গণপ্রতিবাদ, বাস্তুচ্যুতি, সংঘাত, অস্থিরতার বছর
২০১৯ সালের বিদায়ে পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের দ্বিতীয় দশকের। পৃথিবী প্রবেশ করছে দুই হাজার সালের তৃতীয় দশকে।
কালের গর্ভে চিরবিদায় নেওয়া ২০১৯ সাল রেখে গেছে এমন কতিপয় চিহ্ন, যা এ বছরটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশিষ্ট করে রাখবে। তবে বিশ্ব ইতিহাসে ঠিক কোন বিষয় বা ঘটনাটি ২০১৯ সালের বিশেষ বৈশিষ্ট্যস্বরূপ, তা নিরূপণ করা দুরূহ। কেননা, অনেক ও অতি-স্পর্শকাতর ঘটনাবলীর মধ্য থেকে একটি ঘটনাকে তুলে আনা প্রায়-অসম্ভব।
তারপরও বিশ্বমিডিয়ার মুঘলরা 'টপ ইভেন্ট অব দ্য ইয়ার'-এর সন্ধানে ব্যস্ত। উল্লেখযোগ্য অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার পক্ষ থেকে বছরের উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনার যাচাই-বাছাই চলছে।
বাংলাদেশের অগ্রণী ও জনপ্রিয় মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল বার্তা২৪.কম নিজস্ব গবেষণা ও অনুসন্ধানে দেশের বিভিন্ন খাতের সালতামামি শুরু করেছে। ফিরে দেখছে শেষ হতে যাওয়া ২০১৯ সালকে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বে ২০১৯ সালের প্রভাব কেমন ছিল? কেমন কেটেছে সালটি আর বিশ্ব পরিস্থিতির সূচকগুলোই কেমন ছিল? এ প্রশ্নকে সামনে রেখে বার্তা২৪.কম পর্যালোচনা করেছে ২০১৯ সালের বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহ।
হংকং, ভারত, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে জন আন্দোলনের উদাহরণ সামনে রেখে কোনও কোনও বিশ্লেষক ২০১৯ সালকে চিহ্নিত করেছে 'গণপ্রতিবাদ'-এর বছর রূপে। ১৯৯০ সাল যেমন ছিল গণতন্ত্রের দাবিতে রাজপথ কাঁপানো বছর, তেমনি ২০১৯ সালেও বিশ্বের উন্নত, অনুন্নত দেশের রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছে। কেবল গণতন্ত্র নয়, মানবাধিকার ও পরিবেশের পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উত্তাল জনতা ছিল রাজপথে। ছিল মি-টু এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। মাদক ও অস্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তির বিশ্বের ডাকও দেওয়া হয়েছে রাজপথ থেকে।
রাজপথের প্রতিবাদ সাইবার স্পেস-এর সামাজিক জগতকেও আলোড়িত করেছে। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যুতে পুরো বছরই নেটিজানরা সরব ছিলেন। রাশিয়া থেকে নিকারাগুয়া, আলজেরিয়া থেকে ইরাক হয়ে নানা ইস্যুভিত্তিক প্রতিবাদ ছড়িয়ে গিয়েছিল সারা বিশ্বেই।
২০১৯ সাল ছিল বাস্তুচ্যুতির বছরও। এ বছর শরনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে এবং তাদের নানা ইস্যু আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে নাড়া দিয়েছে। মায়ানমারের রোহিঙ্গা থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ছিল আলোচনায়। সিটিজেনশিপ বা নাগরিকতার বিষয়ও কোনও কোনও দেশের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়েছে।
চলমান সংঘাত অতীতের ধারাবাহিকতায় এ বছরকেও স্পর্শ করেছে। ইয়ামেন, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাতে আকীর্ণ হয়েছে। রক্তপাত ও গৃহহীনতার দুর্ভোগ পীড়িত করেছে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীকে।
মোটের উপর ২০১৯ সাল ছিল অস্থিরতার বছর। দেশের ভেতরের নানা অস্থিরতার মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজমান ছিল। দক্ষিণ চীন সাগর, চীন-আমেরিকার বাণিজ্য লড়াই, উত্তর কোরিয়া-আমেরিকার, ইরান-আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা চলেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা সঞ্চারিত হয়েছে কাশ্মীর ইস্যুতে, ইউরোপে Brexit নিয়ে উত্তাপ চলেছে। উত্তর আমেরিকায়, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের সমস্যা, দক্ষিণ আমেরিকায় আমাজানে দাবানল, মধ্যপ্রাচ্যে ও পারস্য উপসাগরে উত্তেজনা পুরো বছরকেই ঘিরে রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন ছাড়াও তাকে নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে সারা বছর। বিশ্বের বৃহত্তর গণতন্ত্র ভারতে মানবাধিকার ও সংখ্যালঘুর অধিকার লঙ্ঘনের ইস্যু গুরুত্ব পেয়েছে। ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ ছাড়াও কিছু পশ্চিমা দেশে খ্রিস্টীয় মৌলবাদ ও মানসিক বিকলাঙ্গদের দ্বারা সন্ত্রাসী ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নিরীহ মানুষ। স্ক্যান্ডানেভিয়া ও আরও অনেক দেশে সমকাম, সমলিঙ্গের বিয়ে, ভ্রূণহত্যা ও গর্ভপাত প্রসঙ্গে আইনগত, রাজনৈতিক, সামাজিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়েছে ২০১৯ পুরোটা সময় জুড়েই।
মহাকালের অতল গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার সময় ২০১৯ সাল একদিকে টেনে এনেছে অতীতের দায়ভার, অন্যদিকে আগামী বছরের জন্য রেখে যাচ্ছে কিছু অমীমাংসিত ও গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। ২০১৯ সাল চিরবিদায় নিলেও বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এ বছরের স্মৃতিচিহ্ন থেকে যাবে নানা ঘটনায় ও ইস্যুতে।