দাঁত সুস্থ রাখতে প্রতিদিন যা যা করণীয়
সুস্থ দাঁতের সুন্দর হাসি সকলেই পছন্দ করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজই হলো ব্রাশ এবং পেস্ট নিয়ে দাঁত মাজা। দাঁত মুখগহ্বরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। খাবার চিবিয়ে খাওয়া ছাড়াও, বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকে দাঁত। তাই, প্রতিদিন ব্রাশ করা ছাড়াও দাঁতের যত্নে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ দাঁতে আটকে থাকা খাবার ভালোভাবে পরিষ্কার না হলে, যেমন দাঁতের বিভিন্ন রোগ এবং সমস্যা হতে পারে; তেমন দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের কারণে জনসম্মুখে অস্বতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে।
দাঁতের যত্ন মূলত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে থেকেই শুরু করা উচিত। সারাদিনে খাওয়া খাবার দাঁতের কোণায় আটকে থাকতে পারে। এতে রাতে সেসব খাবার বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। তাই মুখের স্বাস্থ্য এবং শ্বাস দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে প্রতিদিন রাতে দাঁতের যত্ন নিতে হবে। ভারতীয় দন্ত চিকিৎসক রবনীত কর দাঁতের যত্নের কিছু টিপস জানিয়েছেন-
১. সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে পানি দিয়ে মুখের ভেতরে পরিষ্কার করতে হবে। কুলকুচি করে রাতের বাসি ভাব দূর করতে হবে।
২. ভালো করে দাঁত ব্রাশ করার বিকল্প কিছু হতে পারে না। ব্যবহারের জন্য নরম ব্রাশ সবচেয়ে ভালো। ব্রাশ যত বেশি নরম বা সফট হবে তত বেশি ভালো। ব্রাশের ব্রিস্টল শক্ত হলে মাড়ির ক্ষতি হতে পারে। চেষ্টা করবেন ফ্লোরাইড টুথপেস্ট বা টুথ পাউডার ব্যবহার করার।
৩. ব্রাশ করার পদ্ধতির উপরও মুখের সুস্বাস্থ্য অনেকাংশ নির্ভর করে। মাড়ির একপাশ থেকে ব্রাশ করা শুরু করে ধীরে ধীরে অন্যপাশে এগোতে হবে। ব্রাশের মাঝের অংশটিকে কেন্দ্র করে ভালোভাবে একসঙ্গে ২ থেকে ৩ টি দাঁত ঘষতে থাকতে হবে। প্রতিটি পাটির দাঁতের উপরে,সামনে, পেছনেসহ চারপাশ সময় নিয়ে এভাবে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। মাড়ির থেকে আনুমানিক ৪৫ ডিগ্রি কোণে বাকিয়ে ব্রাশ করার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবেলা ব্রাশ করার সময় অন্তত ২ মিনিট করে সময় নিন।
৪. অনেক সময় ব্রাশ দাঁতের সব কোণায় পৌঁছে পরিষ্কার করতে পারে না। বিশেষ করে দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান পরিষ্কার করার জন্য ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা হয়। এর বিকল্প হিসেবে ইন্টারডেন্টাল ব্রাশও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. অনেকের একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, ওরাল স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শুধু দাঁত পরিষ্কার করাই যথেষ্ট। জিভ, মাড়ি এসব পরিষ্কার না করলেও চলে। জিভে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া বা খাবারের টুকরা থেকে যেতে পারে। ব্রাশ দিয়ে জিভের উপর আলতো করে কিছু সময় ঘষুন, যেন এসব ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। চাইলে আলাদা করে জিভের জন্য টাং স্ক্রেপারও ব্যবহার করতে পারেন।
৬. ব্রাশ করার কারণে মূলত দাঁতে আটকে থাকা খাবারের টুকরাগুলো পরিষ্কার হয়। তবে এর মাধ্যমে খাবারের কারণে মুখে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়না। তাই ব্রাশ করার পর মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। এতে জিনজিভাইটির মতো ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবজনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়।
৭. কথায় বলে, ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না।’ দাঁতে সামান্যতম পরিবর্তন দেখা দিলেও কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। মাড়ি বা দাঁতে কোনো অসুবিধা অনুভব করলে অবশ্যই মুখগহ্বরের পরিক্ষা করানো উচিত।
৮. পানিশূন্যতার কারণে শরীরের সঙ্গে মুখের মধ্যেও নানারকম রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করার সুঅভ্যাস গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়।
৯. দাঁতের জন্য যাবতীয় করণীয় কেবল ঘুম থেকে উঠেই করার নিয়ম নয়। বরং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সকালে যেমন ব্রাশ করে ফ্লস এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার করে পরিষ্কার করা উচিত, একইভাবে রাতেও পরিষ্কার করে ঘুমাতে যাওয়া প্রয়োজন। এর ফলে দাঁতসম্পর্কিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
১০. এছাড়া কিছু ছোটখাটো টিপস মেনে চলার চেষ্টা করা উচিত। যেমন: যতটা সম্ভব মিষ্টিজাতীয় বা চিনি আছে এমন খাবার কম খেতে হবে, প্রতিবেলায় খাবার খাওয়ার পর কুলকুচি করতে হবে, আঠালো বা দাঁতে লেগে থাকতে পারে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁতের চ্যেকআপ করাতে হবে।
মনে রাখবেন মুখ হলো আপনার অভ্যন্তরীণ শরীরের একমাত্র প্রবেশপথ। মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সরাসরি শরীরের ভেতরেও প্রভাব ফেলতে পারে। সর্বোপরি, হাসতে ভুলবেন না। হাসির মাধ্যমে নিজের আনন্দ প্রকাশ করুন। সুস্থ হাসিতে সুন্দর মন।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস