শীতকালীন সময়ে কমলালেবুর রস রাখুন খাদ্যাভ্যাসে
মজাদার সকল ফল শুধু গ্রীষ্মকালেই পাওয়া যায় বলে যারা আক্ষেপ করেন, শীতের সময় তাদের আক্ষেপ মেটাতে ও এ সময়ে ফলের চাহিদা পূরণে পাওয়া যায় বিভিন্ন জাতের ও স্বাদের কমলালেবু।
টক-মিষ্টি স্বাদের ও মিষ্টি ঘ্রাণের রিফ্রেশিং এই ফলটি হরেক স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য অধিক পরিচিত। স্বল্প ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় ফল ও ফলের রস খেতে পারবেন যে কেউ। প্রায় ১৭০ ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল ও ৬০ ধরনের ফ্ল্যাভনয়েডযুক্ত কমলালেবু থেকে পাওয়া যাবে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব।
পুরো শীতকালীন সময়ে সহজলভ্য থাকা এই ফলটি প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে রাখার চেষ্টা কেন করা প্রয়োজন? অনেকেই হয়তো উল্লেখ করবেন ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার প্রভাব কমাতে কমলালেবুর উপকারিতার বিষয়টি। যেটা একদম ঠিক। শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সহজেই ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দেখা দেয়। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের তথ্য জানাচ্ছে, কমলালেবুর রসে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় করে তোলে, ফলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার প্রভাব কমে যায় ও দ্রুত ভালো হয়।
কিন্তু শুধু এই একটি কারণে নিশ্চয় কমলালেবুর রস পানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না। অন্যান্য যে উপকারিতাগুলোর জন্য কমলালেবুর রস পানে জোর দেওয়া প্রয়োজন, সেটাই সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো আজকের ফিচারে।
ভালো রাখে হৃদস্বাস্থ্য
আমেরিকান হার্ট সোসাইটি থেকে প্রকাশিত গবেষণার তথ্যানুসারে সাইট্রাস ঘরানার ফল (লেবু, কমলালেবু, মাল্টা, জাম্বুরা) স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর। বিশেষত কমলালেবুতে থাকা ফ্ল্যাভনয়েড হৃদরোগ প্রতিরোধে বিশেষ উপকারী। তার উপকারিতার মাঝে রক্তনালীকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাওয়া ও শরীরে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব তৈরি করা অন্যতম।
কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমায়
কিডনিতে পাথর হওয়ার অনেকগুলো কারণের মাঝে একটি হলো- সাইট্রেট ডেফিসিয়েন্সি। সাইট্রেট হলো সাইত্রিক অ্যাসিড যা কমলালেবুর মতো সাইট্রাস ঘরানার ফলে পাওয়া যায়। কিডনিতে ছোট পাথর রয়েছে এমন রোগীদের প্রতিদিন ছোট এক কাপ পরিমাণ কমলালেবুর রস পানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। এই ফলের রস মূত্রের সাইট্রেটের মাত্রা বৃদ্ধি করে কিডনি পাথর বৃদ্ধি বাধা দান করে এবং কিডনিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে।
ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে
কমলালেবু হলো আঁশযুক্ত একটি ফল, যা বাড়তি ওজন কমাতে কার্যকর। এতে থাকা দ্রবণীয় আঁশ দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে, ফলে ঘনঘন ক্ষুধাভাব দেখা দেয় না। এ কারণে কমলালেবুর রস পান করলে অবশ্যই কমলালেবুর পাল্প সমৃদ্ধ রস পান করতে হবে।
ভালো রাখবে ত্বক
আবহাওয়ার বদলে অনেকেই অভিযোগ করেন যে, শীতকালে ত্বক খারাপ হয়ে যায়। দৈনিক কমলালেবুর রস পানে পেটের সমস্যা দূর হয়। যা ত্বককে ভালো রাখতে কাজ করে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ভেতর থেকে ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধে কাজ করে বলে ত্বক আগের চাইতে স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
প্রতিরোধ করবে ক্যানসার
কমলালেবুর রসে থাকা ভিটামিন-সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, মূলত এটাই ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। কমলালেবুর রস ডিএনএ ও কোষকে সুস্থ রাখতে কাজ করে বিধায় ক্যানসার কোষ বৃদ্ধি পায় না।
আরও বড় বিষয় হলো, কমলালেবুতে থাকা হেস্পেরিডিন (hesperidin) হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা টিউমারের বৃদ্ধির উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং তার বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি বিশেষভাবে কোলন ক্যানসারের জন্য উপকারী।