করোনাকালে মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে কী করবেন?
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসঅদৃশ্য করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর সংক্রমণে সারাবিশ্ব অজানা গন্তব্যে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের স্বীকৃত কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। একারণে দিন দিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যার সাথে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও বাড়ছে। এতে উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব।
ভয়াবহ এই মহামারিতে মানুষের জীবনই নয়, জীবিকা উপার্জনের পথসহ সবকিছুই এখন স্থবির। বদলে গেছে লাইফস্টাইলও। এক ধরণের মানসিক চাপ আর নেতিবাচক প্রভাবে বাড়ছে মনো-সামাজিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে।
এ নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক এই মহামারিতে মানসিক চাপ বোধ করা স্বাভাবিক। করোনার কারণে মানসিক চাপে বা স্ট্রেসে আপনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন বা কাজ করতে পারছেন না, এমন পরিস্থিতি যেন না হয়, এজন্য শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই মানসিক ও মনো-সামাজিক বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়া সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
রংপুর মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও রিসোর্স পারসন অধ্যাপক ডা. জ্যোতির্ময় রায় এর পরামর্শে এই করোনাকালে মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে যা যা করা দরকার, সেটাই তুলে আনা হয়েছে এই ফিচারে।
১. করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভীতি থেকে অবসাদে ভোগা, মনের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হওয়া, হতবিহ্বল হয়ে পড়া, আতঙ্কিত হওয়া বা রেগে যাওয়া স্বাভাবিক। এই সময় আপনি যাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন তাদের সাথে কথা বলুন, পরামর্শ নিন। স্বজন আর বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন।
২. আপনি যদি বাড়িতে থাকতে বাধ্য হোন, তাহলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন। সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। হালকা ব্যয়াম করুন এবং বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সাথে ভালো সময় কাটান। বাইরের বন্ধু বা স্বজনদের সাথে ই-মেইল, টেলিফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করুন।
৩. ধুমপান, তামাকজাত দ্রব্য, অ্যালকোহল বা অন্য কোনো নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ করে আপনার মনের চাপ দূর করার চেষ্টা করবেন না। নিজের ওপর যদি খুব বেশি চাপ বা স্ট্রেস বোধ করতে থাকেন, তবে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে কথা বলুন। যদি প্রয়োজন হয়, তবে কিভাবে কার কাছ থেকে বা কোথায় আপনি শারীরিক বা মানসিক সমস্যার জন্য সাহায্য গ্রহণ করবেন, তার একটি আগাম পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন।
৪. কেবলমাত্র সঠিক তথ্য সংগ্রহ করুন। বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে এমন তথ্য নিন, যেগুলো আপনাকে ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সাহায্য করবে। তথ্যের এমন একটি বিশ্বাসযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উৎস ঠিক করে রাখুন যে কেবলমাত্র সেগুলোর উপর ভরসা করবেন, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট বা সরকার হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
৫. দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা কমাতে, আপনি এবং আপনার পরিবার, প্রচার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিণতি নিয়ে বিপর্যস্তকর সংবাদ শোনা বা দেখা কমিয়ে দিন।
৬. অতীতে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনার দক্ষতাগুলোর কথা আবার মনে করুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এর সময় আপনার মানসিক চাপ কমাতে পূর্বের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করুন।