তামাক সেবনে রয়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকি
বর্তমান যুগে ক্যান্সার আশঙ্কাজনক একটি রোগে পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ক্যান্সারের ভয়াবহতার মূল কারণ হলো এর দুশ্চিকিৎস্য হওয়া। আমাদের দেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে মাথা এবং ঘাড়ে ক্যান্সার হওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
এর কারণ হিসেবে বেশে কিছু ব্যাপার চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে (শতকরা ৯০ ভাগই) দেখা যায় স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার (এসসিসি) এর পেছনে দায়ী। আবার কিছু ক্ষেত্রে থাইরয়েড এবং লালাগ্রন্থির ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও অনুরূপ দেখা যায়। যদিও উভয় ক্ষেত্রে চিকিৎসা এবং রোগ ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া ভিন্ন।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের একটি সাক্ষাৎকারে চিকিৎসক অনিল ডি’ক্রুজ জানান, ‘ক্যান্সার বৃদ্ধিতে এসসিসি বৃহৎ ভূমিকা পালন করে। এটি মস্তিষ্কের ঠিক নিচ থেকে ঘাড় পর্যন্ত বিস্তার লাভ করতে পারে। কলারবোন, মাথা, ঘাড় সহ শরীরের এইসব অংশ প্রায় ১৩-১৪টি অংশে স্বতন্ত্রভাবে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ঘটায়।
মাথা এবং ঘাড়ে ক্যান্সার বাড়ার মূল কারণ হিসেবে নেশাজাত দ্রব্য সেবনের প্রবণতাকে চিহ্নিত করেন ডাক্তার অনিল। দিন দিন বিভিন্ন ধরনের তামাক গ্রহণ করার সংখ্যা লাগামহীনভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে অল্প বয়েসিরা বুঝে বা না বুঝে এসব অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ছে। ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের কিশোর বা পথশিশুরা সিগারেট সহ বিভিন্নসহ তামাক ও নিকোটিনজাতীয় যেকোনো নেশাজাত দ্র্রব্য সেবন করার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। তাই এদের মধ্যে ঘাড় এবং মাথার বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
ক্যান্সারের ঝুঁকির ব্যাপারে অনিল বলেন, ‘তামাক সেবনকারীরা এমনিতেই মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের বিপজ্জনক সীমায় থাকেন। পাশাপাশি যারা অ্যালকোহলও সেবন করেন, তারা আরও বেশি ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন। এসব অভ্যাসে আসক্ত ব্যক্তিরা হয়তো জানেনও না, এর মাধ্যমেই শরীরে মৃত্যুর বীজ বপন করছেন নিজ হাতেই। সচেতনার অভাবেই মানুষজন এসব রোগের ঝুঁকির সম্পর্কে অবগত থেকে যাচ্ছে।
আরেকজন চিকিৎসক রাজেশ মিস্ত্রী জানান,‘তামাকের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে প্রভাবিত করে। এইচপিভি নামক ভাইরাস সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে মৌখিক স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে দেয়। এতে মুখ এবং আশেপাশের অংশে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ে।’
ডাক্তার মিস্ত্রী আরও বলেন,‘ শুধু তামাক নয়, সুপারিতে রয়েছে ওরাল সাব-মিউকাস ফাইব্রোসিস। তাই ঘন ঘন পান খাওয়ার কারণে মুখে প্রিমালিগন্যান্ট অবস্থা সৃষ্টি হয়। এতে সময়ের সাথে সাথে একসময় মুখ হা করার ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করে। মুখ খুলতে কষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যান্সার অবধি হতে পারে।’ এছাড়াও মুখের ক্যান্সারের কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো-
*মুখের ঘা সেরে না ওঠা
*মুখ বা গলা থেকে রক্তপাত
*দাঁতে ব্যথা হওয়া বা মাড়ি থেকে আলগা হয়ে যাওয়া এমনকি পড়ে যাওয়া
*ব্যথা কান অবধি ছড়িয়ে পড়া
*গিলতে কষ্ট হওয়া
* গলার টিউমার বা সিস্ট হওয়া
এইসকল সমস্যাগুলো মুখ থেকে শুরু করে গলা, ঘাড় এমনকি মাথার ক্যান্সারের কারণেও দেখা যেতে পারে। তাই এরকম সমস্যাগুলো নজরে পড়লে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।