা দেহের ক্যানসারের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বাড়ায় দ্বিগুণ পরিমাণে।
শরীর ও মনকে চাঙা রাখবে ছফেদা
শীতকালীন দেশগুলোতে এ ফলটি ভীষণ জনপ্রিয়। শুধু স্বাদে নয়, গুণেও অনন্য এ ফলটি। নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ছফেদা। শক্তির উৎস এ ফলটি শরীরে নবশক্তি সঞ্চারের মাধ্যমে শরীর ও মনকে চাঙা ও পুনরুজ্জীবিত করে। বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, ভিটামিন এ, সি ও ই এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, কপার ও আয়রনসহ অপরিহার্য বহু পুষ্টি উপাদান ভরপুর ফলটি।
স্নায়ুতন্ত্র, রোগপ্রতিরোধ ও হজমের জন্য সহায়ক বরই
বরই এ ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। তবে এতে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম কুলে রয়েছে ক্যালরি ৭৯ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২০ গ্রাম, আঁশ ১০ গ্রাম। দৈনিক চাহিদার ৭৭ ভাগ ভিটামিন সি, ৫ ভাগ পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া এতে অল্প পরিমাণে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, খনিজ উপাদান রয়েছে। তবে প্রচুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
স্নায়ুতন্ত্র, রোগপ্রতিরোধ ও হজমের জন্য বরই বেশ সহায়ক। বরই এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিদ্যমান, যারা টিউমারের উপর সাইটোটক্সিক প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। শুকনো বরই এর মধ্যে স্যাপোনিন, অ্যাল্কালয়েড এবং ট্রাইটারপেনয়েড উপাদান থাকে যারা রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
আমলকির গুণের শেষ নেই
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারার চেয়ে ১০ গুণ ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এছাড়া আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। এই পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ দিনে দুটো আমলকি খেলেই এসে যায়।
কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায় আমলকী অনেক উপকারী। ব্রঙ্কাইটিস ও এ্যাজমার জন্য আমলকীর জুস উপকারী। শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, পেশী মজবুত করে।
এটি হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। আমলকীর আচার বা মোরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে। শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে।
এ ছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে। এক গ্লাস দুধ বা পানির সঙ্গে আমলকি গুঁড়া ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারলে অ্যাসিডিটির সমস্যা কমবে।
লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভাল রাখে। এর এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি র্যাডিকালস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বুড়িয়ে যাওয়া ও সেল ডিজেনারেশনের অন্যতম কারণ এই ফ্রি র্যাডিকালস। সর্দি-কাশি, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বেশ ভালো কাজ করে।।