এক রাত না ঘুমালেই বাড়বে আলঝেইমারের ঝুঁকি
অপ্রয়োজনে কিংবা কাজের খাতিরে না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেওয়া হয় বহু রাত। এক রাত না ঘুমিয়ে পরের কয়েক রাত বেশি ঘুমিয়ে এক রাতের ঘুমের চাহিদা পূরণ করে নেওয়া হয়। কিন্তু এই নিয়মে সেই এক রাত না ঘুমানোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে না। না ঘুমানো সে রাতে শরীরে উপর যে প্রভাব তৈরি হয় তার দীর্ঘসূত্রিতা থেকেই দেখা দিতে পারে আলঝেইমারের মতো সমস্যাটি।
প্রাথমিক এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, এক রাত না ঘুমালে স্বাস্থ্যকর তরুণদের শরীরে ‘টাও প্রোটিন’ (Tao Protein) এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাদের চেয়ে, যারা পুরো রাত নির্বিঘ্নে ঘুমিয়েছে। গবেষণার তথ্য জানাচ্ছে, শরীরে টাও প্রোটিন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে আলঝেইমার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আলঝেইমার (Alzheimer’s disease) এর ফলে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কমতে থাকে স্মৃতিশক্তি ও স্বাভাবিকভাবে চিন্তার করার প্রবণতা। এমনকি এ অবস্থায় সহজ কোন কাজ করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেডিক্যাল জার্নাল ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব নিউরোলজি’ তে প্রকাশিত গবেষণার প্রধান ও সুইডেনের আপসালা ইউনিভার্সিটির নিউরোলজিস্ট ডা. জোনাথন ক্যাডারনেস বলেন, ‘আমাদের গবেষণামূলক পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে কোং তরুণ ও স্বাস্থ্যকর মানুষও যদি এক রাতের ঘুম বাদ দেয় তবে সময়ের সাথে সাথে তার রক্তে টাওয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা পরবর্তীতে স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলঝেইমার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে টাও এক ধরনের প্রোটিন যা ব্রেইন নার্ভ সেইলের অভ্যান্তরিন অংশকে স্ট্যাবিলাইন করতে কাজ করে। এই টাও মস্তিষ্কের নার্ভ কোষের অংশে একধরণের অস্বাভাবিকতা তৈরি করে যা কোষের স্বাভাবিক গঠন ও কার্যকারিতাকে ভেঙে ফেলে এবং যখন টাও প্রোটিনের অস্বাভাবিকতা থেকে জড়তা তৈরি হয়, তখন আলঝেইমারসহ ফ্রন্টাল লোব ডিমেনশিয়া ও শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
স্বাভাবিক ও সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে টাওসহ মস্তিষ্কের অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব ঘুমের সময় পরিষ্কার হয়ে যায়, গবেষকেরা যেটাকে তুলনা করছেন, ঘর থেকে সকল ময়লা-আবর্জনা বের করে দেওয়ার সাথে। এ কারণে রাতে না ঘুমিয়ে কাটানোর ফলে স্বাভাবিক ঘুমের সাইকেল বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং মস্তিক্সের টক্সিনগুলো বের হতে পারে না।
২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য থেকে গবেষকেরা দেখেন, যে সকল পুরুষদের রাতে ঘুমাতে দেওয়া হয়নি তাদের রক্তে টাওয়ের মাত্রা বেড়ে যায় ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। অপরদিকে যাদের ঘুমাতে দেওয়া হয়েছিল তাদের রক্তে টাওয়ের মাত্রা পাওয়া যায় মাত্র ২ শতাংশ।
যদিও এ সংক্রান্ত গবেষণা করা হয়েছে ছোট আকারে, তবে ঘুমের সাথে আলঝেইমারের সম্পর্ক ও রক্তে টাও প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধির সম্পর্কটি সম্পর্কে গবেষকেরা নিশ্চিত।